বঙ্গবন্ধুর আরব্ধ কাজ ও আজকের বাংলাদেশ

পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছিলেন তরুণ শেখ মুজিব। তখন তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র, বেকার হোস্টেলের বাসিন্দা। শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাঁর নেতা। কিন্তু মুসলিম লীগের খানদানি নেতাদের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারার তেমন মিল ছিল না। তরুণ বয়সেও তাঁর চিন্তায় নিজের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ভবিষ্যতের স্থান ছিল না, ভাবনার সবটাজুড়েই ছিল গ্রামবাংলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণ। সেদিক থেকে সদ্য স্বাধীন পাকিস্তান নিয়ে তাঁর আশাভঙ্গ হতে দেরি হয়নি। তিনি অঙ্কুরেই বুঝেছিলেন পাকিস্তানের কাঠামোয় বাঙালির উন্নতির সম্ভাবনা বিশেষ নেই। তাই জনগণের কল্যাণে বিকল্প রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠায় তিনি আত্মনিয়োগ করেছিলেন। পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ পূর্ব বাংলার জন্য আশাব্যঞ্জক ছিল না, এমনকি চুয়ান্নর প্রাদেশিক নির্বাচনে বিপুল বিজয়, প্রদেশে মুসলিম লীগের প্রায় বিলুপ্তি এবং নিজেদের সরকার গঠন সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারের দমনমূলক ভূমিকার মুখে বর্ষীয়ান রাজনীতিক শেরেবাংলাসহ পূর্বসূরি বাঙালি নেতাদের ভূমিকায় তরুণ মুজিব যারপরনাই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তিনি তখনই বুঝেছিলেন এঁদের নিয়ে রাজনীতি করা যাবে না। যুক্তফ্রন্ট ভাঙার যে খেলা কেন্দ্র চালিয়েছিল, তাতে পূর্বসূরি রাজনীতিকদের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মুজিব লিখেছেন, ‘অযোগ্য নেতৃত্ব, নীতিহীন নেতা ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদদের সাথে কোনো দিন এক সঙ্গে হয়ে দেশের কোনো কাজে নামতে নেই।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ. ২৭৩)। 

তখনো সোহরাওয়ার্দীর ওপর তাঁর কিছু ভরসা ছিল। কিন্তু নেতা যখন পাকিস্তানি সরকারের মন্ত্রিত্বের গদিতে বসে তাদের ষড়যন্ত্রের রাজনীতির শিকার হতে চলেছেন, তখন মুজিব তাঁর সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করে ক্ষুণ্ন মনে বুঝেছিলেন তাঁর মাথার ওপর কার্যত কোনো নেতাই থাকছেন না। তখন থেকেই মুজিব বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্রের সম্ভাবনাকে তাঁর চিন্তায় ঠাঁই দিয়েছিলেন। 

১৯৬৩ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথে একক সিদ্ধান্তে চলার পথে যেমন বাধা থাকল না, তেমনি এ ছাড়া কার্যকর উপায়ও ছিল না। এই একলা চলাকে তিনি ব্যক্তিগত সুযোগ হিসেবে নেননি, এ যেন ছিল তাঁর দায়িত্ব। কারণ, শেখ মুজিব সংগঠন গড়ে তুলে এবং জনগণের সঙ্গে থেকেই নেতৃত্বের দায় কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। 

রাজনৈতিক জীবনে তিনি যেমন সব ধরনের নেতার সঙ্গে মিশেছেন, তেমনি নিজেকে জনগণের কাতারে সম্পৃক্তও রেখেছিলেন। আবার বারবার জেলে যাওয়ায় সেখানে বিশেষভাবে বামপন্থী বন্দীদের সঙ্গে তাঁর ভাব বিনিময় হতো। তাঁদের সঙ্গে আলোচনার ফলে বরাবরের অনুসন্ধিৎসু পাঠক মুজিবের রাজনৈতিক চিন্তা কখনোই নিছক ক্ষমতা বা ব্যক্তিগত অর্জনে নিবদ্ধ হয়নি। জনগণের ও বাংলার কল্যাণ কিসে হবে, কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি কাজে লাগবে—এসব নিয়েই ভেবেছেন। এভাবে নিজের যে রাজনৈতিক দর্শন তৈরি করেছিলেন, তার ভিত্তি ছিল জনগণ, প্রেক্ষাপট ছিল পূর্ব বাংলা এবং আদর্শিক লক্ষ্য ছিল সমাজতন্ত্র। তাঁর ভাষায়, ‘আমি নিজে কমিউনিস্ট নই। তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না।’ (ওই, পৃ. ২৩৪)

