২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে হেপাটাইটিস বি নির্মূলে করণীয়

.
.
>গত ২৫ জুলাই ২০১৯, প্রথম আলোর আয়োজনে এবং হেপাটোলজি সোসাইটি, ঢাকা, বাংলাদেশের সহযোগিতায় ‘২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে হেপাটাইটিস বি িনর্মূলে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশিত হলো।

সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনায় সুপারিশ

জন্মের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সব শিশুকে হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন দিতে হবে

হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত মায়ের ক্ষেত্রে প্রসবের পরপরই শিশুকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিতে হবে

নবজাতককে নির্দেশিত টিকা জন্মের সঙ্গে সঙ্গে দিলে মায়ের বুকের দুধ পান করতে পারবে

হেপাটাইটিসের টিকাকে করমুক্ত করার পাশাপাশি সরকারের ভর্তুকি দেওয়া উচিত

হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলেই চাকরির জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা যাবে না

কমিউনিটি পর্যায়ে হেপাটাইটিসের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে

সব সময় ও সর্বক্ষেত্রে ডিসপোজিবল সুচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

রক্তসহ শরীরের অন্যান্য ট্রান্সফিউশনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে

১৮৮০ সালের ভ্যাকসিন আইন যুগোপযোগী সংস্কার করা উচিত

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম

আমাদের দেশে হেপাটাইটিস বি নিয়ে আগের তুলনায় সচেতনতা বেড়েছে৷ এটি একটি বিরাট সাফল্য।

ভবিষ্যতে হেপাটাইটিস বি আরও কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, এ বিষয়ে সবার একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। এখন এ বিষয়ে সূচনা বক্তব্য দেবেন মো. গোলাম আযম।

মো. গোলাম আযম
মো. গোলাম আযম

মো. গোলাম আযম
বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃত সংক্রমণ ব্যাধি–সংক্রান্ত কিছু দিবসের মধ্যে হেপাটাইটিস দিবস অন্যতম। হেপাটাইটিস বি ও সি মূলত ভাইরাসজনিত রোগ। হেপাটাইটিসের নাম বলতে গেলে দুজন ব্যক্তির নাম চলে আসে। তাঁদের একজন অধ্যাপক বারুচ ব্লুমবার্গ এবং অন্যজন চার্লস গোর। বারুচ ব্লুমবার্গ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ও এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছিলেন। এ জন্য তিনি নোবেল পুরস্কারও পেয়েছিলেন। বারুচ ব্লুমবার্গের জন্মদিবস ২৮ জুলাইকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।

অন্যদিকে চার্লস গোর হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি ১৯৯৫ সালে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। পরবর্তী সময়ে মাত্র তিন বছরের মধ্যেই তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হন। সে সময় এই রোগ সম্পর্কে মানুষ সচেতন ছিল না। উন্নত বিশ্বের একজন নাগরিক হিসেবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষদের নিয়ে তিনি একটি ক্যাম্পেইন করার চিন্তাভাবনা করেন।

২০০৪ সালে তিনি একটি হেপাটাইটিস অ্যাওয়ারনেস ট্রাস্ট গঠন করেন এবং ওই বছরের পয়লা অক্টোবর নিজ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক হেপাটাইটিস সি সচেতনতা দিবস পালন করেন। এ কারণে তিনি তাঁর আন্দোলন চালিয়ে গেলেন এবং একসময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হলেন।

পরে ২০১০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ৬৩তম সাধারণ সভায় এটাকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাই ২০১০ সাল থেকেই এই দিবস পালিত হয়ে আসছে।

মো. আবিদ হোসেন মোল্লা
মো. আবিদ হোসেন মোল্লা

মো. আবিদ হোসেন মোল্লা
একজন মানুষ যখন হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তখন তার লিভার দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণের শিকার হয়। একপর্যায়ে লিভার সিরোসিস, এমনকি লিভার ক্যানসারেও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস ভাইরাস যত কম বয়সে একজন মানুষের শরীরে প্রবেশ করবে, সে তত বেশি ঝুঁকিতে থাকবে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে শিশুর শরীরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রবেশ করে মায়ের কাছ থেকে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রসবের সময় নবজাতক এ ভাইরাসের ট্রান্সমিশন হয়। এ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে এ রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে ইমিউনোগ্লোবিউলিন খুব অপ্রতুল। এগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় এবং তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে রয়ে যায়।

সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে, যেন এই ইমিউনোগ্লোবিউলিন সহজলভ্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটাকে আমদানির মধ্যমে করমুক্ত করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

এ রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ হলো ভ্যাকসিনেশন। জন্মের দেড় মাস পর থেকে একটি প্রক্রিয়ায় ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে প্রথম দেড় মাস শিশু অরক্ষিত থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভ্যাকসিন দিতে হবে। যত আগে ভ্যাকসিন দেবেন, শিশু তত বেশি সুরক্ষিত থাকবে।

মো. আবু সাঈদ
মো. আবু সাঈদ

মো. আবু সাঈদ
হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধের চারটি স্তর রয়েছে। এগুলো হলো প্রাইমরডিয়াল স্টেজ, প্রাইমারি প্রিভেনশন, সেকেন্ডারি প্রিভেনশন ও টারশিয়ারি প্রিভেনশন। ইমার্জেন্সি ঝুঁকি প্রতিরোধ করাই হলো মূলত প্রাইমরডিয়াল প্রিভেনশন। যেমন প্রাইমারি স্কুলে শিশুদের হেপাটাইটিস সম্পর্কে শিক্ষাদান। কারণ, এই রোগ তাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। পরিবারের লোকজনও অনেক সময় এই রোগ ও এর সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতন থাকে না। প্রাইমারি স্কুলে শিশুদের এই শিক্ষা দিতে পারলে সেই শিক্ষা পরিবার পর্যন্তও পৌঁছাবে।

শিশু বয়সে হেপাটাইটিস সংক্রমণের শিকার হলে পরবর্তীকালে তা মারাত্মক হতে পারে। তাই গর্ভবতী নারীদের প্রসবের আগে স্ক্রিনিং করার ব্যবস্থা করা দরকার। শিশুকে জন্মের পরপরই ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি শিশু স্কুলে ভর্তি করানোর সময় হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত কি না, তা নির্ণয় করা যেতে পারে।

মো. আবু সাঈদ
মো. আবু সাঈদ

মো. আবু সাঈদ
হেপাটাইটিস প্রধানত দুই রকমের হয়। একটি হলো অ্যাকিউট এবং অন্যটি ক্রনিক। অ্যাকিউট হলো স্বল্পমেয়াদি, যা ছয় মাসের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। অন্যদিকে ক্রনিক হেপাটাইটিস হলো দীর্ঘমেয়াদি, যা বছরের পর বছর, এমনকি সারা জীবন থেকে যেতে পারে। বাংলাদেশে ক্রনিক হেপাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। যাদের অ্যাকিউট হেপাটাইটিস হয়, তাদের অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন হয় না। ৯০ শতাংশ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। পক্ষান্তরে, ক্রনিক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাদের চিকিৎসার আওতায় আনা প্রয়োজন।

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দুই ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি প্রচলিত আছে। একটি হলো ইনজেকশন, আর অন্যটি খাওয়ার বড়ি। বর্তমানে ইনজেকশনের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। সপ্তাহে একটি করে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে ৪৮টি ইনজেকশন দিতে হয়, এতে রোগীরা অনেকাংশেই ভালো হয়ে যায়। ফলে যাদের ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় বা ঋণাত্মক হয়ে যায়, তারা বাকি জীবন স্বাভাবিকভাবেই কাটাতে পারেন।

প্রতি সপ্তাহে একটি করে এক বছর ইনজেকশন দিলে খরচ পড়ে পাঁচ লাখ টাকার মতো। আর খাওয়ার বড়ির ক্ষেত্রে প্রতিদিন একটি করে অনেক বছর খেতে হয়। এ ক্ষেত্রে খরচ এক বছরে ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা।

খরচ, সহজলভ্যসহ নানা দিক বিবেচনায় সাধারণত বড়িই খেতে দেওয়া হয় বা রোগীরা খেতে চান। সাধারণত দুটোরই কিছু সুবিধা–অসুবিধা রয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তি, হেপাটাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি ও কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ইনজেকশন দেওয়া যাবে না।

