বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে অজুহাত দেখিয়ে ১৪ জন শিক্ষার্থীর প্রতি কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেছে, সেটি কেবল অনভিপ্রেত ও অযৌক্তিক নয়, সম্পূর্ণ এখতিয়ারবহির্ভূত। এই শিক্ষার্থীরা কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করে কোনো অন্যায় করেননি। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, এমন প্রমাণও কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের বিষয় এবং তাঁরা কর্মসূচিটি পালন করেছেন ক্যাম্পাসের ফটকের বাইরের সড়কে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক। তাঁদের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি আছে। কৃষক ফসল ফলিয়ে তাঁর ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষুব্ধ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতেই পারেন। এতে অন্যায়ের তো প্রশ্নই আসে না; বরং এটা শিক্ষার্থী সমাজের যথাযথ শিক্ষা ও আর্থসামাজিক বিষয়ে সচেতনতার পরিচায়ক। এভাবেই দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক সুনাগরিক গড়ে ওঠে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা গত ১৫ মে কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য চেয়ে যে মানববন্ধন করেছেন, তাতে সরকার ও প্রশাসনবিরোধী প্ল্যাকার্ড প্রদর্শিত এবং স্লোগান উচ্চারিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সরকার ও প্রশাসনবিরোধী প্ল্যাকার্ড বহন করতে কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো স্লোগান দিতে পারবেন না, এমন কোনো আইন বাংলাদেশে নেই। সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা স্বীকৃত। দেখার বিষয়, তাঁরা আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে, এমন কোনো কাজ করেছেন কি না।

যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত, তাঁরা পদপদবির মোহে কৃষকের কথা ভুলে থাকতে পারেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা ভোলেননি। কেননা, এঁদের বেশির ভাগই কৃষকের সন্তান এবং তাঁদের পাঠানো অর্থেই লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে থাকেন। কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য না পেলে সন্তানের লেখাপড়ার খরচও বহন করতে পারবেন না। অতএব, কৃষকের পক্ষে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনকে সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।

এর আগে বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হলে শিক্ষার্থীরা নিপীড়ক শিক্ষককের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সফল হয়েছিলেন। সে সময়েও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্ববিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। একদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তারা ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করেছিল, অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল। এটি কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়া কিছু নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের প্রতি মানবিক আচরণ না করতে পারে, কিন্তু তাঁদের মুখ বন্ধ করতে আইনবহির্ভূত পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার নেই। আমরা বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপের নিন্দা করি এবং অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের প্রতি জারি করা কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহারের দাবি জানাই।