ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা

ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির খবর পাওয়া যাচ্ছে; রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, মৃতের তালিকাও বড় হচ্ছে। এ পর্যন্ত মোট কত মানুষ ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি, তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া অনুমিত সংখ্যাটি সাড়ে তিন লাখ পেরিয়েছে বলে প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই সংবাদ ছাপা হয়েছে। তার পরের হালনাগাদ হিসাব এখনো মেলেনি, তবে সরকারি–বেসরকারি হাসপাতাল–ক্লিনিকগুলোতে রোগীর ভিড় বেড়ে চলেছে, ইতিমধ্যে দেশের ৬৪ জেলায়ও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসাবে বলা হয়েছে ১৮। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদকেরা বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে যেসব তথ্য পেয়েছেন, তাতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫। মোট কথা, ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি স্পষ্টভাবে লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

এই ঝুঁকিপূর্ণ রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি–বেসরকারি সব হাসপাতাল–ক্লিনিকে তাদের যথাযথ চিকিৎসাও সমস্যাপূর্ণ হয়ে উঠছে। রাজধানীর হাসপাতাল–ক্লিনিকগুলোতে রোগী বেড়ে যাওয়ার ফলে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালে ভিড় বাড়লেও কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না, কিন্তু তার ফলে তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত হয়, এমন কথাও বলা যায় না। কারণ, শয্যার অভাবে রোগীদের মেঝেতে, বারান্দায়, সিঁড়ির কোণে আশ্রয় নিতে হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন সেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে ওয়ার্ডে, করিডরে কোথাও কোনো ফাঁকা জায়গা নেই—এমন সচিত্র সংবাদও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। 

তা ছাড়া, এসব ডেঙ্গু রোগীর অনেকে মশারি ছাড়াই ঘুমাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কোনো কোনো হাসপাতালে এসব বাড়তি রোগীর জন্য মশারির ব্যবস্থা নেই, আবার মশারি আছে, কিন্তু গরম থেকে বাঁচার জন্য অনেকে মশারি টানাচ্ছেন না, এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের মশারি ছাড়া ঘুমানো হাসপাতালের অন্য রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ তাদের মশা কামড়ালে সেই মশা অন্য মানুষের দেহেও ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এমনকি চিকিৎসক, নার্স, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং রোগীদের শুশ্রূষার জন্য হাসপাতালে অবস্থানকারী আত্মীয়স্বজনদেরও এভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এভাবেই রাজধানীর মুগদা এলাকার একটি হাসপাতালের ৮ জন চিকিৎসক ও ২৭ জন নার্স ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন কি না, তা বলা যায় না। সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল–ক্লিনিকগুলোতেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এক হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে রোগী নিয়ে অন্য হাসপাতালে ছোটাছুটির খবর পাওয়া যাচ্ছে, এমনকি কোনো হাসপাতালেই জায়গা না পেয়ে রোগীকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনাও খুব বিরল নয়।

সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির চাপের ফলে চিকিৎসা–ব্যবস্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং চিকিৎসার গুণগত মান পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে কারণে তাদের ওপর রোগীর চাপ যেন আরও না বাড়ে, এবং যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে কিন্তু হাসপাতালে স্থান সংকুলান হচ্ছে না, তাদের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা জরুরি হয়ে উঠেছে। সে জন্য সরকারকে প্রথমেই ডেঙ্গু পরিস্থিতির গুরুতর মাত্রা এবং আগামী দিনগুলোয় তা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে হবে। সরকার যদি মনে করে যে পরিস্থিতি এখনো গুরুতর হয়নি, তাহলে খুব দ্রুতই এটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ ও দুই সিটি করপোরেশনের উচিত বিভিন্ন পাড়া–মহল্লায় ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিশেষ চিকিৎসাকেন্দ্র খোলার উদ্যোগ নেওয়া। এই কাজে কমিউনিটি সেন্টার, স্কুল–কলেজের ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা সাময়িকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই উদ্যোগ চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো, সন্ধানী ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনেরও এগিয়ে আসা উচিত।