মো. গোলাম মোস্তফা
মো. গোলাম মোস্তফা

মো. গোলাম মোস্তফা
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস মূলত রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। অর্থাৎ অনিরাপদ রক্তসঞ্চালন, অনিরাপদ সুই ও সিরিঞ্জ ব্যবহার। এ ছাড়া অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক, অনিরাপদ আকুপাংকচার, পারলারে নাক-কান ছিদ্রকারী অনিরাপদ যন্ত্রপাতি ব্যবহার, সেলুনে অনিরাপদ শেভিং যন্ত্রপাতি ব্যবহার—এসব উপায়েও হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ছড়াতে পারে। এ ছাড়া হেপাটাইটিস বি ভাইরাস বহনকারী মায়ের কাছ থেকে নবজাতকের শরীরেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।

সুতরাং, যারা মাদকাসক্ত, সমকামী বা অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্কে আসক্ত, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস বহনকারী মায়ের নবজাতক, হাসপাতালে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সেবায় নিয়োজিত কর্মচারী, রক্ত গ্রহণকারীরা এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।

আমাদের জেনে রাখা দরকার, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস করমর্দনের মাধ্যমে কিংবা কোলাকুলির মাধ্যমে ছড়ায় না। জামাকাপড়, থালা-বাসন কিংবা চামচের মাধ্যমেও এটি ছড়ায় না।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের পরিণতি নির্ভর করে আক্রান্ত ব্যক্তি কোন বয়সে আক্রান্ত হয়, তার ওপর। যদি শিশু বয়সে কেউ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাহলে শতকরা ৫ ভাগ ক্ষেত্রেই এর প্রতিকার হয়। আবার প্রাপ্তবয়স্ক কেউ যদি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাহলে শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই এর প্রতিকার হয়। অর্থাৎ শিশুদের ক্ষেত্রে শতকরা ৯৫ ভাগের মধ্যে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে শতকরা ৫ ভাগের মধ্যেই দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ থেকে যায়। যারা দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণে আক্রান্ত, তাদের মধ্যে অনেকেই লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। িলভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার-উভয়ই প্রাণঘাতী রোগ।

মিজানুর রহমান খান
মিজানুর রহমান খান

মিজানুর রহমান খান
হেপাটাইটিসবিরোধী অভিযানে সংবাদমাধ্যমকে কাজে লাগানোর গুরুত্ব অত্যধিক, যা সারা বিশ্বেই স্বীকৃত পন্থা। বিপজ্জনক অবস্থানে থাকা বিশ্বের দুটি বৃহৎ রাষ্ট্র চীন ও ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। হেপাটাইটিসবিরোধী যুদ্ধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই অঞ্চলের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর করল অমিতাভ বচ্চনকে। কুলি ছবির শুটিংয়ে আহত হয়ে অনেকের রক্ত নেন তিনি। তাদের শুধু একজনের হেপাটাইটিস বি ছিল, তাতেই বিগ বি ধরাশায়ী।

ছয়জন চীনা গবেষকের এক সমীক্ষায় দেখি, ফ্রান্স একটি রোল মডেল। কারণ, তারা সমগ্র সংবাদমাধ্যমকে সম্পৃক্ত করে মানুষকে সচেতন
করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র যখন ১৯৯৭ সালে আইন করে টিকায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা করতে উদ্যোগী হলো, তখন ১০০ ব্যক্তির খোঁজ মিলেছিল। জাপান শত শত ব্যক্তিকে ২৫ মিলিয়ন ইয়েন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। আমাদের মতো দেশগুলো এ ধরনের টিকার বিপদ থেকে কতটা মুক্ত, সেটা প্রশ্ন।

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের জেনেট বাম্পাসের রিপোর্ট ২০০৫ সালে বিশ্বব্যাংকের ১৭ মিলিয়ন ডলারের টিকা কেনার প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখে। তারা আমাদের টিকা কেনার অদক্ষতা ও সামর্থ্যহীনতায় হতাশ হয়।

ইউরোপ হেপাটাইটিসবিরোধী যুদ্ধে মিডিয়াকে যুক্ত করেছে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই। ইউরোপে লিভার রোগী সমিতি আছে। বুলগেরিয়ার ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর ফাইটিং হেপাটাইটিস ২০০৫ সালে মিডিয়াসহ মাত্র সাত পেশার মানুষকে নিয়েই শুরু করেছিল যাত্রা। ২০০২ সালে ভারতের অনগ্রসর রাজ্য ভুবনেশ্বরে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৬৮২ জনকে সমীক্ষায় নিয়ে দেখা গেল, তাঁদের মাত্র ২০ ভাগ টিকা নিয়েছে।

বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি টিকা কভারেজের হার যথেষ্ট ভালো। কিন্তু এটা উপকূলীয় এলাকার মতো অনগ্রসর অঞ্চলকে কতটা প্রতিনিধিত্ব করে, সেটা সমীক্ষায় আনা দরকার। অসম্পূর্ণ ও অযত্নে পড়ে থাকা ১৮৮০ সালের ভ্যাকসিন আইনের যুগোপযোগী সংস্কার করা উচিত। এটি স্মল পক্স রোধে মূলত চট্টগ্রাম বন্দরকে লক্ষ্য করে রানি ভিক্টোরিয়া যুগে তৈরি হয়েছিল।

মবিন খান
মবিন খান

মবিন খান
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী সারা বিশ্বে এখনো এক-তৃতীয়াংশ মানুষ জীবনে কোনো না কোনো পর্যায়ে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস একটি সংক্রামক ব্যাধি, যা দীর্ঘমেয়াদি লিভার প্রদাহের সৃষ্টি করে। এটি দ্রুত লিভারকে নষ্ট করে দেয় এবং লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত করে অকালমৃত্যু ঘটায়।

দীর্ঘদিন ধরে প্রচার-প্রচারণা ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে। পাশাপাশি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যাকটিভ ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে।

ফলে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমেছে। ২০১৮ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রায় ৫ শতাংশ। এ হার আগে ছিল ২৭ দশমিক ২ শতাংশ।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা শিশুদের টিকাদান কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার ফলে পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের মধ্যে প্রাদুর্ভাব ৯ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে প্রায় ৩ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু হেপাটাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯০ শতাংশ জানে না যে তারা বি ভাইরাসে আক্রান্ত। সারা বিশ্বে প্রতি ১০ জনে ৯ জন ব্যক্তি জানে না তারা বি ভাইরাসের জীবাণু বহন করছে। বাংলাদেশে ২০৩০ সাল নাগাদ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস নির্মূলের টার্গেট করা হয়েছে। সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে সাফল্য পেতে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সম-উদ্যোগে কাজ করতে হবে। নিম্নোক্ত কাজের সমন্বয়ে হেপাটাইটিস বি নির্মূলের লক্ষ্যে আমাদের এগোতে হবে।

প্রথমত, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের বড় সাফল্য হলো ৯৫ শতাংশ শিশু ইপিআইয়ের আওতায় হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা পাচ্ছে। তবে হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর্মী, ড্রাগ অ্যাডিক্ট, রক্ত গ্রহণকারী ব্যক্তি এবং বি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যারা থাকে, তাদের টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে।

দ্বিতীয়ত, বি ভাইরাসের প্রবাহ প্রতিরোধে বি ভাইরাসে আক্রান্ত মা ও সদ্যোজাত শিশুদের ইমিউনোপ্রফাইল্যাক্সিস নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, রক্ত পরিসঞ্চালন ও ইনজেকশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ইতিমধ্যে রক্ত সঞ্চালনের আগে রক্ত ও রক্তজাত দ্রব্যের স্ক্রিনিং এবং ডিসপোজিবল সিরিঞ্জ ও সুচ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু সঙ্গে অক্সিজেন মাস্ক, সাকশন ক্যাথেটার, নেবুলাইজেশনের সরঞ্জামাদি, টাং ডিপ্রেসর প্রভৃতির ক্ষেত্রেও ডিসপোজিবল বস্তুর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম

নজরুল ইসলাম
গ্রিক মহাপুরুষ হিপোক্রেটিস ছোঁয়াচে জন্ডিসের বিবরণ দিয়েছেন। অষ্টাদশ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যে জন্ডিসের প্রাদুর্ভাবের বেশ কিছু প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

