ভবনে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

আমরা সবাই জানি পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকাই কঠিন। পানি পান করা ছাড়াও আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজে পানির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু দেখা যায়, নানাভাবে পানির অপচয় হচ্ছে। মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের কারণে দেশে নদ-নদীসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ের অস্তিত্ব ক্রমেই বিপন্ন হচ্ছে। ভূগর্ভের পানির স্তর প্রতিনিয়তই নিচে নামছে। এটা আমাদের জন্য অশনিসংকেত। পানির এই গুরুত্ব বিবেচনা করে সব সরকারি ভবনে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারের জন্য ২০০০ সালের ১০ আগস্ট একটি আদেশ জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এতে বলা হয়, সরকারি খাতে নির্মিত ভবনের নকশা এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে, যাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু নির্দেশ না মানাটা যেন আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ১৯ বছর পার হলেও এই নির্দেশ কেউ মানেনি।

শনিবার প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি ভবনে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ওই নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এবং অগ্নিনির্বাপণ সহজ করার লক্ষ্যে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এটি যথাযথভাবে পালনের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধও করা হয়। কিন্তু নির্দেশ মানা দূরের কথা, যাদের এই নির্দেশ পালন করার কথা, সেই গণপূর্ত অধিদপ্তর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), হাউস বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই) এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর জানেই না যে এ রকম একটি নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। এসব সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, এমন কোনো নির্দেশনার কথা এত দিন তাঁদের জানা ছিল না। তাঁদের এই বক্তব্য খুবই হতাশাজনক।

আমাদের দেশে বিশুদ্ধ পানি দিন দিন দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। এখানে বিশুদ্ধ পানির প্রধান উৎস ভূগর্ভস্থ পানি। কিন্তু এই পানিও এখন আর নিরাপদ নয়। ভূগর্ভের পানিতে একদিকে রয়েছে আর্সেনিকের আগ্রাসন, অপরদিকে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্ন অঞ্চলে নলকূপে পানি ওঠে না। এই অবস্থায় বিশুদ্ধ পানির জন্য বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। কিন্তু এটা যদি ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো না বোঝে, তা হলে তা দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক।

 ভবিষ্যতে পানির সংকট মোকাবিলা করতে আমাদের এখন থেকেই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু সরকারি ভবন নয়, বেসরকারি ভবনগুলোতেও এই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উপায় রাখতে হবে। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের খসড়ায় ভবনে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এই বিধান অনুযায়ী বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা রেখে ভবনের নকশা করতে হবে। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এই বিধান যাতে মেনে চলা হয়, সে জন্য আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।