ভারতে মতপ্রকাশ এখন ভয়ের ব্যাপার: অমর্ত্য সেন

অমর্ত্য সেন
অমর্ত্য সেন
>

৬ অক্টোবর ২০১৯ যুক্তরাষ্ট্রের দ্য নিউইয়র্কার সাময়িকীতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন-এর এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। ‘ভারতীয় গণতন্ত্র নিয়ে অমর্ত্য সেনের আশা ও শঙ্কা’ শিরোনামের সাক্ষাৎকারটির বাংলা অনুবাদের প্রথম অংশ আজ প্রকাশিত হলো। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দ্য নিউইয়র্কার-এর স্টাফ রাইটার আইজাক চটিনার। 

ভারতীয় অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক ও গণবুদ্ধিজীবী অমর্ত্য সেন বাস করেন ইংল্যান্ডের কেমব্রিজের এক শান্ত, নিরিবিলি সড়কের পাশে। হার্ভার্ড স্কয়ারের এক কোণে একটি বাড়িতে তাঁর সঙ্গে থাকেন তাঁর স্ত্রী ইতিহাসবিদ এমা রথসচাইল্ড। বাড়িটি সুপরিসর, কিন্তু অগোছালো; পুরোনো খবরের কাগজ ও ম্যাগাজিন এখানে-সেখানে ছড়ানো; টেবিলে টেবিলে তাঁর বইপত্রের স্তূপ। টেড টার্নার ও কফি আনানের ছবিও আছে; বসার ঘরের দেয়ালে দার্শনিক জন রলস ও ডব্লিউ ভি ও কুইনের বাঁধাই করা পেইন্টিং, সেগুলো রলসের স্ত্রীর আঁকা। ঢোকার মুখেই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা ছবি, যা দেখে মনে পড়বে বাংলার প্রিয় সন্তানদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের নামের পাশে অমর্ত্য সেনের নামও উল্লেখ করা হয়।

১৯৩৩ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে এক হিন্দু পণ্ডিত পরিবারে অমর্ত্য সেনের জন্ম। অর্থনীতি পড়তে যান কেমব্রিজে; তারপর শিক্ষকতা করেন দিল্লি স্কুল অব ইকোনমিকস, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসসহ নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ১৫ বছর ধরে অধ্যাপনা করছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা ও লেখালেখির মাধ্যমে তিনি দুর্ভিক্ষ নিয়ে গবেষণা ও কল্যাণ অর্থনীতির চর্চায় রূপান্তর এনেছেন; এ ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে ভূষিত হয়েছেন নোবেল পুরস্কারে। তিনি মারথা নুসবমের সঙ্গে মিলে ‘ক্যাপাবিলিটি অ্যাপ্রোচ’ বা সামর্থ্য সৃষ্টির ধারণার প্রবর্তন করেন; এর বক্তব্য হলো, দারিদ্র্য দূর করা থেকে শুরু করে চিন্তা করার অবকাশ সৃষ্টি করাসহ মানুষের সামগ্রিক সুস্থ বিকাশ সাধনের লক্ষ্যে ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সুযোগ ও সম্পদ বরাদ্দের দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করা। ভারত সম্পর্কে তাঁর কাজের মধ্যে রয়েছে নারী-পুরুষ সমতার ঘাটতি উন্মোচন, সমাজকল্যাণমূলক খাতে অর্থ ব্যয়ের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ, বাংলায় ১৯৪৩ সালের মন্বন্তরের কারণসমূহের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল তেতাল্লিশের মন্বন্তরে; এ বিষয়ে কাজের জন্য অমর্ত্য সেনকে ভারত বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষক-পর্যবেক্ষক বলে মনে করা হয়।

