মার্কিন বাহিনীর সহযোগী আফগানরা মহাবিপদে

আফগানিস্তানে তালেবান আবার শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
আফগানিস্তানে তালেবান আবার শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

তালেবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যখন দেনদরবার করছে এবং আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা সরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে, তখন সবার মনেই একটি বিরাট প্রশ্ন এসে হাজির হচ্ছে। প্রশ্নটি হলো: মার্কিন মিশনে যেসব আফগান মিত্র আমাদের সহায়তা করেছিলেন এবং এখনো 

করছেন, আমরা সেখান থেকে সরে আসার পর তাদের কী হবে? 

আমি যখন আফগানিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্বরত ছিলাম, তখন কাবুলে আমাদের দূতাবাস কয়েক শ আফগান কর্মীর ওপর দারুণভাবে নির্ভরশীল ছিল। ওই আফগান কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন তাঁদের দেশের এবং আমাদের জন্য বহু কাজ করেছেন। 

ঠিক একইভাবে সেখানে নিযুক্ত মার্কিন সেনা এবং বিদেশি ত্রাণকর্মীরাও স্থানীয় আফগান দোভাষী, সাংস্কৃতিক পরামর্শক, নিরাপত্তাকর্মী ও রক্ষণাবেক্ষণকর্মীদের ওপর নির্ভর করতেন। মার্কিন মিশনকে সহায়তা দেওয়ার কারণে আমাদের এই বিশ্বস্ত মিত্রদের প্রতিনিয়ত আমেরিকাবিরোধী বাহিনী, বিশেষ করে তালেবানের হুমকি মোকাবিলা করতে হতো। তালেবান যোদ্ধারা আমাদের বহু আফগান মিত্রকে এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। 

এই আফগান পার্টনারদের যুক্তরাষ্ট্রে স্পেশাল ইমিগ্রান্ট ভিসার (এসআইভিএস) আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবেই এই সুযোগ রাখা হয়েছে। আফগানিস্তানের মধ্য থেকে যাঁরা আবেদন করে ভিসা প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই ভয়ানক অবস্থায় রয়েছেন। অন্যরা হয় পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে পালিয়ে গেছেন বা নির্বাসনে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত সেনা প্রত্যাহার কার্যক্রম কার্যকর হওয়া মানে আমাদের আফগান পার্টনারদের মধ্যে যাঁরা ভিসা পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন, তাঁরা আর ভিসা পাবেন না। এ ছাড়া সুরক্ষিত মার্কিন ঘাঁটিতে যাঁরা নিরাপদে থাকতে পারছেন, সেই সুযোগও আর তাঁদের থাকবে না। তালেবান তাঁদের বিশ্বাসঘাতক ও দেশদ্রোহী মনে করে। যেসব আফগান দোভাষী মার্কিন সেনাদের সহায়তা করে এসেছেন, তাঁরাই তালেবানের প্রধান লক্ষ্য হয়ে আছেন। সুতরাং সুযোগ পেলেই তালেবান তাঁদের মেরে ফেলবে। 

এখন যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সরে আসার পরিকল্পনা করছে, সেহেতু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মার্কিন বাহিনীর স্বার্থ রক্ষাকারী আফগান পার্টনারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিও সেই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মার্কিন উপস্থিতি কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে আফগানিস্তানে মার্কিন দূতাবাসের লোকবলও কমে আসবে। এতে ভিসা প্রসেস করার বিষয়টি আরও সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়াবে। এই ভিসা পেতে সেখানকার অনেকেরই আবেদন করার পর চার বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। কংগ্রেসে ভিসা আবেদনের বিষয়টি ৯ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার আইন পাস হয়েছে। আফগান মিত্রদের ক্ষেত্রে এই আইন কড়াকড়িভাবে মানা দরকার। 

ভিয়েতনাম থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময় যুক্তরাষ্ট্র যে ভুল করেছিল, সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি হলে চলবে না। যে ভিয়েতনামি পার্টনারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ রেখে মার্কিন কর্মকর্তারা কাজ করেছিলেন, তাঁদের তাঁরা অরক্ষিতভাবে ফেলে এসেছিলেন। সেই মিত্রদের শত্রুপক্ষ কচুকাটা করেছিল। অনেকে দেশ থেকে পাশের দেশে পালিয়ে কোনোরকমে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। সায়গন (হো চি মিন সিটি) থেকে মার্কিন বাহিনী যখন হেলিকপ্টারে করে চলে যাচ্ছিল, তখন মার্কিনবিরোধীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ভিয়েতনামি পার্টনাররা কীভাবে সেই হেলিকপ্টারে ওঠার চেষ্টা করছিলেন, সেই ভয়াবহ দৃশ্য কে ভুলতে পারবে? 

আফগানিস্তানে এখন অবস্থা খুবই নাজুক। তালেবান আবার সেখানে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আফগান মিত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই হবে। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে অভিযান চালানোর সময় যে আফগান মিত্রদের আমরা পাশে পেয়েছিলাম, তাঁদের যাতে দ্রুত ভিসা দেওয়া হয় কিংবা অন্য কোনোভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, তার জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কেও জোরদার সুপারিশ করতে হবে। 

আমাদের আফগান মিত্ররা আমাদের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। অনেকে প্রাণও দিয়েছেন। আমাদের সহায়তা করার জন্য অনেকের নিরপরাধ আত্মীয়স্বজনকেও জীবন দিতে হয়েছে। এই অতীতকে মাথায় রেখে হলেও আফগানিস্তান থেকে সরে আসার পরিকল্পনায় তাঁদের নিরাপত্তাকে অন্তর্ভুক্ত না করলে ভবিষ্যতে অন্য কোনো দেশে আমাদের স্থানীয় মিত্র পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। 

ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিত

রায়ান ক্রোকার আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত (২০১১-১২)