মাদ্রাসা সুপারের কাণ্ড

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া মাহিরুন নেছা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গত ২৮ আগস্ট তাঁর মাদ্রাসার দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে লিখিত ছাড়পত্র দিয়ে বহিষ্কার করেছেন। বহিষ্কারের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি ছাড়পত্রে লিখেছেন, ওই ছাত্রী ২০১৮ সালে মাদ্রাসা ‘কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে এবং তার অভিভাবকগণের সম্মতিক্রমে বাল্যবিবাহে আবদ্ধ হয়, যা সরকারি আইনের পরিপন্থী। অতঃপর জানা যায় যে সে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে না জানিয়ে গত ১৬-০২-২০১৯ ইং তারিখ সুপারের অনুমতি ছাড়া পুনরায় ভর্তি হয়।’

তারপর সুপার ছাত্রীটিকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘আমার জানামতে তার চরিত্র ভালো না থাকার কারণে এবং মাদ্রাসার মান অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে তাকে ছাড়পত্র প্রদান করা হলো।’

কথিত বাল্যবিবাহ করা এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে একজন ছাত্রীর চরিত্র বিচার করা এবং সেই চরিত্র ভালো নয় বলে রায় দিয়ে তাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করার ঘটনা বিস্ময়কর বটে। তবে ওই ছাত্রীর পরিবার সূত্রে আমরা যা জানতে পেরেছি, তা আরও বিস্ময়কর। ৫১ বছর বয়সী একজন শিক্ষক, যিনি মাদ্রাসার সুপারের দায়িত্ব পালন করছেন এবং ছাত্রীদের চরিত্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছেন, তিনি তাঁরই প্রতিষ্ঠানের ওই ছাত্রীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তাকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করেছেন চরিত্রের দোহাই দিয়ে! সে ছাত্রীর বয়স ১৮ বছর পেরোয়নি। এর চেয়েও ন্যক্কারজনক ঘটনা হলো, ওই ছাত্রীর বিয়ে হয়েছিল ওই মাদ্রাসা সুপারেরই এক ভাতিজার সঙ্গে!

মাদ্রাসা সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ছাড়পত্রে লিখেছেন, ওই ছাত্রী তাঁর অনুমতি ছাড়াই ওই মাদ্রাসায় আবার ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু এই অভিযোগ যে সত্য হতে পারে না, তা বলাই বাহুল্য। কারণ,মাদ্রাসার প্রধান পদাধিকারী সুপারেরঅনুমতি ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তি সম্ভব নয়। উপরন্তু ওই ছাত্রী সুপারের চোখের সামনেই মাদ্রাসায় যাওয়া-আসা করছিল এবং এ পর্যায়েই সুপার তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ছাত্রীর পরিবার তাঁর প্রস্তাবে রাজি হয়নি বলেই ছাত্রীটিকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করে তার চরিত্র সম্পর্কে কুৎসা রটানো হচ্ছে। শুধু তা–ই নয়, এ ঘটনায় মাদ্রাসাটির কিছু শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী মাদ্রাসা সুপারের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করলে সুপার তাঁর পক্ষে কিছু শিক্ষার্থীকে দিয়ে মানববন্ধন করিয়েছেন। ফলে ওই মাদ্রাসায় পড়াশোনার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে, সব শিক্ষার্থীর ক্ষতি হচ্ছে।

সাম্প্রতিক কালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা নিজের শিক্ষকদের দ্বারা নানা রকমের যৌন হয়রানি, নির্যাতন, এমনকি সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয়। ফরিদপুরের ওই মাদ্রাসাছাত্রীর মা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে মাদ্রাসা সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আমরা আশা করব, অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ধরনের ব্যক্তিদের, বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দূরে রাখা উচিত।