২০০৫ সালে প্রকাশিত দ্য আর্গুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান (তর্কপ্রিয় ভারতীয়) এবং আরও কয়েকটি বইয়ে অমর্ত্য সেন ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ভারতীয় সংবিধানের উদারপন্থী বৈশিষ্ট্যের প্রশংসা করেন। তিনি মনে করেন, ভারতের এই দুটি বৈশিষ্ট্য ‘সলিটারিজম’-এর ক্ষতিকর দিকগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে। একজন মানুষের প্রধান পরিচয় মাত্র একটি—অমর্ত্য সেন এই ভাবনার নাম দিয়েছেন ‘সলিটারিজম’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) শাসনে ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ভারতীয় সংবিধানের উদারপন্থী বৈশিষ্ট্যের অবক্ষয় ঘটছে। বিশেষত এ বছরের নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী হওয়ার পর মোদি দৃশ্যত হিন্দুর শাসন প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাঁর সরকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের বিধান স্থগিত করেছে; কয়েক দশক ধরে নিষ্ঠুর দখলদারির শিকার অঞ্চলটিতে এখন কঠোর সামরিক শাসন চলছে; সেখান থেকে খবর আসছে, লোকজনের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে এবং আইনবহির্ভূতভাবে তাদের কারাগারে বন্দী করে রাখা হচ্ছে। অমর্ত্য সেন বরাবর মোদির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সমালোচনা করে আসছেন; তিনি বলেন, দারিদ্র্য ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে মোদির সরকার ‘ভুল পথে বিরাট লম্ফ দিয়েছে’। ভারতের বিহার রাজ্যে অবস্থিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ছিলেন অমর্ত্য সেন। মোদি সরকার তাঁর বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলে তিনি ২০১৫ সালে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।

অমর্ত্য সেনের খাবার ঘরে বসে আমরা কয়েক ঘণ্টা ধরে কথা বলি, তারপর দুপুরের খাবার খাই। তাঁর বয়স এখন ৮৫ বছর, লাঠির সাহায্যে সতর্কভাবে হাঁটেন, উচ্চ স্বরে প্রাণ খুলে হাসেন, এবং মানুষ ও ভাবনা সম্পর্কে তাঁর স্মৃতিশক্তি বিস্ময়কর। আমি যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করি, তিনি ভেবে দেখেছেন কি না যে তিনি এখন দেহ ও মনের মধ্যকার পার্থক্যের এক মূর্ত স্বরূপ, তখন তিনি বলেন, ‘আমি সেই ধরনের লোক নই যারা স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দেয়। কিন্তু যদি হতাম, তাহলে আমি যা হয়েছি তার জন্য তাকে ধন্যবাদ দিতাম, উল্টোটার জন্য নয়।’

অমর্ত্য সেন এখনো নিয়মিত লেখেন (একটি স্মৃতিকথাও, যা লিখতে গিয়ে তাঁর নিজেকে ‘প্রাচীন’ মনে হচ্ছে), শিক্ষকতা করেন এবং
হার্ভার্ড সোসাইটি অব ফেলোজ-এর প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেন।

এই আলাপে আমরা কথা বলি স্বাধীনতাপূর্ব ভারতবর্ষে তাঁর ছেলেবেলা নিয়ে, ভারতীয় গণতন্ত্রের বিষয়ে তাঁর আশা ও শঙ্কা নিয়ে; সমসাময়িক রাজনীতি কেন তাঁকে নিয়তিবাদের দিকে ঠেলে দেয়নি, ইত্যাদি নিয়ে।

আইজাক চটিনার: আপনি তো ভারত বিভাগের সময় থেকে নিয়মিতভাবে দেশটি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন…

অমর্ত্য সেন: ভারত বিভাগের অনেক আগে থেকেই রাখি। আমার বিদ্যালয়ের পড়াশোনা ব্রিটিশ আমলের ভারতে।

আইজাক চটিনার: ব্রিটিশ ভারতের স্মৃতিগুলো কী?

অমর্ত্য সেন: ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির পন্থাগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করতাম, সে কথা খুব মনে পড়ে। কাকা, মামা, কাকাতো ও মামাতো ভাইদের স্মৃতি, তাঁদের জেল খাটার স্মৃতি। তাঁদের কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল; ব্রিটিশরা তখন এটাকে বলত ‘প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন’। এ জন্য নয় যে তাঁরা কোনো অপরাধ করেছিলেন; বরং এই জন্য যে তাঁদের কারাগারে আটকে রাখা না হলে তাঁরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের জন্য ভয়ংকর কিছু করতে পারেন। তাঁরা ভয়ংকর কিছু করেছেন, এমন কোনো প্রমাণের দরকার হতো না।

