বরিশালে ধর্মঘটের অবসান

আরও অনেক বিভাগীয় বড় শহরের মতো বরিশালেও জনগণের চলাচলের জন্য কোনো গণপরিবহন বা বাস-মিনিবাস নেই। ফলে চার লাখ জন–অধ্যুষিত শহরটিতে চলাচলের বাহন রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইকই প্রধান বাহন। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন রিকশা ও অটোরিকশার ছাড়পত্র দিলেও ইজিবাইক চলছে ছাড়পত্র ছাড়াই। ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ বলছে, ইজিবাইক নিরাপদ নয় বলে তারা ছাড়পত্র দিচ্ছে না। প্রশ্ন হলো, যে যানবাহন নিরাপদ নয়, সেই যানবাহন দেশে আমদানির অনুমতি পেল কীভাবে? কারা অনুমতি দিলেন? পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে যে ন্যূনতম সমন্বয় নেই, এ ঘটনা তার প্রমাণ।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ ইজিবাইক বন্ধে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত না নিয়ে  এসব বাহনের মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আগে আলোচনা করলে হয়তো অনশন কর্মসূচি এড়ানো যেত। তারা এখন শহরের নির্দিষ্ট এলাকায় ইজিবাইক চলাচলের  অনুমতি দিয়ে বাস্তব বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। যেসব ইজিবাইক প্রতিদিন নগরবাসীকে সেবা দিচ্ছে এবং যার ওপর কয়েক হাজার চালকের জীবন–জীবিকা নির্ভরশীল, সেসব পরিবহন হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া যায় না। যেকোনো সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের জন্য আলোচনার বিকল্প নেই। আবার ইজিবাইকচালকদের মনে রাখতে হবে, অনিরাপদ বাহন শুধু যাত্রীসাধারণ নয়, তঁাদের জন্যও বিপজ্জনক। এ ধরনের বিপজ্জনক বাহন যত কম থাকে, ততই মঙ্গল।

সাবেক মেয়র শওকত হোসেনের সময় বরিশাল শহরে গণপরিবহন চালু হলেও সেটি স্থায়ী হয়নি। সে সময় অটোরিকশা মালিক ও শ্রমিকেরা আন্দোলনে নেমেছিলেন, যা ছিল অযৌক্তিক। শুধু বরিশাল নয়, ঢাকার বাইরের সব শহরেই  ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলছে লাইসেন্স বা ছাড়পত্র ছাড়া। এখানেও কর্তৃপক্ষকে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ এসব বাহন বন্ধ করতে না পারছে, ততক্ষণ সেগুলো নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে আনা প্রয়োজন। এতে সরকারের  রাজস্ব যেমন বাড়বে, তেমনি চালকেরাও নিয়মনীতি মেনে চলতে বাধ্য হবেন। ছাড়পত্র না থাকলে জবাবদিহিও থাকে না। পুলিশ পথে ধরলে তারা কিছু টাকা দিয়ে রেহাই পেয়ে যায়। কোনো দেশের পরিবহন এভাবে চলতে পারে না। ইজিবাইক বন্ধ করতে হলে সব বড় শহরেই বাস বা মিনিবাস চালু করতে হবে। এতে যানজট যেমন কমবে, তেমনি জনগণও ভোগান্তি ও বাড়তি অর্থ খরচ থেকে রেহাই পাবে।