২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের বিভীষিকার ২৯ বছর পরে এই আগস্টেই প্রতিক্রিয়াশীল অন্ধকারের শক্তি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। তারিখটি ছিল ২১ আগস্ট। সেদিন যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁরা ওই নৃশংস হামলার তদন্ত ও বিচারের জন্য কোনো উদ্যোগ না নিয়ে যে রাজনৈতিক কৌশল নিয়েছিলেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এই মামলা ঘিরে জজ মিয়া গল্পের প্রচারণায় মানুষ আঁতকে উঠেছিল। এখন এই মামলায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার শর্তপূরণের দিকটিতে বর্তমান সরকার আরও উদ্যোগী হবে, সেটাই সবার প্রত্যাশা।
আওয়ামী লীগের বিগত আমলে গ্রেনেড হামলার নবম বার্ষিকীতে সরকারি কৌঁসুলিরা ধারণা দিয়েছিলেন, সরকারের মেয়াদ আর পাঁচ মাস আছে, অথচ বিচার-প্রক্রিয়া গুটিয়ে নিতে আরও আট মাস সময় দরকার। সেই আট মাস অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। এই সময়ে আওয়ামী লীগকে বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়নি। তা সত্ত্বেও মামলাটির অগ্রগতি না হওয়া রহস্যজনক। প্রধান কৌঁসুলি ১২ মাস পরে এসে নতুন করে মামলা নিষ্পত্তি করতে আরও ১২ মাস লাগার যে যুক্তি খাড়া করেছেন, তা অগ্রহণযোগ্য।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যুক্ত করার পর থেকে এই চাঞ্চল্যকর মামলা নতুন মাত্রা লাভ করেছে। কিন্তু সেটি তো মামলা বিলম্বিত করার যৌক্তিক কারণ হতে পারে না। আশা করব, এই মামলার রায় বিচারিক আদালত যাতে দ্রুত দিতে পারেন, সে ব্যাপারে সরকার সর্বতোভাবে সহায়তা দেবে। নিম্ন আদালতের রায় তো আসামিদের দণ্ড চূড়ান্ত করবে না। তাই এই মামলার অভিযোগপত্রে কোনো অন্তর্নিহিত দুর্বলতা বা অনিয়ম থাকলে থাকলে তা আপিল পর্যায়ে ঘোচানো সম্ভব হবে।
আসামিপক্ষের সংশয় হলো, এ মামলার গতিপ্রকৃতি সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার দোলাচলের সুতোয় বাঁধা। এই সংশয় দূর করার জন্যও মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। আমরা চাই, ২১ আগস্টের ঘৃণ্য হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক। একই সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেটি নিশ্চিত করাও সরকারের দায়িত্ব।