সাঁকোই ভরসা

‘প্রদীপের নিচে অন্ধকার’ বলে যে বাংলা প্রবাদটি আছে, সেটি রাজধানীর অদূরে ধামরাই উপজেলার কাকরান গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য নির্মম সত্য। গতকাল রোববার প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ধামরাই সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে কাকরানের অবস্থান হলেও সেখানে চলাচলের জন্য কোনো সেতু নেই। বংশী নদীর পাশের নিচু জায়গাটিতে বছরের পাঁচ-ছয় মাস পানি জমে থাকে। ছবিতে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকেও একজন সাঁকো পার হচ্ছেন এবং সাঁকোর নিচে পানি জমে আছে। ওই ভদ্রলোকের মতো গ্রামের আরও কয়েক হাজার মানুষকে প্রতিদিন সাঁকো পেরিয়ে উপজেলা সদরে যেতে হয় কিংবা সদর থেকে ফিরে আসতে হয়। এ যাত্রায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে বিদ্যালয়ের ছোট শিশুরা। বিদ্যালয়ে যাওয়ার বিকল্প কোনো পথ না থাকায় এই শিশুদের প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হতে হয়।

কাকরান গ্রামে পানি জমে থাকার সমস্যাটি হঠাৎ করে হয়নি। কয়েক বছর আগে এখানে সড়ক তৈরি করা হলেও পানির তোড়ে একাংশ ভেসে যায়। এরপর থেকেই এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে আছে। কেননা, ২০০ ফুট দীর্ঘ সাঁকো দিয়ে তাদের পারাপার হতে হয়। গ্রামের একজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, নির্বাচন এলে প্রার্থীরা সেতু নির্মাণ করে দেবেন বলে গালভরা বুলি আওড়ান। কিন্তু নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আর তাঁদের পাওয়া যায় না। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের অনেক প্রকল্প আছে—কাবিখা, কাবিটা ও টিআর এবং অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্প। কিন্তু কোনো কর্মসূচিতেই এই সেতু নির্মাণের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। 

ইউপির একজন সাবেক সদস্য খেদের সঙ্গে বলেছেন, ইউপি সদস্যদের কথা কেউ শোনে না। উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয় স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানের ইচ্ছায়। কিন্তু গত কয়েক বছরে কারও ইচ্ছা হয়নি বলেই সেতু নির্মিত হয়নি। বছরের প্রায় অর্ধেক সময় গ্রামবাসীকে সাঁকো পার হয়ে যেতে হয়। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনও গ্রামবাসীর সমস্যার কথাটি স্বীকার করেছেন। একবার তিনি সাঁকো তৈরির টাকাও দিয়েছেন। কিন্তু গ্রামবাসী অনিরাপদ সাঁকো চান না, চান নিরাপদ সেতু। উপজেলা চেয়ারম্যান বলেছেন, ওই গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘবে মন্ত্রণালয়ে (স্থানীয় সরকার) একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে আমাদের বছরের পর বছর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগ চোখে দেখেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কোনো ব্যবস্থা নেননি। প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাতেই কয়েক বছর লেগেছে। এখন এটি অনুমোদন হতে কত দিন লাগে কে জানে। 

সরকারের নীতিনির্ধারকেরা গ্রামে শহরের সুবিধা দেওয়া হবে বলে জোর গলায় প্রচার করেন। কথা ও কাজে মিল নিশ্চিত করতে কাকরান গ্রামে অবিলম্বে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।