যশোরে গৃহবধূ ধর্ষণ

শিশুরা পুলিশ সাজতে ভালোবাসে। পুলিশও মাঝেমধ্যে শিশুর অভিনয় করতে ভালোবাসে। অন্তত যশোরের শার্শা থানার পুলিশের আচরণে এমনটিই 

প্রতিভাত হচ্ছে। পত্রিকান্তরে জানা যাচ্ছে, ২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে এক গৃহবধূ থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন, ওই থানার এসআই খায়রুল আলম ও তাঁর তথ্যদাতা (সোর্স) কামারুলসহ চারজন তাঁর বাড়িতে যায়। এসআই খায়রুল ও কামারুল তাঁকে ধর্ষণ করেন, অপর দুজন ধর্ষণে সহযোগিতা করেন। পরে দেখা গেছে, এসআই খায়রুলকে আসামি না করেই মামলা নেয় পুলিশ। শিশুর সারল্যে পুলিশ বলেছে, ওই নারী খায়রুলকে শনাক্ত করেননি। তাই মামলা থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে মামলা হওয়ার পর ওই নারী বলেছেন, খায়রুলকে পুলিশের পোশাক পরিয়ে সামনে আনা হয়েছিল এবং খায়রুল তাঁর দিকে এমনভাবে তাকিয়েছিলেন যে তিনি জীবনহানির ভয় পেয়ে খায়রুলকে না চেনার ভান করেছিলেন। 

আইনের মারপ্যাঁচের দিক থেকে দেখলে, খায়রুলকে বাদ দেওয়ার জন্য পুলিশকে দোষারোপ করার সুযোগ খুবই কম। শার্শা থানার ওসি এম মশিউর রহমান বলেছেন, ওই গৃহবধূ বলেছিলেন, খায়রুলকে তিনি চিনতে পারছেন না। এ কারণেই তাঁকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। একজনকে অজ্ঞাত পরিচয়ধারী আসামি রাখা হয়েছে। তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চতুর্থজনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার ‘ঝামেলায়’ যায়নি পুলিশ। তবে পুলিশ বলেছে, তদন্ত করে যদি খায়রুলের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলেই তাঁকে আসামি করা হবে। তবে গোড়াতেই পুলিশের যে ভূমিকা দেখা গেছে, তাতে খায়রুলের সম্পৃক্ততা পাওয়ার আশা খুবই কম। 

যখন স্বয়ং ওসি বলেন, এসআই খায়রুলকে তো ওই গৃহবধূ চেনেননি, তখন সবার মনে হওয়ার কথা, সত্যিই তো, না চিনলে আসামি করা যাবে কী করে? তাঁর কথায় যে কারও মনে হবে, পুলিশকে সব বুঝিয়ে না দিলে, আসামিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে না দিলে তাদের কিছুই করার থাকে না। তাঁর কথার মর্মার্থ দাঁড়াচ্ছে, শিশুকে যেভাবে বিশদে বুঝিয়ে দিতে হয়, সেইভাবে পুলিশকেও বুঝিয়ে বলতে হবে যে পুলিশের কোন সদস্য কখন, কোথায়, কোন অপকর্ম করেছেন। না হলে অবোধ পুলিশ জানবে কী করে? করবেই–বা কী? বাস্তবতা হলো, পুলিশের বিরুদ্ধে নালিশ লেখাতে থানায় যাওয়া মানে অনেকটা প্রাণ হাতে করেই থানায় যাওয়ার মতো। এসব জেনে–বুঝেও মুখ খুলে বলতে হবে। 

গৃহবধূর বাড়িতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিনিধিরা যাওয়ার পর ওসি এম মশিউর রহমান যা বলেছেন, সেটিকে রাজনৈতিক বক্তৃতা বলা যেতে পারে। তিনি বলেছেন, বিএনপির নেতারা টাকাপয়সা দিয়ে ওই নারীকে দিয়ে এসব অভিযোগ তোলাচ্ছেন বলে তাঁর মনে হচ্ছে। এই ধরনের স্থূল গতানুগতিক রাজনৈতিক ভাষ্যনির্ভর পক্ষপাতমূলক অবস্থান থেকে পুলিশকে সরে আসতেই হবে। নইলে পুলিশ বিভাগের ক্ষতি। সাধারণ মানুষের ক্ষতি।