এত দিনে তাঁর কাছে স্পষ্টই হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। পশ্চিম পাকিস্তানি নেতা নবাবজাদা নসরুল্লাহর সঙ্গে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ করেও তিনি পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার পক্ষের উদ্যোগগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। একসময় এ দেশের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ছয় দফা ঘোষণা করলেন। তত দিনে এই বাংলার শিক্ষিত এবং সচেতন মানুষ প্রবলভাবে রাজনীতি–সচেতন হয়ে উঠেছেন। আওয়ামী লীগ ছাড়াও ন্যাপ এবং ছাত্রসংগঠনগুলো জনগণের সব রকম অধিকার আদায়ে আপসহীন সংগ্রামের জন্য তৈরি হয়ে উঠেছিল। আর ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে প্রদেশের লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও পেশাজীবী সমাজও রাজনৈতিক আন্দোলনে শরিক হয়েছে। এ রকম বাস্তবতায় ছয় দফা বাঙালির মুক্তিসনদ হয়ে এসেছিল আর পাকিস্তানি সরকারের জেল–জুলুম ষড়যন্ত্র সয়ে দেশের রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে থাকা শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন সবার ভরসার স্থল। যখন ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১ নম্বর আসামি হিসেবে তিনি সাহস ও মর্যাদার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের একতরফা অভিযোগ ও বিচারের মোকাবিলা করেছিলেন, তখন জনমনে তাঁর স্থান ক্রমেই অন্য সব নেতাকে ছাপিয়ে শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল। গণ-আন্দোলনের মুখে ষড়যন্ত্র মামলা যখন প্রত্যাহার হলো, তিনিসহ অন্য অভিযুক্তরা মুক্তি পেলেন, তত দিনে তিনিই আমজনগণের নেতা। তখন থেকেই স্লোগান উঠেছে—এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়ে ওঠে সময়ের ব্যাপার। আইয়ুবের পতন ও জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক শাসন সাময়িক বাধা হয়ে দাঁড়ালেও সত্তরের নির্বাচনে জনগণ বুঝিয়ে দিয়েছিল তারা আদতে শেষ কথাই বলতে চাইছে। পাকিস্তানি সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি ও শেষ পর্যন্ত ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়ে বাঙালির স্বপ্ন পূরণের অ্যাজেন্ডাকেই সামনে ঠেলে দিয়েছিল। মানুষ আর আপস, সমঝোতা করতে রাজি ছিল না। স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে ছাত্র-তরুণ, লেখক-শিল্পী ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীরা আর কালক্ষেপণে রাজি ছিলেন না। তখন এ বাংলার আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছিল এসব স্লোগান—তোমার আমার ঠিকানা/পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, এক নেতা এক দেশ/বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ। 

