ক্রিকেটে নতুন দিনের প্রত্যাশা

কোনো দেশের ক্রিকেট দলই সব সময় এক অবস্থায় থাকে না। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের দলটি এখন বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নতুন একজন কোচ নিয়োগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জগুলোর অন্তত একটি মোকাবিলা করেছে। বিশ্বকাপের পর স্টিভ রোডসকে বিদায় করে জাতীয় দলের জন্য নতুন কোচ খুঁজতে শুরু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু আইপিএল, বিগব্যাশের যুগে জাতীয় দলের জন্য পূর্ণকালীন কোচ পাওয়া সহজ কথা নয়। নানা নেতিবাচক মনোভাবের কারণে বাংলাদেশে আসার ব্যাপারেও অনেক কোচের আছে অনীহা। এসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে বেশ অল্প সময়ের মধ্যেই আগামী মাসের আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগেই বিসিবি দক্ষিণ আফ্রিকার রাসেল ডমিঙ্গোকে দুই বছরের জন্য জাতীয় দলের কোচ নিয়োগ দিয়েছে। ডমিঙ্গোকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্বাগত। 

ডমিঙ্গো বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন একটা ক্রান্তিলগ্নে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে গিয়েও ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল আশা পূরণ করতে পারেনি। এরপর শ্রীলঙ্কা সফরটাও হয়েছে হতাশাজনক। অথচ বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ দলের যে রকম পারফরম্যান্স ছিল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নতুন শক্তি হিসেবেই ধরা হচ্ছিল তাদের। ডমিঙ্গোর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হবে বাংলাদেশ দলকে আবার সেই ধারায় ফিরিয়ে আনা। দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য উদ্বুদ্ধ এবং তাঁদের সমস্যা সমাধানের কাজটি যেমন তাঁকে করতে হবে, তেমনি একইভাবে তরুণদের মধ্য থেকে নতুন ক্রিকেটার তৈরির কাজটিও করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে তাঁরা মাশরাফি, তামিম ও সাকিবদের জায়গা নিতে পারেন। 

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ এবং শ্রীলঙ্কা সফর আমাদের হতাশ করেছে ঠিকই। কিন্তু কখনো আনন্দে ভাসা, কখনো হতাশায় ডোবা—এটাই খেলা। হতাশা থেকেই নতুন করে মাথা তুলে দাঁড়াতে হয়। যে সেটি পারে, সে-ই সামনে এগিয়ে যায়। যে পারে না, তাকে পড়ে থাকতে হয় পেছনে। অতীতেও আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের ক্রিকেট মাথা তুলে দাঁড়ানোদের দলে। এই একটা জায়গায় পুরো দেশ মতভেদ ভুলে একই সরলরেখায়। খেলোয়াড়েরা জিতুক-হারুক, বাংলাদেশের মানুষ তাঁদের পাশে থাকে। কিন্তু শুধু মাঠের খেলা আর সমর্থন দিয়েই একটা দেশের ক্রিকেট এগোতে পারে না। ক্রিকেটেও প্রয়োজন সুশাসন। ক্রিকেট বোর্ড এবং সংগঠকদের ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ক্রিকেটের জন্য কাজ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্রিকেটাররা সুন্দর পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারেন। সে জন্য প্রয়োজন দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থার বলিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নেতৃত্ব। ক্রিকেট বোর্ড ব্যক্তিকেন্দ্রিক হওয়া চলবে না। বোর্ডসভায় পরিচালকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাহস থাকার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। 

বাংলাদেশের ক্রিকেটে সামনে এমন একটা সময় আসতে যাচ্ছে, যখন হয়তো একসঙ্গে বেশ কয়েকজন জে্যষ্ঠ খেলোয়াড় অনিয়মিত হয়ে পড়বেন বা খেলা থেকে সরে যাবেন। মাশরাফি বিন মুর্তজার ক্যারিয়ার তো এর মধ্যেই দিগন্ত দেখতে শুরু করেছে। তাঁর মতো একজনের অভাব হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটে অপূরণীয়। কিন্তু তারপরও নতুন নেতৃত্ব নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। 

ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এখন থেকেই সরবরাহ সারিতে ভালো ভালো ক্রিকেটার আনতে হবে। ঘরোয়া ও বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে কার্যকর প্রতিভা অন্বেষণ করতে হবে। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিসিবির কোচের অভাব নেই। তাঁদের মাধ্যমে দেশের আনাচকানাচ থেকে তুলে আনতে হবে নতুন মোস্তাফিজ, সৌম্য, সাইফ উদ্দিনদের। ডমিঙ্গো একসময় দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করেছেন। বাংলাদেশেও তিনি একই ভূমিকা পালনে আগ্রহী। স্থানীয় কোচদের পাশাপাশি তিনিও যদি প্রতিভা অন্বেষণে তাঁর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগান, আশা করা যায় ২০২৩ বিশ্বকাপের আগেই বাংলাদেশে ক্রিকেটারদের সরবরাহ সারি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।