এ বিষয়ে আমার ঠাকুরদার সঙ্গে কথা হতো, সেসব মনে পড়ে। তিনি বলতেন, ‘তোমার কি মনে হয়, এই প্রিভেন্টিভ ডিটেনশনের ব্যবস্থা থেকে ভারত কখনো মুক্তি পাবে?’ তিনি বলতেন, ‘স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত না। সে জন্য আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে।’ দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু কংগ্রেস দল প্রথমেই প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন চালু করে। অবশ্য তারা এটাকে একটু নমনীয় করে। তবে এখন এটা অত্যন্ত কঠোর। বেআইনি কর্মকাণ্ড (নিবর্তন) আইন নামে একটা আইন ভারতে আছে। এ বছর সেটা সংশোধন করে সরকারকে এমন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে সরকার কোনো প্রমাণ ছাড়াই, বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা ছাড়াই কোনো ব্যক্তিকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করতে পারবে। আমরা একটা স্বাধীন দেশ হওয়ার পরেও যে এটা ঘটতে পারে, তা আমি কখনো ভাবিনি।

আইজাক চটিনার: আপনার কি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ভারত বিভাগের স্মৃতি আছে?

অমর্ত্য সেন: হ্যাঁ। দেশবিভাগের কথা মনে আছে, যুদ্ধের কথা মনে আছে; হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার কথা মনে আছে। আমি ঢাকার ছেলে, যে শহরটা এখন বাংলাদেশের রাজধানী। অবশ্য পড়াশোনা করেছি পশ্চিম বাংলায়; মাতামহের পরিবারের সঙ্গে আমি পশ্চিমবঙ্গেই থেকে যাই। পড়াশোনা করি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গড়ে তোলা প্রগতিশীল বিদ্যাপীঠ শান্তিনিকেতনে। বাংলায় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সহিংসতা তেমন ছিল না। এমনকি ১৯৩৭ সালের নির্বাচনেও  ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো জয়ী হয়েছিল। কিন্তু ১৯৪০–এর দশকের শুরুর দিকে দেশবিভাগের পক্ষের শক্তিগুলোর প্রভাব বেড়ে যায়। আমার মনে হয়, মুসলিম লিগ প্রথমবারের মতো নির্বাচনে জিতেছিল ১৯৪৬ সালে, স্বাধীনতার ঠিক আগের বছর।

আইজাক চটিনার: ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের সময় আপনার পরিবার কোথায় ছিল?

অমর্ত্য সেন: আমার বাবা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। খুব ভালো কয়েকজন অধ্যাপক তাঁর সহকর্মী ছিলেন। তাঁদের একজন ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু (এস এন বোস), যিনি বোস-আইনস্টাইন স্ট্যাটিসটিকসের জন্য পরিচিতি লাভ করেছিলেন। আমার বাবা ছিলেন রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপক। ১৯৪৬ সালে পাঁচ-ছয়জন অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন, কারণ সেখানে এত বেশি দাঙ্গাহাঙ্গামা ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল যে ক্লাস প্রায় হতোই না। বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দিয়ে কিছুদিন অন্য কাজ খোঁজেন, তারপর দিল্লি চলে যান, দিল্লির ভূমি উন্নয়ন কমিশনার নিযুক্ত হন। তারপর তিনি পশ্চিমবঙ্গের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।

আইজাক চটিনার: আপনার কখন মনে হয়েছিল যে আপনি ভারত ছাড়তে চান?

অমর্ত্য সেন: দু-একটা জায়গা ছিল যেখানে পড়তে যাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল আমার। কেমব্রিজ তার একটা। সেই যুগে কেমব্রিজ অর্থনীতিতে বেশ ভালো ছিল, বিশেষত ট্রিনিটি কলেজ। আমি সেখানে ভর্তি হওয়ার জন্য দরখাস্ত করি, কিন্তু প্রথমে তারা আমাকে নেয়নি। তারপর কেউ একজন বেরিয়ে গেলে শেষ মুহূর্তে তারা আমাকে ডাকে। অনেক বছর পরে আমি যখন ওই কলেজ থেকে মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করি, তখন কলেজ কর্তৃপক্ষ আমার ভর্তির ঘটনাটা স্মরণ করে [হাসি]। অর্থনীতি ও রাজনীতির প্রতি আমার সব সময়ই আগ্রহ ছিল। আগ্রহ ছিল গণিতের প্রতিও। কিন্তু কেমব্রিজের অর্থনীতি বিভাগে তখন গণিত বেশি ছিল না।

আইজাক চটিনার: আপনার কি মনে হয়, আপনি যখন অন্য বিষয়ের দিকে চলে গেলেন, তখন গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহটা আপনার কাজে লেগেছিল?