দূরদর্শী নেতা সাতই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দিলেন কিন্তু যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাকটি স্থগিত রাখলেন, যাতে সভার চতুর্দিকে মেশিনগান সজ্জিত পাকিস্তানি সেনারা বৈধ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতো দেশদ্রোহের অজুহাতে তাঁকেসহ নিরীহ জনগণের ওপর তাৎক্ষণিকভাবে গুলি চালিয়ে মানুষের এত দিনের এত ত্যাগ, এত প্রস্তুতির স্বাধীনতার সম্ভাবনাকে শেষ করে দিতে না পারে। পাকিস্তানই একসময় আক্রমণ চালাল, তাতে বিশ্ব জনমত, বিশ্ববাসীর সহানুভূতি-সমর্থন আমরাই পেলাম। তাঁর মতো সুপরিচিত জননন্দিত নেতার পক্ষে রাতারাতি আত্মগোপন করে পালানো সম্ভব ছিল না বলে সহযোদ্ধা তাজউদ্দীন আহমদসহ অন্যদের দ্রুত পালানোর উপদেশ দিয়ে নিজে পাকিস্তানি সরকারের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ধরা দিলেন। আবারও নিশ্চিত মৃত্যুর ভয়কে জয় করেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের বার্তা ছড়িয়ে দিলেন, স্বাধীনতার লিখিত ঘোষণা দিলেন এবং বাকি সবাইকে নিরাপদে দেশান্তরের সুযোগ করে দিলেন। 

এই পর্যায় পর্যন্ত রাজনৈতিক জীবনে তিনি কেবল বড় হয়েছেন, ভাবমূর্তি তাঁর উজ্জ্বল হয়েছে এবং ভূমিকার মহত্ত্ব হয়েছে রচিত। কী তাঁর প্রধান অবদান? তাঁর মধ্যেই এ দেশের বাঙালি প্রথম একজন যথার্থ নির্ভরযোগ্য নেতার দেখা পেল, যিনি ব্যক্তিগত পদের প্রলোভনে আপস করেন না। তাঁর মধ্যে মিলল প্রকৃত নির্ভীক সাহসী ও আত্মমর্যাদাশীল এক নেতা। নেতা যখন নির্ভরতার প্রতীক, সাহসের প্রতিমূর্তি, যেকোনো পরিস্থিতিতে জনস্বার্থকে সবার ওপরে স্থান দিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত, তখন মানুষও দেশের জন্য তার সর্বোচ্চটা দিতে প্রস্তুত হয়। এ এমন এক মেলবন্ধন, যা জাদুকরি ভূমিকা পালন করেছে, এতকালের কোন্দলপ্রবণ বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হলো, এত দিনের ভিতু ঘরকুনো বাঙালি বীরের মতো রণক্ষেত্রে ছুটে গেল। নেতার মতোই বিজয় না হওয়া পর্যন্ত লড়াইয়ের ময়দানে থাকতে সবাই প্রস্তুত। এটাই মুজিব-নেতৃত্বের জাদুকরি সাফল্য। তিনি হয়তো গ্যারিবল্ডি বা বিসমার্কের মতো স্বভাষী জাতিসমূহের রাজ্যগুলো একীভূত করতে পারেননি, বাস্তবত তেমন দাবি তখন প্রাসঙ্গিক ছিল না, ওঠেওনি—কিন্তু দেশ-ধর্ম-জাতনির্বিশেষে সব বাঙালির নেতা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সেদিন জয় বাংলা স্লোগান হয়ে উঠেছিল সব বাঙালির বিজয়মন্ত্র। 

মাথায় মৃত্যু পরোয়ানার খঁাড়া নিয়ে ১১ মাসের বন্দী-বিচ্ছিন্ন জীবন কাটিয়ে যখন তিনি জানুয়ারি ’৭২-এ তাঁর স্বাধীন বাংলায় ফিরলেন, তখন সত্তরের নির্বাচনের বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি পূরণকে অগ্রাধিকার দিলেন। এই প্রথম রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু সময়ের দাবি, পরিবর্তিত বাস্তবতার চাহিদা অনুধাবনে ভুল করলেন। তবে এর মধ্যেও সংবিধান প্রণয়ন, ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়, শরণার্থী পুনর্বাসনসহ বহু দূরদর্শী যথার্থ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ ত্যাগে উদ্বুদ্ধ জনগোষ্ঠীর বিজয় পরবর্তী বিভেদপ্রবণতা, ব্যক্তিস্বার্থের নির্লজ্জ প্রকাশ এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফলে চরম প্রতিকূলতার মুখে পড়ে গেলেন। দ্রুতই তিনি পরিস্থিতি উপলব্ধি করে সবাইকে নিয়েই পূর্ণ উদ্যমে কাজে ঝাঁপ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি গুছিয়ে নেওয়ার আগেই আন্তর্জাতিক চক্রের ইন্ধনে দেশীয় এজেন্টরা তাঁর ওপর নির্মম আঘাত হানে। 

