কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকতে ভাঙন

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজের ধীরগতির খবরটি হতাশাজনক। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে, অথচ বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি। দেশের অন্যতম এই পর্যটনকেন্দ্রের সাগরসৈকত রক্ষা করা যে কতটা জরুরি, তা কি প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বুঝতে পারছেন না?

২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর ও পরবর্তী সময়ে কয়েক দফা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে কুয়াকাটার সাগরসৈকতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সৈকতের ভাঙনের কারণে কুয়াকাটার ঝাউবন ও নারকেলবাগানের বিস্তীর্ণ এলাকা ইতিমধ্যে সাগরগর্ভে চলে গেছে। এখন সৈকতে যেসব বাড়িঘর হোটেল ও মোটেল রয়েছে, সেগুলো ভাঙনের মারাত্মক হুমকিতে রয়েছে। সিডরের পর থেকে গত ১২ বছরে মাটি ও বালু ফেলে সৈকত রক্ষার জন্য বারবার চেষ্টা চালানো হয়। তবে তা কোনোটাই টেকসই না হওয়ায় এলাকাবাসী সৈকত রক্ষার দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করে। অবশেষে গত ২২ এপ্রিল শুরু হয় ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে সৈকতের দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, গত ৩০ জুন এই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। ৪০ শতাংশ কাজ এখনো বাকি রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

আমাদের দেশে কোনো সরকারি প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়াটাই এখন যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকল্প গ্রহণের সময় যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়, তা–ও ঠিক থাকে না। কাজ শুরুর পরপরই আবেদন পড়ে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর অথবা সংশোধনের। এভাবে সময় বাড়ানোয় বাড়ে প্রকল্পের ব্যয়ও। এ কারণে প্রতিবছর সরকারকে কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেতন ও অন্যান্য অন্যায় সুবিধাভোগের প্রবণতার কারণেই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। আর এ ধরনের বিলম্বের জন্য জবাবদিহি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার তেমন নজির না থাকায় এমনটা ঘটেই চলেছে। প্রশ্ন হচ্ছে এসবের অবসান হবে কবে?

সরকারকে অবিলম্বে প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করলে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় প্রকল্প নিয়ে নয়ছয় চলতেই থাকবে।

কুয়াকাটার সাগরসৈকতের বাঁধ নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত এক মাসের প্রবল বর্ষণ, সাগরে জোয়ারের তাণ্ডব ও বালু পরিবহনের সমস্যাকে দায়ী করেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এ বক্তব্য খতিয়ে দেখতে হবে।

আমরা চাই, কুয়াকাটার সাগরসৈকতের বাঁধ নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ হোক। এ জন্য স্থানীয় পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে সক্রিয় ও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।