শেরপুরের নতুন হাসপাতাল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধন ঘোষণার দীর্ঘ ১০ মাস পরও একটি হাসপাতালের চালু না হওয়া পরিতাপের বিষয়। জনস্বাস্থ্যসেবাকে জিম্মি করে স্বাস্থ্য ও গণপূর্ত বিভাগের মধ্যে রশি টানাটানি বন্ধ হোক। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, নির্মিত ভবনটিতে কিছু ত্রুটি রয়েছে। এটা ঠিক করে না দেওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে যাবে না। আমরা মনে করি, ভবনটি মাসের পর মাস অব্যবহৃত রাখার কোনো যুক্তিই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 

সংস্কার বা কোনো পরিবর্তন-পরিবর্ধনের কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা প্রশাসনিক সদিচ্ছার বিষয়। যাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করিয়ে বাহবা নিয়েছিলেন, এখন তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিজেরই উচিত হবে এ বিষয়ে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করা। যে ভবন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন, তা চালু না হওয়ার দায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থেই শেরপুর সদরে নির্মিত ২৫০ শয্যার নতুন হাসপাতালটি খাঁ খাঁ করছে। আর একই সময়ে এই ভবনের পাশেই বিদ্যমান হাসপাতালে শত শত রোগী অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে শয্যাসংকটের কারণে অনেক রোগীকে হাসপাতালের বর্তমান পুরোনো ভবনের মেঝে কিংবা বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। 

এ প্রসঙ্গে আমরা হাসপাতালের মতো অত্যধিক জনগুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর স্থাপনা নির্মাণে নীতিনির্ধারকদের অদূরদর্শিতার প্রতি নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণ করি। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় শেরপুর জেলা সদরে ১০০ শয্যার বর্তমান হাসপাতালটি তৈরি হয়েছিল। এর মাত্র তিন দশকের কম সময়ের ব্যবধানে প্রমাণিত হয় যে চিকিৎসাপ্রার্থীর তুলনায় এর শয্যাসংখ্যাসহ অবকাঠামো অপ্রতুল। কিন্তু নতুন ইমারত নির্মাণ করতে গিয়ে এবারও তারা দূরদর্শী হতে অপারগ থেকেছে বলেই প্রতীয়মান হয়। রোগীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যাধিক্য জেনেও মাত্র আড়াই শ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ নিশ্চিত করে যে জনগণের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি সরকারের অঙ্গীকার কতটা ঠুনকো ও লোকদেখানো হতে পারে। নবনির্মিত হাসপাতালটি চালু হওয়ার ঘটনা নিশ্চয় একটি অগ্রগতি। কিন্তু এর চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের শিগগির রোগীর চাপ সামলাতে গলদঘর্ম হতে হবে।

বর্তমানে হাসপাতালটিতে গড়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী ভর্তি থাকে। শয্যা ছাড়াও মেঝে, বারান্দা ও সিঁড়িসংলগ্ন স্থানে রোগীদের শয্যা পেতে চিকিৎসা নিতে হয়। শেরপুরের ১৫ লাখ অধিবাসী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ, সানন্দবাড়ী ও ইসলামপুর উপজেলা এবং কুড়িগ্রামের রাজীবপুর ও রৌমারী উপজেলার কয়েক লাখ মানুষেরও ভরসাস্থল শেরপুরের হাসপাতাল। সুতরাং হাসপাতালটির ভৌগোলিক অবস্থান এবং চিকিৎসাপ্রার্থীদের চাহিদা বিবেচনায় যথাদূরত্বে আরও নতুন হাসপাতাল তৈরির বিষয়টি দ্রুত বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ, কয়েক বছর না ঘুরতেই যে এই নতুন হাসপাতালের মেঝেতে রোগীদের ঠাঁই নিতে হবে, সেটা সহজেই অনুমান করা চলে।