অমর্ত্য সেন: হ্যাঁ, আমার তা মনে হয়। আর সেই সময়ে কেমব্রিজ অর্থনীতি ও নিও-ক্ল্যাসিক্যাল অর্থনীতির মধ্যে যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, তাতে ট্রিনিটি কলেজের যে একটা বিশিষ্ট অবস্থান ছিল, সেই ক্ষেত্রেও গণিত আর বিজ্ঞানের একটা সহায়ক ভূমিকা ছিল। আইজাক নিউটন, ফ্রান্সিস বেকনসহ অনেকেই ট্রিনিটি কলেজের ছাত্র ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, নেতৃস্থানীয় মার্ক্সবাদী অর্থনীতিবিদ মরিস ডবসও সেখানে পড়াশোনা করেছেন। আন্তনিও গ্রামসির ঘনিষ্ঠ বন্ধু পিয়েরে স্রাফা, যিনি ভিন্ন ধরনের মার্ক্সীয় চিন্তার প্রতিনিধি ছিলেন, তিনিও ছিলেন ট্রিনিটি কলেজের ছাত্র। আবার সেখানকার জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ডেনিস রবার্টসন ছিলেন অত্যন্ত রক্ষণশীল। কিন্তু তাঁদের প্রত্যেকের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল বেশ ভালো। এ বিষয়টা আমাকে আকৃষ্ট করেছিল।

আইজাক চটিনার: সেই সময় আপনার রাজনীতি কী ছিল?

অমর্ত্য সেন: বামপন্থী। ঠিকভাবে বললে, মধ্যপন্থী বাম। একটা অদ্ভুত অবস্থা ছিল আমার: মার্ক্সবাদী না হয়েও মার্ক্সীয় চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলাম। মার্ক্সের ১৮৪৪ সালের ম্যানাস্ক্রিপ্টস আমার ভালো লেগেছিল। ভালো লেগেছিল তাঁর জার্মান আইডিওলজি; ১৮৭৫সালে লেখা তাঁর ক্রিটিক অব গোথা প্রোগ্রাম। আর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতির দিকটা দেখলে, আমার মনে হতো, এই ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের আসলেই খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেওয়ার আছে। কিন্তু অন্যদিকে তাদের রাজনৈতিক তত্ত্বের অভাবটা আমাকে সব সময়ই পীড়িত করত। এটা প্রায়শ স্বীকার করা হয় না যে রাজনৈতিক সংগঠনের বিষয়ে কার্ল মার্ক্সের আগ্রহ ছিল খুবই সামান্য। সর্বহারার একনায়কত্বের ভাবনাটির আসলে কোনো অর্থ হয় না [হাসি]। আর জন কেনেথ গ্যালব্রেইথ যেমন বলেন, রাজনৈতিক বিরোধিতা প্রয়োজন, যেটাকে তিনি বলেছিলেন, ‘কাউন্টারভেইলিং পাওয়ার’ বা ক্ষমতার ভারসাম্য। কমিউনিস্টদের ভাবনায় ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়টি নেই।

কলকাতায়, যেখানে আমার পড়াশোনার শুরু, সেখানে ছাত্রজীবনে দেখেছি, ছাত্রদের একটা বিরাট অংশ দরিদ্র, বঞ্চিত, অস্পৃশ্য, দলিতদের স্বার্থে কথা বলত। এটা আমার খুব ভালো লাগত। কিন্তু রাজনৈতিক বিরুদ্ধ মতও যে গুরুত্বপূর্ণ, এটা তারা মনে করত না দেখে পীড়িত বোধ করতাম। গণতন্ত্র, যাকে প্রায়শ বলা হয় বুর্জোয়া গণতন্ত্র, তাতে সমাজ-সংগঠনের সমস্যার পূর্ণ চিত্র ধরা পড়ে না।

তো আমি ছিলাম বামপন্থী; আবার একই সঙ্গে সবকিছু নিয়েই আমার মধ্যে বেশ সংশয় কাজ করত। আমি নিকোলাই বুখারিনের লেখা অনেক পড়েছি; তারপর হঠাৎ শুনতে পেলাম যে বুখারিন সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে আসছিলেন এবং তিনি সে কথা স্বীকার করেছিলেন, তারপর আমেরিকান পর্যটক জন গুন্টার বললেন, তিনি সেখানে গিয়েছিলেন, তখন এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে তাঁকে নির্যাতন করা হয়নি। মনে আছে, আমার সহপাঠীরা আমাকে বলেছিল, ‘তুমি যদি এসব কথা বিশ্বাস করো, তাহলে অবিশ্বাস করার কিছুই থাকবে না।’ [স্তালিনের একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বুখারিনকে নির্যাতন করা হয়েছিল, তিনি গুপ্তচরবৃত্তি ও দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধ স্বীকার করেছিলেন এবং সে জন্য তাঁকে ১৯৩৮ সালে আরও কয়েকজন বিশিষ্ট বলশেভিক নেতার সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল]। সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম কংগ্রেসে নিকিতা খ্রুশ্চভ যখন স্তালিনের সমালোচনা করে বক্তৃতা করেন, তখন আমি একটুও অবাক হইনি।

তো আমার উপলব্ধি হয় যে আমি কোনো পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক ধারার অন্তর্ভুক্ত হব না। আমি সিদ্ধান্ত নিই, মার্ক্সীয় বিশ্লেষণ থেকে পাওয়া ভাবনা ও ধারণাগুলোর সঙ্গে অন্যান্য ধারার রাজনৈতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তাভাবনার সংমিশ্রণের ভিত্তিতে আমাকে চলতে হবে। অ্যাডাম স্মিথের অর্থনৈতিক ও দার্শনিক ভাবনার প্রচণ্ড প্রভাব পড়েছিল আমার ওপর। তারপর জন স্টুয়ার্ট মিল। আমাকে আমার নিজের আগ্রহের বিষয়গুলোর সঙ্গে এই সবকিছুর সংমিশ্রণ ঘটাতে হয়েছে। গণিতের পাশাপাশি সংস্কৃত ছিল আমার প্রিয় বিষয়। আমি ধ্রুপদি সংস্কৃত জানতাম, সেসবের মধ্যে লোকায়তও ছিল, যা কিনা বস্তুবাদী ঘরানার জিনিস। অর্থাৎ, আমার ওপর নানা ধারার, নানা ধরনের চিন্তাভাবনার প্রভাব পড়েছিল। প্রাচীন সংস্কৃতের যে বিদ্যা আমি পেয়েছিলাম, তার সঙ্গে যাকে বলে বামপন্থী বা প্রগতিশীল ইউরোপীয় চিন্তাভাবনা, আমার মননে সেটার বেশ ভালো সংমিশ্রণ ঘটেছিল।

আইজাক চটিনার: গত পাঁচ বছরে ভারত যেদিকে মোড় নিয়েছে, তা লক্ষ করে আপনি কি এখন ভারত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং এর সংবিধান সম্পর্কে ভিন্নভাবে চিন্তা করছেন? নাকি এসব একেবারেই পরবর্তীকালের উপলব্ধি?

অমর্ত্য সেন: আমার মনে হয়, একদমই পরবর্তীকালের উপলব্ধি। ভারতের সংবিধান সভার বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বলা যায়, ভারতীয় সংবিধান যথেষ্ট ভালো ছিল। সংবিধান কেমন হওয়া উচিত, সংবিধান সভায় সে বিষয়ে খুব ভালো আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছিল। তবে আমার মনে হয়, সংবিধান সভা ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও একটা বিষয় বিবেচনায় রাখেনি। সেটা হলো, যদি কখনো কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা দল, আন্দোলন বিপুল জনসমর্থন নিয়ে বেরিয়ে আসে, ভারতের হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে যেটা ঘটেছে, তাহলে তারা সেটাকে নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে। আমার মনে হচ্ছে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই ব্যাপারে ভীষণ মন্থর ও বিভক্ত। তা ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট ভালো কাজ যা-ই করে থাকুন না কেন, বহুত্ববাদের দেখভাল যেভাবে করতে পারতেন, সেভাবে পারেননি।

আজ সবকিছুতেই উন্নাসিক, কট্টর হিন্দুত্ববাদী চিন্তাভাবনার আধিপত্য। আজ ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও নেতারা সবাই হিন্দু। কিন্তু ধরা যাক, আজ থেকে ১২ বছর আগে, ২০০৭ সালে রাষ্ট্রপতি ছিলেন একজন মুসলমান, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শিখ এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রধান নেতা ছিলেন খ্রিষ্টান। সংসদ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ছিলেন বটে, কিন্তু তাঁরা নিজেদের চিন্তাভাবনা অন্য সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেননি। কিন্তু আজকে আমরা এমন অবস্থানে পৌঁছে গেছি যে একজন মুসলমানকে গরু খাওয়ার জন্য নির্যাতন করা হচ্ছে। কিন্তু আপনি যদি প্রাচীন সংস্কৃত লেখাপত্রের দিকে তাকান, যেমন বেদের দিকে, তাহলে দেখবেন, সেখানে গরু খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল না। সুতরাং বলা যায়, স্বাধীনতার পরের ভারতে শুধু ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রেরই অবক্ষয় ঘটেনি, হিন্দু ভারতের ঐতিহ্য সম্পর্কে বোধেরও অবক্ষয় ঘটেছে।

আমরা এই সত্যও উপেক্ষা করে যাচ্ছি যে প্রাচ্য জগতে ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল; খ্রিষ্টীয় প্রথম সহস্রাব্দের আন্তরাজ্য যোগাযোগের অন্যতম ভাষা ছিল সংস্কৃত। এর কারণ ছিল বৌদ্ধচিন্তার প্রভাব। এক হাজার বছর ধরে ভারত ছিল একটা বৌদ্ধ দেশ। এটাও আমাদের ঐতিহ্য।

পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল নালন্দা; এর শুরু হয়েছিল পঞ্চম শতাব্দীতে। সেখানে শুধু ভারতীয় ছাত্ররাই পড়ত না; চীন, জাপান, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকেও ছাত্ররা নালন্দায় পড়তে আসত। আমরা যখন পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সহযোগিতায় সেই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলাম, তখন ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার এটাকে আর কোনো বিশিষ্ট বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় হতে দিল না; ক্রমেই এটাকে একটা হিন্দু প্রতিষ্ঠানের মতো চেহারা দেওয়া হলো। আমি নিজেও একজন হিন্দু [হাসি]। হিন্দুধর্ম নিয়ে আমার কোনোই আপত্তি নেই। আসলে, অদ্ভুত লাগবে শুনতে, আমার বয়স যখন কম ছিল, তখন প্রকাশনা সংস্থা পেঙ্গুইন আমার ঠাকুরদাকে হিন্দুধর্ম নিয়ে একটা বই লিখতে বলেছিল। ঠাকুরদা বইটা লিখেছিলেন, তাঁর ইংরেজি জ্ঞান ছিল সীমিত; তাই আমাকে সে বইটা সম্পাদনা ও অনুবাদ করতে হয়েছিল। আমার প্রথম সম্পাদিত ও অনূদিত বইটাই ছিল হিন্দুধর্ম সম্পর্কে একটা বই। ঠাকুরদা সব সময় বলতেন, নেহরুর আমলে ভারতের সমস্যা হলো হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সহিষ্ণুতার কথাই শুধু বলা হয়, কিন্তু সহিষ্ণুতার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে কাজ করা।

আইজাক চটিনার: আমি লক্ষ করেছি, একজন মানুষের বহুমুখী পরিচয়ের বিষয়টা আপনার লেখায় বারবার ঘুরেফিরে আসে…।

অমর্ত্য সেন: একদম ঠিক। এটা খুবই কেন্দ্রীয় বিষয়। আর আপনি যদি এটা নিয়ে ভাবেন, দেখবেন, অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে। একসময় বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ভারতের চেয়ে কম ছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশের গড় আয়ু ভারতের চেয়ে পাঁচ বছর বেশি। আর হিন্দুত্ববাদী চিন্তায় যে ধরনের সংকীর্ণতা আছে, বাংলাদেশে মুসলমানদের চিন্তায় সেই রকমের সংকীর্ণতা নেই। আমার মনে হয়, বহুমুখী পরিচয় বাংলাদেশের জন্য অনেক উপকারী হয়েছে। ভারতে যত দিন পর্যন্ত বহুমুখী পরিচয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংকুচিত করার চেষ্টা ছিল না, তত দিন সে দেশেও পরিস্থিতি বাংলাদেশের মতোই ছিল। আরও আগেও সেটা ছিল। ১৯২০–এর দশকে বেশ শক্তিশালী একটা হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন ছিল। ফ্যাসিস্ট হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) এক সদস্য মহাত্মা গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। সেই আরএসএসই আজকের বিজেপিকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু তখন তারা ক্ষমতায় ছিল না; তারা ছিল একদম প্রান্তিক একটা শক্তি, তাদের তরফ থেকে আমরা কোনো হুমকি অনুভব করিনি। সেই প্রান্তিক শক্তিই দিনে দিনে শক্তি সঞ্চয় করেছে, সর্বশেষ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে। তাদের সে বিজয়ের আংশিক ভিত্তি ছিল হিন্দুত্ববাদের রাজনৈতিক ফলপ্রসূতা।