সেনাশিবিরে দূষিত পানি পানের অল্প সময়ের মধ্যে সংঘটিত জন্ডিস মহামারিতে রূপ নেওয়ার খবর মেডিকেল জার্নালগুলোতে পাওয়া যায়। ১৮৮৩ সালে জার্মানির ব্রিমান শিপইয়ার্ডের কর্মীদের মধ্যে জন্ডিসের প্রাদুর্ভাবের ঘটনা প্রথম সিরাম হেপাটাইটিস রিপোর্ট হিসেবে ধরা হয়। সেখানে ১২৮৯ জন কর্মীকে গুটিবসন্তের টিকা দেওয়ার এক থেকে সাত মাস পর ১৯১ জন কর্মী জন্ডিসে আক্রান্ত হয়।

১৯০৮ সালে প্রথমবারের মতো ভাইরাসকে জন্ডিসের কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়। তবে ১৯৩৭ সালে প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ধারণাকে তেমন পাত্তা দেওয়া হয়নি। এ সময় ২ হাজার ২০০ জনকে ইয়েলো ফিভারের টিকা দেওয়া হলে দুই থেকে পাঁচ মাসের মধ্যেই ৫২ জন জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। বিভিন্ন রকম পর্যালোচনা করার পর প্রমাণিত হয় যে ইয়েলো ফিভার ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার সময় যে হিউম্যান সিরাম ব্যবহার করা হয়েছিল, তা হেপাটাইটিস ভাইরাসে সংক্রমিত ছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যৌনরোগ ক্লিনিকে একই সিরিঞ্জ ও সুচ দিয়ে দিয়ে অনেক রোগীকে ইনজেকশন দেওয়া হতো। দেখা যেত এসব রোগীর মধ্যে কেউ কেউ এক থেকে তিন মাসের মধ্যে জন্ডিসে আক্রান্ত হতো। ধারণা করা হতো, একই সিরিঞ্জ ও সুচ ব্যবহারের ফলে এটা হতো।

১৯৪৭ সালে ম্যাককালাম প্রস্তাব দিলেন, পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে যে হেপাটাইটিস ছড়ায়, তাকে বলা হবে হেপাটাইটিস এ ভাইরাস। আর সুচ-সিরিঞ্জ কিংবা রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে যে হেপাটাইটিস ছড়ায়, তাকে বলা হবে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস।

মো. সাইফুল ইসলাম এলিন
মো. সাইফুল ইসলাম এলিন

মো. সাইফুল ইসলাম এলিন
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস যেকোনো বয়সের মানুষকেই আক্রান্ত করতে পারে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের মাধ্যমে অ্যাকিউট হেপাটাইটিস, ক্রনিক হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার হয়ে থাকে। অ্যাকিউট হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে প্রায় ৩৫ শতাংশ, ক্রনিক হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫ শতাংশ, লিভার সিরোসিসের ক্ষেত্রে প্রায় ৬০ শতাংশ এবং লিভার ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রায় ৬৫ শতাংশের জন্য হেপাটাইটিস বি ভাইরাসই দায়ী।

সুতরাং, ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস নির্মূলে আমাদের যে পরিকল্পনা, তা ফলপ্রসূ করার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনেশনের কোনো বিকল্প নেই।

২০১৮ সালে দেশব্যাপী করা একটি গবেষণায় দেখানো হয়, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত জনসংখ্যা প্রায় ৫ দশমিক ১ শতাংশ। এতে দেখা যায়, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা নারীর চেয়ে বেশি এবং গ্রামের মানুষ অপেক্ষা শহরের মানুষ এ ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত।

আমরা যদি আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ধরি, তাহলে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮৫ লাখ, এর মধ্যে পুরুষ প্রায় ৫৭ লাখ, নারী ২৮ লাখ এবং শিশুর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। এমনকি একই পরিবারের একাধিক সদস্যও হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। এই হিসাবমতে, প্রায় ১৫ লাখ পরিবারে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে।

বর্তমানে কর্মক্ষম অনূর্ধ্ব–৩০ বছর বয়সী পুরুষ ও নারীর মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। এ ছাড়া ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী প্রজননে সক্ষম নারীদের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ। এরাই আমাদের পরবর্তী হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমণের একটি উৎস।

এদের চিকিৎসার আওতায় এনে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এদের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ছড়াতে পারে।

মো. শাহিনুল আলম
মো. শাহিনুল আলম

মো. শাহিনুল আলম
ইপিআই কর্মসূচির আওতায় ২০০৩ সাল থেকে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি–এর প্রাদুর্ভাব অনেক কমে এসেছে। হেপাটোলজি সোসাইটির ২০১৭ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী ৮৫ লাখ লোক হেপাটাইটিস বি দ্বারা আক্রান্ত। এর মধ্যে ৭৭ লাখ লোক জানেই না যে তাদের হেপাটাইটিস বি রয়েছে। এ জন্য আমাদের প্রথম সুপারিশ হচ্ছে হেপাটাইটিস বি নির্ণয়ের পরীক্ষাটি সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনা মূল্যে হওয়া উচিত।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮ লাখ প্রজনন সক্ষম নারী হেপাটাইটিস বি বহন করছেন। তাই গর্ভবতী মায়েদের সারফেস অ্যান্টিজেন পরীক্ষাটি নিয়মমাফিকভাবে সব সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে করানো উচিত।

বর্তমানে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা চার লাখ। শিশুরা যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এটা ক্রনিক হয়ে যায়। তাই যেসব শিশু ইতিমধ্যেই আক্রান্ত, তাদের চিকিৎসার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

আমরা চাই জন্মের পরপরই শিশুদের বিসিজি টিকার মতো সরকারি উদ্যোগে হেপাটাইটিসের টিকা দেওয়া হোক। ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে ২৫ লাখ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। এই তরুণদের বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা হয়। কারণ, ধারণা করা হয়, তাঁদের মাধ্যমে তাঁদের সহকর্মীদের এ রোগ হতে পারে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ও অবৈজ্ঞানিক ধারণা। এটি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।

টি এ চৌধুরী
টি এ চৌধুরী

টি এ চৌধুরী
শিশু বয়সে যদি কেউ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিত হয়, তবে তা আর নিরাময় হয় না। সব শেষে দেখা যায়, এসব শিশু সিরোসিস, এমনকি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হলো,হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত মায়ের শিশুকে জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিতে হবেএবং পর্যায়ক্রমে ভ্যাকসিন দিতে হবে।

এখানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা উঠেছে। আমি ২৪ ঘণ্টার কথা বলি না। বলি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে ভ্যাকসিন দিন। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, শরীরের একই জায়গায় যেন ইনজেকশনগুলো দেওয়া না হয়। ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় দিতে হবে। মনে করি, হেপাটাইটিসের টিকার ক্ষেত্রে এটাকে করমুক্ত করার পাশাপাশি সরকারের ভর্তুকি দেওয়া উচিত। যেন সব শিশু জন্মের পর এই টিকা পেতে পারে।

আমাদের দেশে একটি ধারণা প্রচলিত আছে, গর্ভবতী নারীরা কোনো টিকাই গ্রহণ করতে পারবেন না। এটা ভুল ধারণা। এমনও দেখা যায়, একটি টিকা গ্রহণের পর গর্ভবতী নারী বাকি টিকাগুলো সময়মতো নেন না। এতে শিডিউল বিপর্যয় ঘটে।

মানুষকে এটা বোঝাতে হবে, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা মা কিংবা শিশু কারও ক্ষতি করে না। তাই একজন গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস বি টিকা নেওয়া নিরাপদ।

শেখ মোহাম্মদ বাহার হোসেন
শেখ মোহাম্মদ বাহার হোসেন

শেখ মোহাম্মদ বাহার হোসেন
আমাদের মতো অনুন্নত দেশে সাধারণত ইনফেকশাস ডিজিজটাই অধিক মৃত্যুহারের জন্য দায়ী। যেমন ম্যালেরিয়া, টিবি। যদিও এখন ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড-এসব রোগে মৃত্যুহার সারা বিশ্বে, এমনকি আমাদের দেশেও কমে যাচ্ছে। কিন্তু হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে মৃত্যুহার বেড়ে যাচ্ছে। যেসব দেশে ভাইরাসের চিকিৎসা কিংবা স্ক্রিনিং প্রিভিলেজ নেই, সেসব দেশে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ হেপাটাইটিস আক্রান্ত মানুষ বাস করে।

অপারেশনের সময় সার্জন ও রোগী দুজনই কিন্তু হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। দুজনেরই যদি স্ক্রিনিং করা না থাকে, তাহলে এই ভাইরাস চিকিৎসক থেকে রোগীর মধ্যেও ছড়াতে পারে কিংবা রোগী থেকে চিকিৎসকের মধ্যেও ছড়াতে পারে। সুতরাং চিকিৎসক ও রোগী দুজনেরই স্ক্রিনিং করতে হবে। চিকিৎসক যেমন হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ হতে হবে, তেমনি রোগী হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ না হলেও তাকে অপারেশন করাতে হবে।

সার্জন যদি ভ্যাক্সিনেটেড থাকেন এবং তাঁর যদি অ্যান্টিবডি একটি নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি থাকে, তবে তিনি নিরাপদ। কম থাকলে সে ক্ষেত্রে সার্জনকেও চিকিৎসা করতে হবে। তাঁকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে একটি ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইনজেকশন নিতে হয়।

তাহমীদ আহমেদ
তাহমীদ আহমেদ

তাহমীদ আহমেদ
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) ১৭টি লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় লক্ষ্য হলো স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত। এই তৃতীয়টির কিছু লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যা আমাদের ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জন করতে হবে। এসব লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম হচ্ছে সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ। হেপাটাইটিস এই সংক্রামক ব্যাধির অন্তর্ভুক্ত। তাই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে কিছু মানদণ্ড স্থির করা হয়েছে। এটা ২০৩০ সালের মধ্যেই অর্জন করতে হবে।

এদের মধ্যে রয়েছে হেপাটাইটিসের নতুন কেস ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। হেপাটাইটিসে বর্তমান বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ লাখ থেকে কমিয়ে ৫ লাখে আনতে হবে। অর্থাৎ মৃত্যুহার ৬৫ শতাংশ কমাতে হবে। ৯০ শতাংশ পর্যন্ত শিশুদের ভ্যাকসিনের পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হবে। রক্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্ক্রিন করে নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এটি না করতে পারলে এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে।

ইমিউনোগ্লোবিউলিন, ভ্যাকসিন ও গণসচেতনতা সৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর পাশাপাশি প্রোগ্রাম লেভেলে কিছু কাজ করা উচিত।

আমাদের জনসংখ্যা অনেক, তাই এ ক্ষেত্রে প্রোগ্রাম লেভেলে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু কৌশল আমাদের অনুসরণ করতে হবে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে।

হেপাটাইটিস সম্পর্কে শহরাঞ্চলের তথ্য আমাদের জানা থাকলেও গ্রামের অধিকাংশ তথ্যই অজানা।

আব্দুল কাইয়ুম

আলোচনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এসেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে হেপাটাইটিস দূরীকরণে আমাদের এসব বিষয় কাজে লাগবে বলে আশা করি। এ ক্ষেত্রে সরকার, জনগণ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

যাঁরা অংশ নিলেন

মবিন খান: সভাপতি, হেপাটোলজি সোসাইটি, ঢাকা, বাংলাদেশ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, হেপাটোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

টি এ চৌধুরী: চিফ কনসালট্যান্ট, গাইনি স্পেশাল ইউনিট, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল

মো. নজরুল ইসলাম: সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

মো. শাহিনুল আলম: সাধারণ সম্পাদক, হেপাটোলজি সোসাইটি, ঢাকা, বাংলাদেশ সহযোগী অধ্যাপক, হেপাটোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

মো. গোলাম আযম: বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক, হেপাটোলজি সোসাইটি, ঢাকা, বাংলাদেশ সহযোগী অধ্যাপক, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও লিভার বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল

মো. আবু সাঈদ: অধ্যাপক, মেডিসিন ও সহসভাপতি হেপাটোলজি সোসাইটি, ঢাকা, বাংলাদেশ

শেখ মোহাম্মদ বাহার হোসেন: কনসালট্যান্ট, স্কয়ার হাসপাতাল

মো. আবু সাঈদ: বিভাগীয় প্রধান, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ

তাহমীদ আহমেদ: সিনিয়র ডিরেক্টর, আইসিডিডিআরবি

মো. আবিদ হোসেন মোল্লা: বিভাগীয় প্রধান, শিশু বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল

মো. গোলাম মোস্তফা: সহযোগী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

মো. সাইফুল ইসলাম এলিন: লিভার বিশেষজ্ঞ, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

মিজানুর রহমান খান: যুগ্ম সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।