জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সরকারপন্থী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার ঘটনায় প্রতীয়মান হচ্ছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের ছাত্রসংগঠনের ভাবমূর্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছে। গত শনিবার দলটির কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার পরেই তাঁদের ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়ার সংবাদ প্রচারিত হলো।

ছাত্রলীগের এই দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজ থেকে চাঁদা দাবি, টাকার বিনিময়ে সংগঠনের কমিটিতে পদ দেওয়া, ক্ষমতার অবৈধ প্রয়োগসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন, এই দুই ছাত্রনেতা বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছিলেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

যা-ই হোক, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তাঁদের ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্ন সামনে চলে আসে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বানীর বহাল থাকার কোনো সুযোগ আছে কি না। নৈতিক স্খলনের দায়ে যদি তাঁর ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্ব চলে যায়, তাহলে একই কারণে তাঁর ডাকসুর সাধারণ সম্পাদকের পদে বহাল থাকার সুযোগও থাকা উচিত নয়। আইনি প্রশ্নের বাইরে নৈতিকতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বানীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, তাঁদের কাছেও তাঁর জবাবদিহির বিষয় রয়েছে। 

অন্যদিকে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চাঁদা দাবির যে অভিযোগ করেছেন, সেই পরিপ্রেক্ষিতে দুই নেতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন, তাঁরা ঠিকাদারদের কাছে চাঁদা দাবি করেননি, কিন্তু ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখাকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য এ অভিযোগকে ‘মিথ্যা গল্প’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য তাঁদের প্রতি পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। ছাত্রলীগের বাদ পড়া সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীও উপাচার্যের বিরুদ্ধে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষা তথা উপাচার্য এবং ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের মধ্যে অনৈতিক চর্চার অভিযোগে এই পাল্টাপাল্টি চ্যালেঞ্জ ছোড়াছুড়ি যারপরনাই লজ্জাজনক বিষয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসমাজে এ নিয়ে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তরফ থেকেও উপাচার্য ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে এসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দৈনন্দিন বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বিষয়টির সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হওয়া একান্ত জরুরি। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ থেকে তাঁর সদিচ্ছার বিষয়টি অনুমেয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্ব দাবি করে। কারণ, যে প্রতিষ্ঠানে বিদ্যা ও জ্ঞানের অনুশীলন হয়, যার দায়িত্ব সুনাগরিক গড়ে তোলা, সেখানে নৈতিকতা স্খলনের অভিযোগ উঠলেই হতাশার কারণ ঘটে। সুতরাং এই অভিযোগের সুরাহা করা একান্ত জরুরি। এসব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষকদের যে অংশের মধ্যে প্রকৃত শিক্ষকসুলভ মানসিকতা রয়েছে, তাঁদেরও যথেষ্ট হতাশার কারণ ঘটছে। সুতরাং সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টির দ্রুত সুরাহার পদক্ষেপ নেওয়া হোক।