নির্বিচার গুলি চালানো কি কমবে?

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে যতবারই স্কুল–কলেজ, উপাসনালয় বা অন্য কোনো স্থাপনায় নির্বিচার গুলির ঘটনা ঘটে, ততবারই একটি প্রশ্ন সবার সামনে বড় হয়ে দেখা দেয়। সেটি হলো: এই হামলার নেপথ্যের আসল কারণ কী?

আমেরিকায় নির্বিচার গুলিতে হতাহতের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে, তবে এই ধরনের গুলির ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর প্রতিটিতে গড়ে চারজন মারা গেছে। এই আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই টেক্সাসের এল পাসো এবং ওহাইওর ডেটন এলাকায় নির্বিচার গুলি হয়েছে। এই দুটি ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের অধিকার লবি, বিশেষ করে ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন (এনআরএ)-এর দাবির নৈতিক ভিত্তির কোমর ভেঙে দেবে।

২০১২ সালে কানেটিকাটে স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারিতে ২০ বছর বয়সী এক তরুণ নির্বিচার গুলি করে প্রথম শ্রেণির ২০টি শিশুশিক্ষার্থী এবং ৬ জন প্রাপ্তবয়স্ককে গুলি করে হত্যা করেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জনসমক্ষে অশ্রুপাত করেছিলেন এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু আজও সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকার ৯২ শতাংশ নাগরিক ব্যক্তিগত সংগ্রহে অস্ত্র রাখার আইনের ফাঁকফোকর বন্ধ করার পক্ষে। ৬২ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, ব্যক্তিগত সংগ্রহে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ম্যাগাজিন নিষিদ্ধ করা উচিত। কিন্তু স্যান্ডি হুকের ভয়াবহ হামলার পরও মার্কিন সিনেটররা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কড়াকড়ির পক্ষে ভোট দেননি। এর কারণটা খুব সহজ। সিনেটে যে প্রতিনিধিরা আছেন, তাঁদের ওপর অস্ত্র ব্যবসায়ীদের প্রভাব রয়েছে। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে কড়াকড়ি আরোপ করা হলে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে বলা আছে, ‘নাগরিকের অস্ত্র রাখা ও বহন করার অধিকার থাকবে এবং এই অধিকারকে লঙ্ঘন করা যাবে না।’ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের বিরোধিতাকারীরা এই দ্বিতীয় সংশোধনীকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যেন এই সংশোধনী সিনাই পর্বত থেকে ঐশী বাণী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ১৭৯১ সালে এই দ্বিতীয় সংশোধনী আরোপ করা হয়েছিল সাবেক ঔপনিবেশিক শাসনকে সুসংহত করা এবং আমেরিকায় আসা শ্বেতাঙ্গদের নিজেদের রক্ষা করার জন্য। কিন্তু সেই অবস্থা এখন আর নেই। ১৯৯৪ সালে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে সংশোধনী আনা হয় এবং তাতে ক্ষেত্রবিশেষে প্রাণঘাতী অস্ত্র বহনকে নিষিদ্ধও করা হয়। কিন্তু ২০০৪ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় সেই সংশোধনী বাতিল করা হয়।

বহু গবেষণালব্ধ তথ্য–প্রমাণে দেখা গেছে, যে কয় বছর আমেরিকায় প্রাণঘাতী অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ ছিল, সেই কয় বছর দেশটিতে নির্বিচার গুলিতে মানুষ হত্যার ঘটনা অনেক কমে গিয়েছিল এবং সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সেই হামলার ঘটনা আবার বেড়ে যেতে শুরু করে। যদি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে কড়াকড়ি আরোপের অংশ হিসেবে বৈধ ম্যাগাজিনে ১০টির বেশি গুলি রাখা যাবে না (বর্তমানে ম্যাগাজিনে ১০০টি গুলি রাখা যায়)—এমন বিধান জারি করা হতো, তাহলে বোঝা যেত ট্রাম্প সরকার নির্বিচার গুলির ঘটনা বন্ধে আন্তরিক। তবে এই আইন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

এল পাসো এবং ডেটনে নির্বিচার গুলির ঘটনার পর ট্রাম্প বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে সে বিষয়ে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর আগে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে গুলিতে ১৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পরও ট্রাম্প একই কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থাই নেননি।

আগামী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ট্রাম্প অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ির পক্ষে যাবেন না। শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে। ট্রাম্প তাঁর এই অনুসারী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যাবেন—এটি আশা করা যায় না। এ কারণেই যখন আমেরিকার অধিকারকর্মীরা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কড়াকড়ির পক্ষে কথা বলছেন এবং ‘কিছু একটা করুন’ বলে চিৎকার করছেন, সেই মুহূর্তে ট্রাম্প গলফ খেলার জন্য ১০ দিনের ছুটিতে গেছেন।

ইংরেজি থেকে নেওয়া। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

এলিজাবেথ ড্রু ওয়াশিংটনভিত্তিক সাংবাদিক ও লেখক