'বড়কুঠি'তে বিয়ের অনুষ্ঠান!

রাজশাহী নগরের সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপনা ও দেশের অন্যতম পুরাকীর্তি বড়কুঠি ভবনে লোকজনের বসবাস এবং কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করার খবরটি আমাদের ব্যথিত করেছে। 

অষ্টাদশ শতাব্দীতে বাণিজ্য উপলক্ষে বাংলায় এসে ডাচরা রাজশাহীর পদ্মার তীরে নির্মাণ করেছিল বড়কুঠি ভবন। ওই শতকের মাঝামাঝি কোনো একসময় তারা এটি নির্মাণ করে। ব্যবসায়ীদের কাছে এটা ‘ডাচ ফ্যাক্টরি’ হিসেবে পরিচিত ছিল। এই স্থাপনাকে কেন্দ্র করেই কার্যত রাজশাহী শহর গড়ে ওঠে এবং বিস্তৃতি লাভ করে। এটি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন। ১৯৫৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর বড়কুঠি ভবনে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ অধিদপ্তর আইন, ১৯৭৬ অনুযায়ী সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ভবনটিকে সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করেছে। 

কিন্তু শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক খবর অনুযায়ী, এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা বড়কুঠি ভবনে বসবাস করেন। এ ছাড়া ভবনটি কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এক হাজার টাকায় ভবনটি বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। 

ঐতিহ্যবাহী একটি ভবনের এ রকম অপব্যবহার কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যে ভবনটি পুরাকীর্তি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, সেখানে কীভাবে মানুষজন বসবাস করে আর বিয়ের অনুষ্ঠানই-বা কী করে হয়? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাহলে কী করছে? ভবনটির মালিক যেহেতু এখনো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, তাদের ওপরই তো এসব অনিয়মের দায় বর্তায়। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি বড়কুঠি ভবনকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী সেখানে নোটিশও টানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভবনটিকে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়নি। 

একটি দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে প্রাচীন পুরাকীর্তি ও প্রত্নসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণে আমাদের কারও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি পর্যন্ত সবার ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মসজিদ-মন্দির-প্রাসাদসহ বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপনা ও প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরই উদাসীন থেকেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এই নির্লিপ্ততা চলতে থাকলে অযত্ন-অবহেলা আর দখল-দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়ে অদূর ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক স্থাপনাগুলো। 

দেশীয় ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এসব মহামূল্যবান প্রাচীন নিদর্শন সংরক্ষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা এসব নিদর্শন আমাদের সমৃদ্ধ অতীতের পরিচায়ক। এগুলোর বিলুপ্তির অর্থ হচ্ছে দেশের ইতিহাসকে, অতীত গৌরবকে ধ্বংস করা। দেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বড়কুঠি ভবন অবিলম্বে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিক এবং যথাযথভাবে এর সংরক্ষণ করুক।