মোংলা বন্দরের জরাজীর্ণ ভবন

সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের শ্রমিকদের জন্য নির্মিত বেশ কিছু ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ার খবরটি আমাদের ব্যথিত ও বিস্মিত করেছে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, অথচ কারও কোনো বিকার নেই। 

শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের আবাসন সমস্যা দূর করার জন্য ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৭৫টি পাকা ও আধা পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। এসব ভবনে দেশের বিভিন্ন এলাকার ১ হাজার ৭৫৮ জন নিবন্ধিত ও ৮৯৬ জন অনিবন্ধিত শ্রমিক ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাস করছিলেন। ভবনগুলো ২০০৮ সাল পর্যন্ত ডক শ্রমিক পরিচালনা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ২০০৮ সালে রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশে বোর্ড বিলুপ্ত করা হলে ভবনগুলো বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ওই অধ্যাদেশের বলে এসব শ্রমিকের নিবন্ধনও বাতিল হয়ে যায়। বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব ভবন ছেড়ে দেওয়ার জন্য শ্রমিকদের নির্দেশ দিলে তাঁরা চলে যান। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ ১১ বছরেও ভবনগুলোর কোনো সংস্কার করেনি। ফলে অধিকাংশ ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব ভবনের কোনোটির দরজা-জানালা নেই, কোনোটির দরজা ভাঙা। ছাদ ও দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। এসব ভবনে পানি ও বিদ্যুতের সংযোগও নেই। ভবনগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কিছু শ্রমিক অবৈধভাবে বসবাস করছেন। এসব ভবনের দাম বর্তমানে কয়েক কোটি টাকা। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কোটি কোটি টাকার সম্পদ আজ ধ্বংস হওয়ার পথে। 

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের এ ধরনের উদাসীনতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর শ্রমিকদের কল্যাণের বিষয়টি তাদের বিবেচনার মধ্যে না থাকার বিষয়টিও হতাশাজনক। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের পেছনে শ্রমিকদের ভূমিকার বিষয়টি অনস্বীকার্য। তাঁদের শ্রমের ঘামেই এক অর্থে প্রতিষ্ঠান টিকে থাকে। কিন্তু এই শ্রমিকদের যখন অবহেলা করা হয়, তখন তা মেনে নেওয়া যায় না। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই বন্দরকে কেন্দ্র করে দেশের অর্থনীতির বড় একটি অংশের গতি আবর্তিত হয়। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের দ্বিতীয় কেন্দ্র ও রাজস্ব জোগানদাতা মোংলা বন্দর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। এমন একটি সমুদ্রবন্দরের কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তাদের শ্রমিকদের কল্যাণের বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। 

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত আবাসনের ব্যবস্থা করা। আর এ জন্য তাদের উচিত দ্রুত ওই সব জরাজীর্ণ ভবন সংস্কার করা এবং সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা। শ্রমিকেরাই বন্দরের প্রাণ। তাই তাঁদের সর্বোত্তম কল্যাণসাধনই বন্দর কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য হওয়া উচিত।