রাজউকের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা

রাজধানী ঢাকার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের পেছনে একসময় বেশ বড় এক জলাশয় ছিল। রমনা এলাকায় এখন যেখানে মৎস্য ভবন, সেখান থেকে সেগুনবাগিচা খাল গিয়ে মিলেছিল সেই জলাভূমির সঙ্গে। বক্স কালভার্ট নির্মাণ করতে গিয়ে সেগুনবাগিচা খালটি বুজে দেওয়া হয়, তার ওপর নির্মাণ করা হয় সড়ক। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের পেছনের জলাভূমিরও কিছু অংশ ভরাট করে ফেলা হয়। তবে তারও আগে, আশির দশকেই শুরু হয় ১৭ একর আয়তনের সেই সুন্দর জলাভূমি ভরাট করার কাজ। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি নাগাদ নগরবাসী দেখতে পায় এক বালুর মাঠ।

ঢাকা একসময় ছিল খাল–ঝিলের শহর। পানিনিষ্কাশনের এই প্রাকৃতিক পথগুলো ছিল বলে অতীতে বর্ষা মৌসুমে এই শহর জলাবদ্ধতার শিকার হতো না। অপরিকল্পিত নগরায়ণের প্রক্রিয়ায় বহু বছর ধরে ভরাট করা হয়েছে সেই খাল–ঝিল। এখন বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন সরকারি কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তে নানা প্রকল্পের নামে ভরাট করা খাল–ঝিলগুলোর সব জায়গার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের পেছনের ১৭ একরের বালুর মাঠটি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ওই মাঠের ১০ একর জায়গাজুড়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে আড়াই শতাধিক মোটর গ্যারেজসহ নানা ধরনের স্থাপনা। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের যানবাহন পার্ক করে রাখা হয় বিভিন্ন অংশে। বিভিন্ন বেসরকারি পরিবহন কোম্পানির দূরপাল্লার বাস ঘোরানোর কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে ওই জায়গা। গড়ে উঠেছে কমিউনিটি সেন্টার, অবৈধ বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদি।

রাজউক বলে আসছে, ওই ১০ একর জায়গায় গড়ে ওঠা সব স্থাপনা অবৈধ। কিন্তু মোটরযান মেরামত ও খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রির ব্যবসা করছেন যেসব লোক, তাঁরাসহ সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার মালিকেরা দাবি করছেন, তাঁদের স্থাপনাগুলো বৈধ, তাঁরা সেখানে ব্যবসা করছেনও বৈধভাবেই, কারণ তাঁদের ট্রেড লাইসেন্স আছে ইত্যাদি। কিন্তু তাঁরা যে অবৈধ জবরদখলকারী, এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। রাজউকও সেটাই দাবি করে আসছে। কিন্তু অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে জায়গা উদ্ধার করা এবং তা কাজে লাগানোর ব্যাপারে রাজউকের কোনো সক্রিয় উদ্যোগ নেই। সম্প্রতি রাজউকের বোর্ড সদস্য (সম্পত্তি) প্রথম আলোকে বলেছেন, জায়গাটি উদ্ধার করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু রাজউকের অন্য একটি সূত্র বলেছে, এই ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতা আছে, তা নিষ্পত্তি না করা পর্যন্ত জায়গা উদ্ধার করা কঠিন হবে।

সরকারি জায়গাজমি বেদখল হয়ে যাওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর অবহেলাই প্রধানত দায়ী। রাজউকের ওই জায়গায় অবৈধ স্থাপনাগুলো স্বল্প সময়ে গড়ে ওঠেনি, দীর্ঘ সময় ধরে তা ঘটেছে। এ জন্য রাজউক দায় এড়াতে পারে না। এখন যত দ্রুত সম্ভব আইনি জটিলতা দূর করে জায়গাটি পুনরুদ্ধার করা হোক।