যে কারণে আপনি মদিনা শরিফে যাবেন

হাজিরা হজের আগে বা পরে মদিনা শরিফ গিয়ে থাকেন। হাদিস শরিফে এসেছে, মসজিদে নববিতে নামাজ আদায় করলে প্রতি রাকাতে ১০ হাজার, ২৫ হাজার অথবা ৫০ হাজার রাকাতের সওয়াব হয়। মদিনায় নবী করিম (সা.)–এর প্রতিষ্ঠিত প্রথম ইবাদতখানা ‘মসজিদে কোবা’তে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলে এক ওমরাহর সওয়াব হয়। মসজিদে নববিতে নিয়মিত ধারাবাহিক ৮ দিন ৪০ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে তাকবিরে উলার সঙ্গে আদায় করলে পাপ মাফ হয়, জাহান্নাম থেকে মুক্ত হয়ে জান্নাত নিশ্চিত হয়। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার মসজিদে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছে আর কোনো নামাজ কাজা করেনি, সে মোনাফেকি থেকে মুক্ত হবে এবং দোজখের আজাব থেকে নাজাত পাবে’ (মুসনাদে আহমদ, আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব)। পবিত্র মক্কা শরিফের পরেই এটি শ্রেষ্ঠ স্থান। 

মক্কা শরিফে নামাজ আদায় করলে নিশ্চিত প্রতি রাকাতে এক লাখ রাকাতের সওয়াব। রয়েছে সরাসরি ওমরাহ করার সুযোগও। কাবায় উপস্থিত ব্যক্তিদের জন্য প্রতিনিয়ত ১৩২টি রহমত ও নেকি বর্ষিত হতে থাকে অবিরত। সুতরাং যাঁরা বলেন বেশি সওয়াবের আশায় মদিনা শরিফ যাচ্ছেন, তাঁদের কথায় প্রজ্ঞার অভাব পরিলক্ষিত হয়। যদি কেউ প্রশ্ন করেন, মদিনা শরিফ যাওয়া হজের অংশ কি না। এরূপ প্রশ্ন করা সৌজন্য ও ভদ্রতার পরিপন্থী। আমরা মদিনা শরিফ যাব প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর মহব্বতে, তাঁর রওজা শরিফ জিয়ারতের উদ্দেশে্য। আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘(হে রাসুল সা.) বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তাহলে আমাকে অনুসরণ করো; তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন। তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু’ (সুরা-৩ আল ইমরান, আয়াত: ৩১)। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ প্রকৃত ইমানদার হবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত আমি (মুহাম্মদ সা.) তার নিকট তার পিতা, পুত্র ও সব প্রিয় মানুষ অপেক্ষা অধিক প্রিয় না হব’ (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, হাদিস: ১৩ ও ১৪, পৃষ্ঠা: ১৯)। 

মদিনা শরিফে প্রিয় নবীজি (সা.)–এর সমাধি, অর্থাৎ কবর বা মাকবারা অবস্থিত। একে রওজা মোবারক বা মাকবারা শরিফও বলা হয়। মদিনার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান নবীজি (সা.)–এর রওজা শরিফ। হজরত আয়েশা (রা.)–এর হুজরার মধ্যে তাঁর পবিত্র মাজার শরিফ অবস্থিত। তাঁরই পাশে হজরত আবুবকর (রা.) ও হজরত উমর (রা.)–এর মাজার। এটি বর্তমানে মসজিদে নববির অন্তর্গত। 

মদিনা হলো নবীজির শহর; শান্তির নগর। হুজুর আকরাম (সা.) বলেন, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল’ (ইলমুল ফিকহ, আসান ফিকাহ, পৃষ্ঠা: ২৫০)।  

মক্কা শরিফের উত্তর দিকে হলো মদিনা শরিফ। তাই মদিনা শরিফে কিবলা দক্ষিণ দিক। মসজিদে নববির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের প্রবেশপথকে বাবুস সালাম বলা হয়। মসজিদে নববির দক্ষিণ-পূর্ব পাশের বহির্গমন দরজাকে বাবে জিবরাইল বলা হয়। হজরত জিবরাইল (আ.) ওহি নিয়ে এসে প্রায়ই এখানে অপেক্ষা করতেন। রওজা শরিফ এবং এর থেকে পশ্চিম দিকে রাসুলে করিম (সা.)–এর মিম্বর পর্যন্ত স্থান হলো ‘রিয়াজুল জান্নাত’ বা ‘বেহেশতের বাগান’। এটি দুনিয়াতে একমাত্র জান্নাতের অংশ। এই স্থানে স্বতন্ত্র রঙের ধূসর সাদাটে কার্পেট বিছানো থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার রওজা ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানে বেহেশতের একটি বাগিচা বিদ্যমান’ (বুখারি ও মুসলিম)। এখানে প্রবেশ করা মানে জান্নাতে প্রবেশ করা। 

রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ মদিনায় মৃত্যুবরণ করতে পারলে যেন তা অবশ্যই করে; যে ব্যক্তি মদিনায় মৃত্যুবরণ করবে, আমি তার জন্য শাফায়াত করব’ (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমাদ)। 

খলিফা হজরত উমর (রা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাকে আপনার পথে শহীদ হওয়ার সৌভাগ্য দান করুন এবং আপনার রাসুল (সা.)–এর শহরে আমাকে মৃত্যু দিন’ (ইবনে কাছির)। ‘আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আমার কবর জিয়ারত করল না, তার কোনো ওজরই গ্রহণযোগ্য নয়’ (ইলমুল ফিকহ)। ‘যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারতের জন্য এল এবং এ ছাড়া তার আর অন্য কোনো কাজ ছিল না, তার জন্য শাফায়াত করা আমার ওপর হক (দায়িত্ব ও কর্তব্য) হয়ে গেল’ (ইলমুল ফিকহ, ইবনে আদি, সুনানে হাসান, শারহে লুবাব)। 

এসব হাদিস শরিফ থেকে প্রমাণিত হয়, রওজা পাক জিয়ারত করা ওয়াজিব। মুজতাহিদ ইমামেরা ও ফকিহ উলামারা এই ফাতাওয়া ও সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। (আসান ফিকাহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৫০-২৫১)। 

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক 

smusmangonee@gmail,com