উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ১৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের খবরটি ইতিবাচক। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নয়, গুরুতর অভিযোগ আছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্য পদাধিকারীদের বিরুদ্ধেও। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ইউজিসি যখন এই তদন্তকাজ পরিচালনা করছে, তখন অন্তত দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছেন। এর একটি হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং অপরটি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শেষোক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি আলাদা কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি। 

অপর যে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ইউজিসি তদন্ত করছে, সেগুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। অভিযুক্ত সাবেক উপাচার্যদের তালিকায় আছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম ইমামুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম অহিদুজ্জামান। 

অভিযুক্ত উপাচার্যরা সবচেয়ে বেশি অনিয়ম করেছেন নিয়োগ নিয়ে। তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আইন লঙ্ঘন করে একের পর এক নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়োগ–বাণিজ্যেরও অভিযোগ আছে কোনো কোনো উপাচার্যের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি, কর্মস্থলে গরহাজির থাকা এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে কোনো কোনো উপাচার্যের বিরুদ্ধে। আগের উপাচার্যের অনিয়মের ধারাবাহিকতায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর শেকৃবির চারটি অনুষদে সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে ৭৫ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন বিভাগের মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর ১০১ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়, যা বিজ্ঞাপিত চাহিদার চেয়ে ২৬ জন বেশি। 

ইউজিসির চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ জানিয়েছেন, তদন্ত করে তঁারা শুধু সুপারিশ করতে পারবেন, ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা তঁাদের নেই। সেই কাজটি করতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আচার্যের দপ্তরকে। আরও অনেক কিছুর মতো আমাদের শিক্ষা প্রশাসনেও রয়েছে চরম অসংগতি। ইউজিসি যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে, তাহলে কেন তার ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার থাকবে না? সচিবালয়কেন্দ্রিক শিক্ষা প্রশাসন কোনো কিছু অন্যদের ওপর ছেড়ে দিতে চায় না, এটি তারও প্রমাণ। বহু বছর ধরে উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের কথা শোনা গিয়েছিল। তাও আলোর মুখ দেখেনি। নোয়াখালী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইউজিসির তদন্তকাজে বাধা দিয়েছেন। তাঁর সমর্থক কর্মকর্তা ও বহিরাগত যুবকদের সশস্ত্র মহড়ার মুখে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঢাকায় ফিরে আসতে বাধ্য হন। 

ইউজিসির চলমান তদন্ত সত্যি সত্যি কোনো ফল দেবে কি না, তা নির্ভর করছে তদন্তকাজ কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পালিত হয় এবং সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেয়, তার ওপর। অভিযোগের সত্যাসত্য প্রমাণের জন্য সুষ্ঠু তদন্তের বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী কি নির্দোষ, তা প্রমাণিত হয়। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই তদন্তের ভিত্তিতে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। শিক্ষা প্রশাসনে অনেক অভিযোগই কর্তৃপক্ষ আমলে নেয় না। আবার তদন্ত হলেও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। উপাচার্যদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ক্ষেত্রে সেটি হবে না বলেই প্রত্যাশিত।