মহাসড়কের কিনারে ধস

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড থেকে পদ্মার মোড় পর্যন্ত ২৮৫ মিটার অংশের দুর্দশার যে চিত্র শনিবার প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। অবিলম্বে এই অংশের সংস্কার করা না হলে সমূহ বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।

 প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, দুই বছর আগে গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কের ২৮৫ মিটার এলাকা পিচঢালাই করা হয়। কাজ শেষ হওয়ার এক মাস না যেতেই ভারী বৃষ্টির কারণে মহাসড়কের এই অংশের পাশে ফাটল দেখা দেয় এবং গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ডের পর থেকে পদ্মার মোড় পর্যন্ত চার-পাঁচটি স্থানের কিনারা ধসে যায়। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন বালুভর্তি বস্তা ফেলে সংস্কারকাজ করেন। কিন্তু স্থায়ীভাবে কাজ না করায় বৃষ্টি হলে আবার সড়ক ধসে পড়ে। দীর্ঘদিনেও এই সড়কে স্থায়ীভাবে কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক দিয়েই এত দিন যানবাহন চলেছে। কিন্তু সড়কের যে অবস্থা এখন দাঁড়িয়েছে, তাতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সড়কের কিনারা ধসে খোয়া ও পাথর বেরিয়ে পড়ছে। ভারী বৃষ্টিতে আরও ধসের আশঙ্কা রয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একটি মহাসড়ক প্রায় দুই বছর এ রকম বেহাল হয়ে রয়েছে। অথচ তা সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই কেন? এটা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ছাড়া আর কী!

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাজবাড়ী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় সেপ্টেম্বর মাস থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ১৯ কিলোমিটার অংশে পিচঢালাই করা হবে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, পিচঢালাইয়ের পর তা টেকসই হবে তো? নাকি আগের মতো এক মাস না যেতেই ধসে পড়বে?

প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কের স্বাভাবিক স্থায়িত্ব প্রত্যাশিত। কোনো সড়ক ৫ বছর, কোনোটি ১০ বছর টেকসই হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যায়, নির্মাণ না হতেই সেগুলো ভেঙেচুরে যায়। তারপর সেসব বেহাল সড়ক-মহাসড়কে আবার বিপুল অর্থ ব্যয় করে মেরামতি চালানো হয়, কিছু সময় পরেই সেগুলো আবার ভেঙেচুরে যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করার সুযোগ নেই। দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে নির্মাণকাজ পর্যন্ত চলে অবাধ দুর্নীতি। এসব দুর্নীতির সঙ্গে সড়ক ও জনপথের (সওজ) গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি রাজনৈতিক কিংবা সামাজিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।

দেশের সড়ক-মহাসড়ক টেকসই করতে হলে সবার আগে দুর্নীতি দমন করতে হবে। সে জন্য সবার আগে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। আমরা চাই ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ২৮৫ মিটার অংশসহ দেশের দুর্দশাগ্রস্ত সব সড়ক-মহাসড়কের দ্রুত টেকসই সংস্কার হোক।