তাঁর আকস্মিক অকালপ্রয়াণে দেশ চরম বিশৃঙ্খলায় পড়েছিল সন্দেহ নেই। শিখণ্ডী এবং ঘরের শত্রু বিভীষণ মোশতাকের পরে জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এলেন। তিনি পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের মডেল অনুসরণের চেষ্টা করে দেশে যুগপৎ ইসলামি ধর্মীয় জাগরণ ঘটাতে এবং দেশকে রুশ-ভারত লবি থেকে মার্কিন-সোভিয়েত-পাকিস্তানি লবিতে ভেড়াতে চেয়েছিলেন। অনেকাংশে সফলও হয়েছেন তিনি। এভাবে জেনারেল এরশাদের নয় বছর এবং খালেদা জিয়ার প্রথম পাঁচ বছরসহ পঁচাত্তরের পরে টানা দুই দশক বাংলাদেশের বিপরীত যাত্রা চলেছে। ১৯৯৬তে জাপার সমর্থনে ক্ষমতায় এসেও আওয়ামী লীগের পক্ষে দেশকে মূল খাতে ফেরানো সম্ভব হয়নি। সেটার সূচনা হয়েছে আদতে ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। আর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা তাঁর নেতৃত্বগুণের পরিচয় রাখলেন। একদিকে ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়গুলো আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তীকালের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া শুরু করলেন, সংবিধান সংশোধনে হাত দিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলেন এবং বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রয়াস নিলেন। 

বলা দরকার, ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী এক নতুন কালান্তরের সূচনা হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের পতন, এক মেরুর বিশ্বের একক মুরব্বি হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র, উন্নত ও ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতাদের উত্থান ঘটছে, ইসলামি ধর্মীয় জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের জাতি–বৈরিতা সহিংস রূপ নিচ্ছে। আবার প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সুলভ বিস্তারের ফলে সবার জন্য সুযোগ বাড়ছে, মুক্তবাজার ও বিশ্বায়ন বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে সুযোগ ও সংকট উভয়ই তৈরি করেছে। তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তন মানবজাতির ভবিষ্যৎকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। 

এমন একটা জটিল পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহসের পরিচয় দিচ্ছেন। তবে এখন রাজনীতির এক ভাটার কাল চলছে, জাতির মধ্যে ঐক্য ও জাগরণ সৃষ্টির উপাদান হয়তো গতানুগতিক রাজনীতি থেকে আর মিলবে না। অনেক উন্নতি ও আরও উন্নয়নের সম্ভাবনার মধ্যে একটা মহল এখনো আমাদের পেছনে টানছে। চরম প্রতিক্রিয়াশীলতা এ দেশে এবং বিদেশেও মাথাচাড়া দিয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার মতো আকস্মিক আপদ পরিস্থিতিকে কঠিন করে দেশ ও এ অঞ্চলের অস্থিরতার জন্ম দিতে পারে। তাতে নানা পক্ষের জন্য সুযোগ নেওয়ার অবকাশ তৈরি হতে পারে। তাই বলব, উন্নয়ন হলেও বাংলাদেশ এখনো শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়নি। বঙ্গবন্ধু যদি স্বাধীনতার স্থপতি হন তবে শেখ হাসিনার ওপর ইতিহাস স্বাধীন দেশের স্থায়িত্ব নিশ্চিতের দায়িত্ব অর্পণ করেছে। এটি বঙ্গবন্ধুর আরব্ধ কাজ, তাঁর কন্যা ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে ইতিহাস এ দায় তাঁর কাঁধেই চাপিয়েছে। 

আবুল মোমেন কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক