ডিম খাওয়ায় আন্তর্জাতিক মান

হৃদ্‌রোগ এড়াতে কম কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার খাওয়া বাঞ্ছনীয়—প্রচলিত এই ধারণাকে পুঁজি করে নানা ধরনের খাদ্য উপকরণের গায়ে ‘কম কোলেস্টেরল’ কিংবা ‘কোলেস্টেরলমুক্ত’ বিজ্ঞপ্তি সেঁটে তার উৎকর্ষ জাহির করা হয়। তবে আধুনিক পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণের সঙ্গে হৃদ্‌রোগের সম্পর্ক সামান্যই। বিজ্ঞানীদের এই রায়ে ডিমের ‘কলঙ্ক’ ঘুচেছে।

এখনকার বিশেষজ্ঞদের দাবি, দিনে একটি কুসুমসহ ডিম সুস্থ মানুষের রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ালেও তা হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা বাড়াবে না, বরং ডিম হার্টের জন্য উপকারী হাই ডেনসিটি কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) পরিমাণ বাড়িয়ে হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের পুষ্টি নিশ্চিত করতে তাঁরা নিয়মিত ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

 জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, একজন মানুষের ন্যূনতম পুষ্টিচাহিদা পূরণে খাদ্যতালিকায় বছরে ১০৪টি ডিম থাকা দরকার। সরকারি হিসাবে এক যুগ আগেও প্রধানত অর্থনৈতিক সংগতি না থাকার কারণে আমাদের ৪০টির বেশি ডিম খাওয়া সম্ভব ছিল না। খুব আশার কথা হলো, সেই দিন আর নেই। এখন বছরে এখানকার মানুষ গড়ে ১০৩টি করে ডিম খাচ্ছে। এখন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার খাদ্যতালিকায় ডিম থাকছে। গত এক যুগে দেশে ডিমের উৎপাদন তিন গুণ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে তা সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৯৯ কোটি ৫২ লাখ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৮১ কোটি ডিম উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই অবস্থায় আসতে দেশের পোলট্রি খাতকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। নানা সময় নানা ধরনের বিপর্যয় এসেছে। কয়েক বছর পরপর বার্ড ফ্লু রোগের আক্রমণের খবরে একের পর এক খামার বন্ধ হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বাজারে নকল ডিম পাওয়া যাচ্ছে বলে গুজব ছড়ানোর ফলেও পোলট্রি খাত ধাক্কা খেয়েছে। কিন্তু এত সব বাধার মধ্যেও এক যুগ ধরে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে।

অতি আনন্দের কথা হলো, বাংলাদেশ যেসব খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, সেই তালিকায় পোলট্রি খাতও যুক্ত হচ্ছে। এতে জনসাধারণের
আমিষের চাহিদা পূরণ হবে, যা দেশের টেকসই মানবসম্পদ উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে।

দেশ যেহেতু ডিম উৎপাদনে আন্তর্জাতিক মানের কাছাকাছি পৌঁছেছে, সেহেতু সামনের দিনের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ ডিম উৎপাদন করা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে দেশের ডিম উৎপাদনসংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সর্বাত্মক সহযোগিতাদানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ খাত উন্নয়নে প্রয়োজনে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।