নীলফামারী সদর হাসপাতাল

দেশের স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার চিত্র আবারও ফুটে উঠেছে নীলফামারী সদর হাসপাতালের নাজুক পরিস্থিতিতে। হাসপাতালে ছয়তলার একটি আধুনিক ভবন ছয় মাস ধরে পড়ে আছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করা হলেও সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু হয়নি। শয্যাসংকটের কারণে পুরোনো ভবনে ওয়ার্ড ও বারান্দার মেঝেতে ঠাঁই নিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে রোগীদের। একটি সরকারি হাসপাতালের এমন করুণ চিত্র একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে দফায় দফায় ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল বাড়েনি। এই ২৫০ শয্যার বিষয়টি আবার কাগজে-কলমে। কেননা, নতুন ছয়তলা ভবনে কোনো শয্যাই ফেলা হয়নি, কেনা হয়নি কোনো চিকিৎসা সরঞ্জাম। লোকবলও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে হাসপাতালটির পুরোনো ভবনে শয্যাসংখ্যা ১০০। ১০০ শয্যার হাসপাতালে জনবল প্রয়োজন ১৫০। কিন্তু ৫০ শয্যার জন্য যে জনবল প্রয়োজন, তা–ও নেই হাসপাতালটিতে। ৫০ শয্যার হাসপাতালের জন্য জনবল প্রয়োজন ১৩০। সেখানে এখন চিকিৎসকসহ মোট ১০৭ জন। ২২ জন চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত মাত্র ১৩ জন।

হাসপাতালের নতুন ছয়তলা ভবনটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ছয় মাস আগে ভবনটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু এর কার্যক্রম শুরু না করায় সুফল পাচ্ছে না রোগীরা। গাদাগাদি করে পুরোনো ভবনে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাদের।

প্রশ্ন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করার পর তা এভাবে ফেলে রাখার মানে কী? জনবলই–বা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না কেন? বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। তারা কী করছে?

জেলা সিভিল সার্জন রণজিৎ কুমার বর্মণের ভাষ্য অনুযায়ী, নতুন হাসপাতাল ভবনের কার্যক্রম দ্রুত চালুর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে এসব চিঠি আমলে নিচ্ছে না, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। তাদের এই গাফিলতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই দরিদ্র। তারা বিভিন্ন রোগব্যাধির চিকিৎসার জন্য সাধারণত সরকারি হাসপাতালের ওপরই নির্ভর করে। সেখানে যদি এ রকম নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করে, তাহলে তারা যাবে কোথায়?

আমরা এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি। জরুরি ভিত্তিতে নীলফামারী সদর হাসপাতালের নতুন ভবনে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা সরঞ্জাম ও শয্যা কিনতে হবে। সেই সঙ্গে এই হাসপাতালে এসে রোগীরা যাতে ভোগান্তির শিকার না হয় এবং যথাযথ চিকিৎসা পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে।