শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে আঘাত

২০১০ সালের ৯ আগস্ট সরকার একটি পরিপত্র জারি করে। ওই পরিপত্রে দেশের সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞাকে যে অনেকেই তোয়াক্কা করছেন না, বিভিন্ন ঘটনায় তা আমরা টের পাই। গত মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি খবর বিষয়টির ভয়াবহতাকে তুলে ধরেছে।

খবর অনুযায়ী, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে সহপাঠীদের সঙ্গে গল্পগুজব করার অপরাধে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী হাবিবা আক্তারের দিকে বেত ছুড়ে মারেন। বেত হাবিবার বাঁ চোখে গিয়ে আঘাত করে এবং চোখ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চোখ পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চোখটি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। শিক্ষার্থীর সঙ্গে একজন শিক্ষকের এ কেমন আচরণ! সহপাঠীদের সঙ্গে গল্প করা অপরাধ নয়। বরং এভাবে বেত ছুড়ে মেরে ওই শিক্ষকই গর্হিত অপরাধ করেছেন। হাবিবার যে ক্ষতি তিনি করেছেন, তা তো কোনো কিছুর বিনিময়ে পূরণ হওয়ার নয়।

তবে শুধু যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই নয়, দেশের আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায়ই শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। পত্রপত্রিকায় যখন এ ধরনের কিছু খবর আসে, তখন আমরা তা জানতে পারি, কিন্তু সব ঘটনা বা খবরই সংবাদমাধ্যমে আসে না। এসব ঘটনায় শিক্ষকদের শাস্তি পাওয়ার বিষয়টি শোনা যায় না। শাস্তি হিসেবে বড়জোর তাঁদের বরখাস্ত করা হয়।

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি বন্ধ না হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া বা অনেক শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়বিমুখ হওয়ার পেছনে শিক্ষার্থীদের ওপর শিক্ষকদের নির্যাতনের ভূমিকা রয়েছে। শাস্তির নামে শিক্ষার্থীদের পেটানো, আঙুলের ফাঁকে কলম বা পেনসিল রেখে জোরে চাপ দেওয়া, টেবিলের নিচে মাথা দিয়ে রাখা, শ্রেণিকক্ষের বাইরে রোদের মধ্যে কান ধরে এক পায়ে দাঁড় করিয়ে রাখা, মাথা দিয়ে দেয়ালে আঘাত করাসহ নানা ধরনের নির্যাতন এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ঘটে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। গালিগালাজের মাধ্যমে মানসিক নির্যাতনও করা হয়।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজন শিক্ষার সুষ্ঠু, সুন্দর ও ভয়হীন পরিবেশ। শাস্তি শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির বাইরেও শিক্ষার্থীকে হীন করে গড়ে তোলে, ফলে তারা মনোবল হারিয়ে ফেলে। শারীরিক শাস্তিতে শিক্ষার্থীর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করা সম্ভব হয় না।

বোঝা যাচ্ছে, শিশুদের শারীরিক শাস্তি বন্ধ করতে এসব সরকারি পরিপত্র জারি করাই যথেষ্ট নয়। এ জন্য প্রয়োজন বিশেষ আইন, যে আইনে শিক্ষার্থীদের শাস্তি প্রদানকারী শিক্ষকদের পার পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।