বহুধর্মভিত্তিক, বহুজাতিগোষ্ঠীভিত্তিক ভারতের বিষয়ে মোদির দূরদৃষ্টি নেই। তিনি ছেলেবেলা থেকেই আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত, ওই গোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি শক্তিশালী ও ভীষণভাবে সফল। ফলে নির্বাচনে মোদি একটা ফ্যাক্টর ছিল। তাদের বিপুল অঙ্কের অর্থও ছিল। তাদের প্রতি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বেশ বড় একটা অংশের সমর্থন ছিল। তাদের বড় অর্থদাতা হিসেবে পরিচিতি দু-তিনটা ব্যবসায়ী গোষ্ঠী নয়, পুরো ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বেশ বড় অংশের সমর্থন তারা পেয়েছে। এতে আমি বেশ অবাক হয়েছি। নির্বাচনের সময় তারা অন্যান্য দলের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ ও অন্যান্য পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। তারা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচনে জিতেছে বটে, কিন্তু নির্বাচনী ব্যবস্থাটা ত্রুটিপূর্ণ। মোদি যে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন, সেটা মোট ভোটের ৪০ শতাংশের চেয়েও কম। এটা যে একটা ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থা, এমনকি আমেরিকার প্রেক্ষাপটেও, সে কথা আমি লিখেছি।

আইজাক চটিনার: হ্যাঁ, ট্রাম্প কিংবা এরদোয়ান, ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে যাঁদের বেশ কষ্ট করতে হয়েছে, মোদি তাঁদের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয়; ভারতের বিপুলসংখ্যক মানুষ তাঁকে সমর্থন করে।

অমর্ত্য সেন: তা কিন্তু পরিষ্কার নয়। ভারতের লোকসংখ্যা ১০০ কোটির বেশি। তাদের মধ্যে ২০ কোটি মুসলমান। ২০ কোটি দলিত, বা যাদের বলা হয় অস্পৃশ্য। ১০ কোটি আছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, যাদের বলা হতো শিডিউল ট্রাইবস; ভারতে তাদের অবস্থা দলিতদের চেয়েও খারাপ। তা ছাড়া হিন্দু জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ আছে, যারা মোদিকে সমর্থন করে না। তাদের অনেককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, অনেককে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে এটা বলা কঠিন যে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মোদিকে সমর্থন করে। সব সংবাদপত্র সরকারি বিজ্ঞাপন পায় না; আর যেসব সংবাদপত্রকে সরকার পছন্দ করে না, তারা সম্ভবত বেসরকারি বিজ্ঞাপনও বেশি পায় না। সরকারের সৃষ্টি করা নানা সমস্যার কারণে টিভি চ্যানেল বা সংবাদপত্রের পক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করা ভীষণ কঠিন হয়ে উঠেছে।

জন স্টুয়ার্ট মিলের কাছ থেকে যে বড় জিনিসটা আমরা জেনেছি, তা হলো, গণতন্ত্র মানে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করা। আপনি যদি আলাপ-আলোচনাকে ভীতির ব্যাপারে পরিণত করে তোলেন, তাহলে আপনি গণতন্ত্র পাবেন না, তা সে ভোট আপনি যেভাবেই গণনা করেন না কেন। এই কথাটা এখন ভীষণভাবে সত্য। মানুষ এখন কথা বলতে ভয় পায়। আমি আগে কখনো এ রকম দেখিনি। কেউ যখন টেলিফোনে আমার সঙ্গে কথা বলার সময় সরকার সম্পর্কে সমালোচনামূলক কিছু বলে, তখন বলে, ‘এ বিষয়ে সাক্ষাতে কথা বললেই ভালো হয়, কারণ কেউ নিশ্চিত আড়ি পেতে আমাদের কথা শুনছে।’ সত্যিকারের গণতন্ত্র এইভাবে চলে না। দেশের অধিকাংশ মানুষ কী চায়, তা বোঝার পন্থাও এটা নয়।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মশিউল আলম