প্রধান শিক্ষকবিহীন ১৮৬ বিদ্যালয়

যেকোনো বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যেমন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান, আবার তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকও বটে। তিনি বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা ও অর্থ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি জনসংযোগ রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে থাকেন। অথচ টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলার ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই! 

মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, টাঙ্গাইল জেলার ১২ উপজেলার ১ হাজার ৭০৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮৬টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষক না থাকায় সেসব বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদেরই প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজ করতে হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে সমন্বয়, উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা অফিসে যোগাযোগসহ নানা কাজে সাধারণ শিক্ষকদের সময় ব্যয় করতে হয়। এতে করে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। 

একটি জেলায় এতগুলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকার বিষয়টি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দুর্দশাকেই তুলে ধরছে। শুধু টাঙ্গাইলেই নয়, দেশের আরও অনেক জেলায় বহু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়েও শিক্ষকদের বহু পদ শূন্য রয়েছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই বিভাগে একাধিক শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। তাহলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া কীভাবে হবে? এমনও দেখা যায়, একটি প্রতিষ্ঠানে কোনো বিশেষ বিষয়ে একজন শিক্ষকও নেই, অথচ সেসব বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হচ্ছে এবং ফলাফলও প্রকাশ হচ্ছে—এর চেয়ে বড় প্রহসন আর কী হতে পারে? আবার দেখা যায়, এক বিষয়ের শিক্ষক অন্য বিষয়ে শিক্ষাদান করছেন। কিন্তু সেই শিক্ষাদান কি যথাযথ হয়? 

শিক্ষা কোনোভাবেই জোড়াতালি দেওয়ার খাত নয়। এটা এমন এক খাত, যেখানে কোনো ঘাটতি দেখা দিলে ভবিষ্যতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অন্যান্য খাতেও। যেকোনো কারণে যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হতে পারে। কিন্তু সেসব পদ দ্রুত পূরণের কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মানে জনগণের অর্থে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার কোনো সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে, প্রাথমিক শিক্ষা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তিস্তর। এ স্তরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় দুর্বলতা থাকলে পরবর্তী স্তরগুলোতেও এর রেশ থেকে যাবে। সে উপলব্ধি থেকে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণ করা জরুরি। 

আশা করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় টাঙ্গাইলসহ দেশের সব স্থানের প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দেবে এবং সব পর্যায়ের শিক্ষকের শূন্য পদগুলো অবিলম্বে পূরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।