আইএস কেন বেপরোয়া হয়ে উঠছে

আফগান শান্তি আলোচনা যখন আঞ্চলিক শক্তিগুলোসহ পশ্চিমাদের মধ্যে নতুন করে আশা জাগাচ্ছে, ঠিক তখনই কাবুলের একটি বিয়েবাড়িতে আত্মঘাতী হামলা হলো। এই হামলা সবাইকে ধাক্কা দিয়েছে। এই হামলার মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে সক্রিয় মিলিট্যান্ট ইসলামিক স্টেট (আইএস) 

মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছে। এতে তারা সফলও হয়েছে। 

আফগানিস্তানে জাতিসংঘের অ্যাসিস্ট্যান্স মিশন সম্প্রতি একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের প্রথমার্ধে আফগানিস্তানে ৩ হাজার ৮১২ জন হতাহত হয়েছে। আইএস দাবি করেছে, ১ শতাংশ হতাহত হয়েছে তাদের হাতে। তালেবানের দাবি, ৩৮ শতাংশ হতাহত হয়েছে
তাদের হাতে। 

২০১৪ সালে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে আইএসের ‘খোরাসান চ্যাপ্টার’ সবচেয়ে বেশি তুঙ্গে ছিল। এখন তারা আর আগের মতো সক্রিয় আছে বলে মনে হয় না। তবে তখন থেকেই তারা যুবকদের লক্ষ্য করে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। তাঁরা জিহাদের মাধ্যমে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করার প্রচারণা চালিয়ে আসছে। ইরাক ও সিরিয়ায় তারা এই আহ্বান জানিয়ে তরুণদের দলে ভিড়িয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সাল নাগাদ সেখানে তাদের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যায়। এরপরই আইএসের হামলা চালানোর ধরনে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে থাকে। 

২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আইএসের দ্বারা উদ্বুদ্ধ লোন উলফরা ইউরোপে হামলা চালানো বাড়িয়ে দেয় এবং লিবিয়ায় আরও তৎপর হওয়ার ঘোষণা দেয়। 

এদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের তৎপরতা বেড়ে যায়। বেলুচিস্তানের মাসতাং এলাকায় ২০১৮ সালের জুলাইয়ে বোমা হামলায় ১৪৯ জন নিহত হয়। ওই হামলার দায় স্বীকার করে আইএস। 

ইরাক ও সিরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এবং লিবিয়ায় শক্তিশালী ঘাঁটি গাড়তে না পেরে আইএস বিদেশি যোদ্ধাদের আস্থা হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে। এ কারণে আইএসে বিদেশি যোদ্ধাদের যোগ দেওয়ার পরিমাণ অনেক কমে গেছে। ফলে বাধ্য হয়েই গণমাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য আইএস বিয়েবাড়ির মতো জায়গায় নৃশংস হামলা চালানোর অপকৌশল বেছে নিয়েছে। 

আইএস বরাবরই রাজনৈতিক শূন্যতা ও অরক্ষিত পরিবেশের সুযোগ নিয়ে একেকটি এলাকায় অনুপ্রবেশ করে। সেই বিবেচনায় আফগানিস্তান তাদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। দুই বছর আগে ইরাকের মসুল পতনের পর সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসা কয়েকজন তরুণ আইএস সদস্যের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তাঁদের প্রায় সবার কথায় একটি অভিন্ন ভাষ্য পেয়েছি। সেই ভাষ্য হলো, বয়সে তরুণ যোদ্ধারা যখন শাসনক্ষমতার খুব কাছে যাওয়ার সুযোগ পায়, তাদের সিদ্ধান্ত যখন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়, তখন তারা আইএসে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে। একেকটি শহর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় অল্পসংখ্যক তরুণকে। এই শাসনক্ষমতার লোভ দেখিয়ে আফগানিস্তানেও তরুণদের আইএস দলে ভেড়াচ্ছে। 

আফগানিস্তানে এখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। চলমান শান্তি আলোচনা অনেকের মনে আশা জাগাতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা হলো দেশটিতে তালেবান ও আইএসের হামলা বন্ধ হবে না। সেখানকার পরিস্থিতি এতটাই অবনতির দিকে গেছে যে ভবিষ্যতে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে কি না, সেটি এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। একদিকে তালেবান রাজনৈতিক আলোচনা চালাচ্ছে, অন্যদিকে তারা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আলোচনার মধ্যে আইএস যেহেতু অন্তর্ভুক্ত হয়নি, সেহেতু তারা ‘জিহাদ’কেই আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের একমাত্র পন্থা হিসেবে মনে করছে। 

তালেবানের নিচের সারির অনেক তরুণ যোদ্ধা মনে করছে, তাদের নেতারা শান্তি আলোচনায় অংশ নিয়ে ভুল করেছেন। নেতাদের সঙ্গে মতাদর্শগত অমিল থাকার কারণে তাদের অনেকেই তালেবান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এই যোদ্ধাদের আইএস নিজেদের দলে ভিড়িয়ে ফেলছে। 

আইএস মনে করছে, তালেবানের তরুণ যোদ্ধাদের যত দ্রুত দলে ভেড়ানো যাবে, তত তাড়াতাড়ি আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া আমেরিকা এই অঞ্চল থেকে সামরিক তৎপরতা কমিয়ে দেওয়ার কারণেও তারা মারমুখী হয়ে উঠেছে। 

ডন পত্রিকা থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিত

আর্সলা জাওয়াইদ পাকিস্তানের লেখক ও সাংবাদিক