গোয়ালন্দে পদ্মার ভাঙন

নদীভাঙন এ দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। নদীভাঙনের কারণে বাড়িঘর, আবাদি জমি, গাছপালাসহ নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অবলীলায় বিলীন হয়ে যায়। ভাঙনকবলিত নিঃস্ব মানুষই কেবল জানে কী তার মর্মবেদনা। এখন এই মর্মবেদনা অনুভব করছেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এক সপ্তাহ ধরে এ দুটি ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙনে তিনটি গ্রামের শতাধিক পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজারসহ নয়টি গ্রামের তিন সহস্রাধিক পরিবারের বসতভিটা, দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাট হুমকির মুখে রয়েছে। এমন পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। ভাঙন রোধে বালুভর্তি বস্তা ফেলা হচ্ছে। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না। ভাঙন রোধে অবিলম্বে টেকসই ব্যবস্থা না নিলে এগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। 

নদীমাতৃক বাংলাদেশে ‘নদীভাঙন’ একটি বাস্তবতা। প্রায় সব নদী কমবেশি ভাঙনের শিকার হয়। তবে পদ্মার ভাঙন সবচেয়ে ভয়ংকর। পদ্মার ভাঙন নিয়ে গত বছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মার ভাঙনে ১৯৬৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬৬ হাজার হেক্টরের বেশি জমি বিলীন হয়েছে। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবির ভিত্তিতে নাসা প্রতিবেদনটি তৈরি করে। 

গবেষকেরা মনে করেন, পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনের দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, এটি প্রাকৃতিক, মুক্ত প্রবাহিত নদী সুরক্ষার তেমন ব্যবস্থা নেই। দ্বিতীয়ত, নদীর তীরে বড় বালুচর রয়েছে, যা দ্রুতই ভেঙে যায়। 

তবে আমাদের কথা হচ্ছে, ভাঙনের পেছনে যা–ই কারণ থাকুক না কেন, তা রোধ করতে হবে। নদীভাঙনে প্রতিবছর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় কিন্তু নদীভাঙন প্রতিরোধ এবং নদীভাঙা মানুষের পুনর্বাসনে সেই অর্থে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। এটা খুবই দুঃখজনক। 

আমরা মনে করি, পদ্মার ভাঙনকে কেবল প্রকৃতির ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না। ভাঙন রোধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সক্রিয় হতে হবে সবচেয়ে বেশি। নদীর গতিপথ পরিবর্তন করতে পারলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব। সে জন্য সরকারকে
বড় ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শুধু বালুভর্তি বস্তা ফেললে তেমন কাজ হবে না। 

শুধু নদীভাঙন নয়, প্রাকৃতিক আরও অনেক কারণেই বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভূমিক্ষয় বেড়ে যাওয়া, নদীর উজানে প্রতিবন্ধকতা, নদী ভরাট হওয়াসহ নানা কারণে প্রকৃতি ক্রমেই বৈরী হচ্ছে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে আমাদের যথাসম্ভব লড়াই করেই বাঁচতে হবে। এ জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।