জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের শাস্তি লঘু আর বাইরে হলে গুরু, এই প্রশ্নই তুলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পয়লা বৈশাখ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এক আদিবাসী ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন করেন ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা-কর্মী। নিপীড়নের শিকার ছাত্রীটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে ছাত্রলীগ থেকে তাঁদের বহিষ্কার করা হলেও একাডেমিক ও আইনি কোনো ব্যবস্থাই এ অবধি নেওয়া হয়নি। অভিযোগ প্রমাণসাপেক্ষে তাঁদের আইনানুগ শাস্তি হওয়া দরকার।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির বিহিতের ব্যবস্থা হিসেবে জাবিতে একটি যৌন নিপীড়নবিরোধী অভিযোগ সেল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনাও খুবই কার্যকর হয়। কিন্তু পয়লা বৈশাখের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চের ব্যানার থেকে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের বদলে নিপীড়িতকেই বরং হয়রানি করা হচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগের।
দ্বিতীয়ত, দেখা যায় ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কারও বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ উঠলে বড়জোর তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। যেখানে সাধারণ আদালতেই যৌন নিপীড়কের গুরুতর শাস্তি দেওয়া হয়, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে নিপীড়কেরা প্রায়ই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ছত্রচ্ছায়ায় পার পেয়ে যান। এ পরিপ্রেক্ষিতে বারবারই মানবাধিকার সংগঠন থেকে শুরু করে নাগরিক ও বিদ্যায়তনিক মহল থেকে দাবি উঠেছে যে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলে অপরাধীর
বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেই মামলা পরিচালনা করা হোক। দ্বিতীয়ত, যতক্ষণ না নির্দোষ প্রমাণিত হয় ততক্ষণ পর্যন্ত অভিযুক্তকে একাডেমিক কার্যক্রমের বাইরে রাখা হোক।
ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্বিবদ্যালয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, শৃঙ্খলা ও পরিবেশ সুষ্ঠু রাখায় নিয়োজিত প্রক্টররা নিদারুণভাবে দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। তাঁদের ব্যাপারেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া বাঞ্ছনীয়। যৌন নিপীড়ন যেভাবে সর্বক্ষেত্রে ভয়াবহ আকার নিয়ে ফেলেছে, নারীর নিরাপত্তার স্বার্থেই তাই আইনের কঠোর প্রয়োগ করার বিকল্প নেই। আর শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হিসেবে উপাচার্য বা প্রক্টর যদি দায়িত্বে অবহেলা করেন, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।