সেবাবঞ্চিত পৌরসভা

সোমবার প্রথম আলোর ষষ্ঠ পাতায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সংস্করণে ময়মনসিংহ অঞ্চলের চারটি পৌরসভার যে চিত্র উঠে এসেছে, সেটি উদ্বেগজনক বললেও কম বলা হয়। পৌর কর্মচারীরা আন্দোলনে থাকায় সংশ্লিষ্ট পৌর এলাকার বাসিন্দারা ১৪ দিন ধরে সব ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত। এর ফলে পৌরবাসী কতটা দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে, তা অনুমান করা কঠিন নয়। বিশেষ করে পৌর এলাকার বর্জ্য অপসারণ না করায় রাস্তাঘাট, বাজার প্রভৃতি এলাকায় আবর্জনার স্তূপ জমেছে। কোনো কোনো পৌর এলাকায় পানি সরবরাহও বন্ধ।

প্রথম আলোর খবরে ত্রিশাল, মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া, ফুলপুর—এই চারটি পৌর এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কথা বলা হলেও বাকি পৌরসভার অবস্থাও তথৈবচ। ১৪ জুলাই থেকে সব পৌরসভার কর্মচারীরা ধর্মঘট পালন করে আসছেন। পৌর এলাকার সড়কগুলো একধরনের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খানাখন্দে ভরা এসব সড়ক ও আশপাশের এলাকায় বর্ষার পানি জমে থাকায় মশার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। অনেক পৌর এলাকায় পানি সরবরাহও বন্ধ আছে। এ ছাড়া নাগরিকদের দৈনন্দিন প্রয়োজন যথা জন্ম-মৃত্যুসনদ, ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার কাজও বন্ধ আছে।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, টানা দুই সপ্তাহ ধরে পৌরসভার সব ধরনের সেবা বন্ধ থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেই। পৌরসভার কর্মচারীরা ধর্মঘটের পাশাপাশি ঢাকায় অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচিও অব্যাহত রেখেছেন। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের ৮৫ শতাংশ পৌরসভায় ২ থেকে ৬৫ মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। বর্তমানে ৩২৭টি পৌরসভায় ৩৫ হাজার ১৩৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মরত আছেন। এদের ৮৫ শতাংশেরই যদি বেতন-ভাতা বকেয়া থাকে, সেটি আমাদের স্থানীয় সরকারব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা বলে মনে করি। আইনানুযায়ী, সিটি করপোরেশন ও পৌর কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ পৌরসভার সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই। পৌর কর্মচারীরা ইউনিয়ন পরিষদের কর্মীদের মতো তাঁদের বেতন-ভাতাও রাজস্ব খাত থেকে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সব সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দলকে রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়ার জন্য অনেক পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আইনি শর্তও মানা হয়নি। এসব পৌরসভার আয় হিসেবে যেসব খাত দেখানো হয়েছে, তা অনেকটা কাজির গরু কেতাবে আছে বাস্তবে নেই–এর মতো। মেয়র-কাউন্সিলররা ভোটের রাজনীতি করেন বলে করের জন্য নাগরিকদের চাপও দেন না। কিন্তু পৌরবাসীর সেবা নিশ্চিত করা পৌরসভারই দায়িত্ব। আর পৌরসভা যাঁদের মাধ্যমে এ কাজটি করে থাকে, তারা হলেন পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাঁদের অভুক্ত রেখে যে কোনো সেবা দেওয়া সম্ভব নয়, সে কথাটিও সরকারকে বুঝতে হবে। অতএব পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সমস্যাটি অবিলম্বে সমাধানে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিন।

নাগরিকেরা আর কত দুর্ভোগ পোহাবে?