জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম

জন্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর জন্মনিবন্ধন হওয়া মানে সে রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত একজন নাগরিক। এটি শিশুর অস্তিত্বের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি এবং দাপ্তরিক রেকর্ড। জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে একটি শিশুর মা-বাবা ও বাসস্থানের পরিচয় নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি তার নাগরিকত্ব ও জাতীয়তার অধিকার নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু দেশে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রমের যে বিশৃঙ্খল চিত্র প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে, তা দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।

৬ অক্টোবর জাতীয় জন্মনিবন্ধন দিবসে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের বর্তমান জনসংখ্যার চেয়ে নিবন্ধিত হওয়া মানুষের সংখ্যা ৬৪ লাখ বেশি। এক ব্যক্তির নামে একাধিক নিবন্ধন থাকা এবং মৃত ব্যক্তির জন্মনিবন্ধন বাতিল না হওয়ায় এমনটা ঘটেছে। জন্মনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় সূত্রের মতে, সার্ভারের সমস্যার কারণে একই ব্যক্তির জন্মনিবন্ধন একাধিকবার করার ঘটনা ঘটছে। এদিকে মৃত ব্যক্তির জন্মনিবন্ধন বাতিলের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। এ কারণে দেশের জনসংখ্যার চেয়ে নিবন্ধিত মানুষের সংখ্যা বেশি দেখাচ্ছে। এ ছাড়া শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করার কথা বলা হলেও বেশির ভাগ মানুষই তা করেন না। তথ্য ভালোভাবে যাচাই করার পর জন্মনিবন্ধন করার নিয়ম থাকলেও আমাদের দেশে এ ব্যাপারে দুর্বলতা রয়েছে। রয়েছে লোকবলের অভাব। এ দুর্বলতার সুযোগে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে জন্মনিবন্ধন করছে।

আমাদের এই জনবহুল দেশে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রমে এ দুর্বলতা ও বিশৃঙ্খলা কাম্য নয়। জন্মনিবন্ধন নাগরিকের মানবাধিকার অর্জনে সহায়তা করে। যেহেতু জন্মনিবন্ধন ব্যক্তির সঠিক বয়সের একমাত্র প্রমাণপত্র, তাই এর গুরুত্ব অনেক। তবে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে বা চাকরির ক্ষেত্রে বা যাঁরা বিদেশে যেতে ইচ্ছুক, তাঁদের প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে শুধু এ সনদ গুরুত্ব পায়। ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ধারণ বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে এ সনদের ব্যবহার হয় না। বহু মানুষ জন্মনিবন্ধনের বিষয়ে সচেতনও নয়। তাই জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো জন্মনিবন্ধন সনদ ব্যবহারের আওতা বাড়াতে হবে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা, চাকরিতে নিয়োগ, নাগরিকত্ব নির্ধারণ, বিয়ে রেজিস্ট্রি, পাসপোর্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের আবেদনের ক্ষেত্রে, পণ্য আমদানি ও রপ্তানির অনুমোদন পেতে, গাড়ির রেজিস্ট্রি বা লাইসেন্স পেতে, বাড়ি বা ভবনের নকশার জন্য এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোন–সংযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগও নিতে হবে। তবে তার আগে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রমের দুর্বলতাগুলো দূর করতে হবে। মৃত ব্যক্তিদের জন্মনিবন্ধন বাতিল করার ব্যবস্থা করতে হবে। শক্তিশালী সার্ভার স্থাপন করতে হবে, যাতে একজন ব্যক্তির একাধিকবার জন্মনিবন্ধন না হয়। তথ্য যাচাই করার জন্য দক্ষ লোক নিয়োগ করতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।