মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে আবার জেগে উঠতে যাচ্ছে উদার গণতন্ত্র

মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে কি অবশেষে জনতুষ্টিবাদ পতনের দিকে গড়াতে শুরু হয়েছে? এমন একটি প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। পোল্যান্ডে বিরোধীরা সিনেট দখল করেছে এবং গত মে মাসে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির (পিআইএস) ভোটপ্রাপ্তি ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।

অন্যদিকে হাঙ্গেরির স্থানীয় নির্বাচনে উদারপন্থী বিরোধীরা রাজধানী বুদাপেস্ট ও অন্য দশটি শহরে মেয়রের পদ পুনর্দখল করতে পেরেছে। এসব নির্বাচনের ফল দেখে কি এটা বলা যাবে যে এ অঞ্চলের রাজনীতি মোড় নিতে যাচ্ছে? সম্ভবত বলা যাবে। 

পোল্যান্ডে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের (যেটি ‘সেজম’ নামে পরিচিত) দখল ধরে রাখা নিঃসন্দেহে ক্ষমতাসীন পিআইসের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা জারোসলাভ কাচজিনস্কি এর চেয়ে ভালো ফল আশা করেছিলেন। কিন্তু ফল আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে গেছে। সিনেট পিআইএসের হাতছাড়া হওয়ার অর্থ হলো দলটি কোনো বিতর্কিত আইন সিনেটে দুই পক্ষের বিতর্ক ছাড়া আর পাস করতে পারবে না। এটি উদারপন্থীদের জন্য একটি বড় বিজয়। 

 এর মধ্য দিয়ে পোল্যান্ডের বিরোধী দলগুলোর আবার সামনে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনে সব শহরের ভোট মিলিয়ে বিরোধীরা নয় লাখের বেশি ভোট পেয়েছে। তার মানে আগামী বসন্ত মৌসুমে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের জিতে যাওয়ার একটা জোরালো সম্ভাবনা আছে। 

ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ও পোল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক ইতিমধ্যে ভোটারদের বিস্মৃতির মধ্যে পড়ে গেছেন। সাম্প্রতিক একটি জরিপে তার জনপ্রিয়তা তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে দেখা গেছে। এদিকে বিরোধীদের হাতে গুছিয়ে ওঠার মতো যথেষ্ট সময় আছে। 

সবচেয়ে বড় বিরোধী দল সিভিক প্লাটফর্ম (পিও) তার আগের জনপ্রিয়তা মোটামুটি ধরে রেখেছে। সমমনা দলগুলোর জোট সিভিক কোয়ালিশন ২৭ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়েছে। আগামী নির্বাচনে এই জোট অন্য উদারপন্থী দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত হলে একটি বড় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। 

ছোট দলগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ার কারণে পিআইএস এখন হুমকির মুখে আছে। ধীরে ধীরে পিআইএসের নীতির ওপর থেকে উদার-রক্ষণশীল ভোটারদের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। দলটি ক্ষমতায় আসার পর নাগরিকদের বেশ কিছু আর্থিক সুবিধা দিয়েছিল। এতে দলটির প্রতি তাদের সমর্থন বেড়েছিল। কিন্তু ভোটারদের মনে এখন এই ভয় ঢুকে গেছে যে তারা দেশটিতে এক দলের শাসন কায়েম করার মতলব আঁটছে। 

জরিপে দেখা যাচ্ছে আগামী চার বছরে পিআইএস সরকার শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবে না। পিআইএস-কে আবার ক্ষমতায় আসতে হলে অর্থনৈতিক গতি ঠিক রাখতে হবে এবং জনমতের বিরুদ্ধে যাবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো পিআইএস–কে টিকে থাকতে হলে তার সামনে কর্তৃত্ববাদী হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। 

অনেকে অবশ্য মনে করেন, পিআইএস এখনো নিজেদের কাঠামোর মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে এবং কিছু উদার নীতি অনুসরণ করে নিজেদের ‘সভ্য’ করে তুলতে পারে। 

কিন্তু এটি একেবারেই অমূলক ভাবনা। কারণ তারা যদি এখন দলের নীতির মধ্যে উদারপন্থা ঢোকানোর চেষ্টা করে, তাহলে কট্টর সমর্থকেরা
তাদের নীতিতে অবিচল থাকা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়বে। এতে দলের অন্ধ সমর্থকেরা বিরাগভাজন হতে পারে। 

অন্যদিকে উদার নীতি গ্রহণ করলেও উদারপন্থী ভোটাররা দলটিকে সহজেই বিশ্বাস করবে তা মনে করার কোনো কারণ নেই। এই দিক বিবেচনা করলে ধরে নেওয়া যায় জনপ্রিয়তা বাড়ুক আর কমুক পিআইএস সহসাই তাদের রক্ষণশীল নীতি থেকে সরে আসবে না। 

হাঙ্গেরির বেলায় দেখা যাচ্ছে স্থানীয় নির্বাচনে বিরোধীদের যে জনপ্রিয়তা প্রমাণিত হয়েছে, তাতে রক্ষণশীল সরকার অবশ্যই চিন্তিত হয়েছে। হাঙ্গেরির বিরোধী দলগুলো পরিপূর্ণ উদার গণতন্ত্রপন্থী বলে ভিক্তর ওরবান সরকারের চিন্তাটাও বেশি। উদারপন্থীরা সংগঠিত হতে থাকলে যে জনজোয়ারের সৃষ্টি হবে, রক্ষণশীলেরা তা সামাল দিতে পারবে কি না, সেটিই তাদের মাথাব্যথার বড় কারণ। 

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

স্লাভোমির সিয়েরাকোভস্কি ওয়ারশর ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির পরিচালক