জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির চোখে বাংলাদেশ - ১

>সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটিতে (ক্যাট) বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় গত ৩০ ও ৩১ জুলাই। সেখানে গুম, আটক, হেফাজতে নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন অভিযোগ তোলে কমিটি এবং এর জবাব দেয় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। এরপর ৯ আগস্ট নিজেদের পর্যবেক্ষণ ও কিছু বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এবং সঙ্গে বিভিন্ন সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কমিটি। সেই প্রতিবেদনের ১ম পর্ব প্রকাশিত হলো আজ। ২য়, ৩য়৪র্থ পর্ব প্রকাশিত হবে কাল।

বাংলাদেশের প্রাথমিক প্রতিবেদন নিয়ে চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ, কমিটির ৬৭তম অধিবেশনে অনুমোদিত

সূচনা

বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী সনদে স্বাক্ষর করেছে। সনদের ১৯ আর্টিকেলের প্রথম প্যারাগ্রাফ অনুযায়ী, দেশটি ১৯৯৯ সালের ৪ নভেম্বরের মধ্যে তার প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করতে নীতিগতভাবে বাধ্য ছিল। ২০০০-১৮ সাল পর্যন্ত যেসব রাষ্ট্রপক্ষ তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়নি, সেসব রাষ্ট্রপক্ষের তালিকায় ছিল বাংলাদেশ; যা কমিটির বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রপক্ষ ও সাধারণ পরিষদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর কমিটি এক চিঠিতে রাষ্ট্রপক্ষকে তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয় এবং প্রতিবেদন ছাড়াই কমিটি তার পর্যালোচনার কাজ এগিয়ে নিতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ বাংলাদেশ কমিটিকে জানায়, দেশটি তার প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করবে ও পাঠাবে। ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ কমিটির চেয়ারপারসন প্রাথমিক প্রতিবেদন বিবেচনা করার তারিখের বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। দেশটির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ৩০ ও ৩১ জুলাই গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। দেশটির প্রাথমিক প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ২৩ জুলাই ২০১৯ গ্রহণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ তার প্রাথমিক প্রতিবেদন ২০ বছর পর জমা ও প্রতিবেদনটি বিবেচনা করার মাত্র এক সপ্তাহ আগে তা গৃহীত হওয়ায় কমিটি দুঃখ প্রকাশ করে। তবে দেশটির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা এবং কমিটির সভায় বিভিন্ন জিজ্ঞাসার মৌখিক ও লিখিত জবাব দেওয়াকে স্বাগত জানায় কমিটি।

ইতিবাচক বিষয়সমূহ

আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক নিম্নলিখিত সনদ ও প্রটোকলগুলো রাষ্ট্রপক্ষের স্বাক্ষর এবং অনুমোদন করার বিষয়টিকে কমিটি স্বাগত জানায়:

ক. ১৯৯৮ সালে, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ;

খ. ১৯৯৮ সালে, গণহত্যার অপরাধ প্রতিরোধ ও সাজাবিষয়ক সনদ;

গ. ১৯৯৮ সালে, বিবাহের ক্ষেত্রে অনুমতি, বিবাহের ন্যূনতম বয়স ও বিবাহ নিবন্ধনবিষয়ক ১৯৬২ সালের সনদ;

ঘ. ২০০০ সালে, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ;

ঙ. ২০০০ সালে, নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য অবসান সনদের ঐচ্ছিক প্রটোকল;

চ. ২০০০ সালে, শিশুদের বিক্রির ওপর শিশুর অধিকার, শিশু পতিতাবৃত্তি ও শিশু পর্নোগ্রাফি বিষয়ক সনদের ঐচ্ছিক প্রটোকল;

ছ. ২০০০ সালে, সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের যুক্ত করা নিয়ে শিশু অধিকারবিষয়ক সনদের ঐচ্ছিক প্রটোকল;

জ. ২০০৭ সালে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারবিষয়ক সনদ;

ঝ. ২০০৮ সালে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারবিষয়ক সনদের ঐচ্ছিক প্রটোকল;

ঞ. ২০১০ সালে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতবিষয়ক রোম বিধি;

ট. ২০১১ সালে, সব অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার সুরক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ;

নিম্নলিখিত আইনগুলো অনুমোদন করা ছাড়াও সনদের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রগুলোতে নিজস্ব আইন পর্যালোচনায় রাষ্ট্রপক্ষের উদ্যোগকে স্বাগত জানায় কমিটি: 

ক. ২০০০ সালের নারী ও শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ আইন;

খ. ২০০০ সালের লিগ্যাল এইড সার্ভিস অ্যাক্ট (আইনি সহায়তা সেবা আইন);

গ. ২০১০ সালের পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন;

ঘ. ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন;

ঙ. ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (প্রতিরোধ) আইন;

চ. ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন;

ছ. ২০১৩ সালের শিশুদের ওপর যেকোনো ধরনের শারীরিক নির্যাতনে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণবিষয়ক শিশু আইনে সংশোধনী;

জ. ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইন।

সনদ কার্যকর করতে রাষ্ট্রপক্ষের নীতিমালা, কর্মসূচি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপে সংশোধনীর উদ্যোগ স্বাগত জানায় কমিটি; যার মধ্যে রয়েছে:

ক. ২০০৮ সালে নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন; নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ করা বহুপক্ষীয় কর্মসূচি (মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম অন ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন/ এমএসপিভিএডব্লিউ); এবং ৫৯১৬ নম্বর রিট আবেদনে কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীদের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সুরক্ষা পদক্ষেপসংবলিত নির্দেশনার উল্লেখ;

খ. ২০০৯ সালে, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠন;

গ. ২০১০ সালে, ৫৬৮৪ নম্বর রিট আবেদনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব ধরনের শারীরিক শাস্তি বন্ধে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা;

ঘ. ২০১৬ সালে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার, আটক, রিমান্ড ও গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ অনুসরণ বিষয়ে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়া ১৫টি নির্দেশনা; এবং গ্রেপ্তার, আটক, তদন্ত ও অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রতি আচরণ বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা;

ঙ. প্রধান উদ্বেগের বিষয়সমূহ ও সুপারিশমালা