লালমাটিয়া মহিলা কলেজ

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের ধারাবাহিক শিক্ষাগত ও ব্যবস্থাপনাগত উৎকর্ষ সাধনের সাফল্য দেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি রোল মডেল। বড় বড় শিক্ষাঙ্গনে বড় বড় ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতা ও বিপর্যয়ের ঘটনা যখন আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, তখন লালমাটিয়া মহিলা কলেজ হয়ে উঠেছে আমাদের আস্থা ও ভরসার প্রতীক। কলেজটির শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবক ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে আমরা অভিনন্দন জানাই। গত সোমবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনে ৪০টি দক্ষতাসূচক শর্তের ভিত্তিতে দেশের ৮৯টি বেসরকারি কলেজের মধ্যে ৮টিকে প্রাক্‌–মডেল কলেজ ঘোষণা করে। এই শীর্ষ আট বিদ্যাপীঠের যাচাই করা ৮২ শিক্ষার্থী ২০ হাজার টাকা করে মেধাবৃত্তি পাবে। সুবর্ণজয়ন্তী পেরোনো কলেজটি যে সেরাদের সেরা, তার ছাপটা এবারও প্রগাঢ়। কারণ, ওই ৮২ মেধাবী ছাত্রীর মধ্যে ৩২ জনই লালমাটিয়া কলেজের শিক্ষার্থী।

অথচ মাত্র সাত বছর আগেও ঐতিহ্যবাহী এই কলেজ বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে ডুবতে বসেছিল। ২০০৬ সালে অধ্যক্ষ নিয়োগবিরোধী আন্দোলন চলেছে। দুই মাসের মধ্যে অধ্যক্ষকে বিদায় নিতে হয়েছে। শিক্ষার্থীর অভাবে কলেজটির ১২টি স্নাতক (সম্মান) ও ১১টি স্নাতকোত্তর কোর্স স্থগিত করেছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১২ সালের জুলাইয়ে তারা যেখানে ৫০ লাখ টাকা ঋণ করে শিক্ষকদের বেতন দিয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানটি মাত্র সাত বছরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত জুলাইয়ে তার তহবিলের পরিমাণ ছিল ৭৩ কোটি ১০ লাখ ৫১৮ টাকা। ওই সময়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন হাজারের কম ছিল, এখন তা বেড়ে সাড়ে আট হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ২২ কোটি টাকার উন্নয়নে কলেজটি তার নিজস্ব তহবিল থেকেই তিন কোটি টাকার জোগান দিল। আর ২০১৫ সালের নতুন পে–স্কেল বাস্তবায়নে অনধিক ৩০ ভাগ ছাত্রবেতন বাড়ানোর সরকারি নির্দেশনার সুযোগ কলেজটি নেয়নি। অথচ পে–স্কেল বাস্তবায়ন করেছে। কলেজটির সরকারীকরণ এখন প্রক্রিয়াধীন।

২০১৭ সালের মহিলা কলেজ (সরকারি–বেসরকারিসহ) র‌্যাঙ্কিংয়ে লালমাটিয়া মহিলা কলেজই দেশের শ্রেষ্ঠ। দুই হাজারের বেশি বয়েজ ও গার্লস কলেজের মধ্যে লালমাটিয়া হলো অষ্টম। কলেজটির এই বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে রয়েছে একজন নিবেদিতপ্রাণ মহান শিক্ষাবিদের অবদান। তিনি লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম। সহশিক্ষা বা পাঠ্যসূচিবহির্ভূত কার্যক্রমেও তিনি নতুন ধারা তৈরি করেছেন। কৃতী ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফ, মার্কিন দূতাবাসের সহায়তায় ইংরেজি শেখানো, বিদেশি বৃত্তির ব্যবস্থা, বিনা মূল্যে আইটি প্রশিক্ষণ দিয়ে মেয়েদের (প্রায় ৬০০ এখনই প্রস্তুত) আউটসোর্সিংয়ে যোগ্য করে তোলার মতো কার্যক্রম অন্যতম। এ বছরের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে সরকারিভাবে (অঞ্চলভিত্তিক) রফিকুল ইসলামকে শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষের মর্যাদায় যথার্থই অভিষিক্ত করা হয়েছে। অল্প সময়ে লালমাটিয়া মহিলা কলেজকে গৌরবের আসনে বসিয়ে তিনি যে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন, তা নিশ্চয়ই সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে।