ঝিলপাড় বস্তিতে আগুন

রূপনগরে পুড়ে যাওয়া ঝিলপাড় বস্তিটিতে আগুন লাগার প্রাথমিক কারণ সেখানে কোনো শৃঙ্খলা না থাকা। সেখানে আইনের শাসন ছিল না। প্রচলিত ব্যবস্থার আওতায় বস্তিবাসীদের পক্ষে বৈধভাবে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহ পাওয়ার দরজা বন্ধ ছিল। ঐতিহ্যগতভাবে বস্তির অস্তিত্ব কোনো না কোনো মাত্রায় ‘অবৈধ’ হতে পারে। সে কারণেই বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের নীতিমালা অনুসরণে উচ্চ আদালত সব সময় গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু কখনো তাতে সরকারের টনক নড়েনি। 

ঝিলপাড়ের বস্তি ‘অবৈধ’, তাই সরকার কখনো ভাবেনি তাদের নিরাপত্তা ও বৈধভাবে ইউটিলিটি সার্ভিস দেওয়ার ব্যাপারে। ঝিলপাড় বস্তিটি কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপরে নয়, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের জমিতে গড়ে উঠেছিল। সুতরাং সরকারি জমির ওপরে গড়ে ওঠা বস্তি থেকে যঁারা প্রতি মাসে মোটা
অঙ্কের মাসোহারা নিয়েছেন, তাঁরা আগুন লাগার কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির দায় এড়াতে পারেন না। 

কারা কত টাকা নিয়েছিলেন, তার একটা জবাবদিহি দরকার। স্থানীয় সাংসদ দাবি করেছেন, বস্তির বিদ্যুৎ–সংযোগ বৈধ ছিল। কিন্তু গ্যাস ও পানি বৈধ ছিল কি না, তা তিনি জানতেন না। এই স্বীকারোক্তিতে স্পষ্ট যে বস্তির নাগরিকদের জীবনের প্রতি তিনি পূর্ণ দায় অনুভব করেননি। গৃহায়ণ অধিদপ্তর ১৯৭৩ সালে জমি কিনে কেন ফেলে রেখেছে, তার কোনো সদুত্তর মেলেনি। 

শুধু রাজধানীতে কমবেশি ৩০ লাখ লোক বিভিন্ন বস্তিতে বাস করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পোশাকশ্রমিক। ঝিলপাড়ে যাঁদের ঘর পুড়েছে, তাঁদের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই অনেক পোশাককর্মী রয়েছেন। পোশাকশিল্প বা বিচিত্র যে পেশাতেই তাঁরা জড়িত থাকুক না কেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তঁারা ভূমিকা রেখে চলেছেন। নগরীর অর্থনৈতিক জীবনে বস্তিবাসীর ভূমিকা অপরিহার্য। অথচ তঁারা নানা সময় উচ্ছেদ এবং চাপের মুখে থাকেন। বস্তিবাসীদের পর্যায়ক্রমে কী করে আবাসনসংকট নিরসন করা যায়, সেটা নীতিনির্ধারকদের কখনো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে দেখা যায়নি। 

আগুনের সূত্রপাত কীভাবে, সেটা তদন্তসাপেক্ষ। কিন্তু প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, প্লাস্টিকের পাইপে গ্যাসের সংযোগ থেকেই আগুন লেগেছে। প্লাস্টিক পাইপ দাহ্য বস্তু, কারা বস্তিতে এ ধরনের পাইপের মাধ্যমে গ্যাসসংযোগ দিয়ে টাকা তুলছিলেন, তা গোপন কোনো বিষয় নয়। সুতরাং যে ৫০ জন ‘নব্য আওয়ামী লীগার’ (রূপনগর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির বক্তব্য অনুযায়ী) এই বস্তি থেকে অবৈধভাবে মাসে ৩০ লাখ টাকার বেশি তুলতেন, তাঁদের দায়দায়িত্ব চিহ্নিত করা জরুরি। 

চাঁদাবাজদের মধ্যে যাঁরা ‘নব্য আওয়ামী লীগার’, তাঁদের বহিষ্কার করা সংগঠনটির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। একটি মানবিক অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার মাধ্যমে আগুনে সব হারানো মানুষগুলোর জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।