উজানের পানিতে অকাল বন্যা

বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষা মৌসুমে বন্যা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্ষা শেষে আশ্বিনের বন্যায় যে রাজশাহী, কুষ্টিয়া, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হলো, তা অনেকটা অপ্রত্যাশিত। প্রবল বৃষ্টি হওয়ায় ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহারের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে  উত্তর প্রদেশে ১১১ জন ও বিহারে ৬০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। উজানে বন্যার স্রোত এত প্রবল যে পশ্চিমবঙ্গে ফারাক্কা বাঁধ ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে জানা গেছে। বন্যায় বিহারের অবস্থা এতটাই খারাপ যে সেখানকার এক মন্ত্রী ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিস্থিতি দেখতে দুজন মন্ত্রীকে ফারাক্কার বাঁধের স্থলে পাঠিয়েছেন। 

বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের উজানের পানিনিষ্কাশনের একমাত্র নদী গঙ্গা, যেটি রাজশাহীর কাছে এসে ভাগীরথী ও পদ্মা নামে দুই ভাগ হয়ে গেছে। ফারাক্কার নিচে বন্যার প্রকোপ বাংলাদেশে পড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনাসহ বেশ কয়েকটি জেলার নিচু চর অঞ্চলগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে, পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সেসব এলাকার লাখ লাখ মানুষ।

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, বছরের এ রকম সময়ে বন্যা অপ্রত্যাশিত হলেও সপ্তাহখানেকের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু ভারত থেকে উজানের পানি এখনো পুরোপুরি নামতে শুরু করেনি, নামলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে। পদ্মার দুই পারের মানুষ এখনই বিপন্ন অবস্থায় আছে। পানি আরও বাড়লে তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে হতে পারে। গতকালের প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ার মানুষ ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ভারতের বন্যা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা জরুরি। কারণ, সেখানকার বন্যার পানি ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দিয়েই নামবে। 

এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ নিজেই তা মোকাবিলার চেষ্টা করে। বন্যার সময় লোকজন সাধারণত বাড়িঘর ডুবে গেলে আত্মীয়স্বজনের বাসায় বা রাস্তা-বাঁধের মতো উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু আগাম সতর্কতা ছাড়া আকস্মিক কোনো বন্যায় মানুষজন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন আশ্রয় খোঁজা ও সম্পদ রক্ষার কাজটি খুবই কঠিন হয়।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়ার মতে, বন্যা পরিস্থিতি সপ্তাহখানেকের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসবে। আগামী তিন থেকে চার দিন পানি বাড়লেও পরের তিন-চার দিনে পানির উচ্চতা স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্যার সতর্কীকরণে তথ্য আদান–প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। ভারতের তরফে যথাসময়ে ও যথাযথ তথ্য পাওয়া গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সহজ হবে। আমরা আশা করব, এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে একটা আগাম সতর্কতা বা প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা সরকার ও প্রশাসনের তরফে থাকবে।  

ইতিমধ্যে যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে, সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা প্রয়োজন। সেখানকার মানুষের কোন ধরনের সাহায্য প্রয়োজন, তা মূল্যায়ন করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগব্যাধি যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য সজাগ  থাকতে হবে।  

উজান থেকে পানি আসা কিংবা বৃষ্টির কারণে যে ঘন ঘন বন্যা হচ্ছে তার অন্যতম কারণ নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া। প্রতিবছর নদীর ড্রেজিংয়ের নামে যে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়, তার কী ফল? সবটাই কি নদীর পানিতে ভেসে যায়? বন্যার হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে নদীকে বাঁচাতে হবে।