মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ

‘সাফল্যের জন্য লিফট নেই, সিঁড়ি ভাঙতেই হবে’—এই স্লোগান দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘ফিট ইন্ডিয়া’ শীর্ষক স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক একটি অভিযান শুরু করেছিলেন। ভারতের জনগণ তাঁর সেই স্লোগানকে কতটুকু গ্রহণ করেছে, তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ যে কার্যত এমনই একটি স্লোগান সর্বান্তকরণে আত্মস্থ করেছে, তা ইতিমধ্যে সন্দেহাতীত ও তর্কাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সেখানে গেলে দেখা যাবে, তারা ৯ তলা ভবনে কোনো লিফটই রাখেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ স্লোগানটিকে নিহিতার্থকে নয় বরং আক্ষরিক অর্থেই গ্রহণ করেছে।

নবম তলায় সিঁড়ি ভেঙে উঠতে উঠতে মনে হতে পারে, ‘সিঁড়ি ভাঙতেই হবে’ বাণীটির মর্মার্থ শিক্ষার্থীদের ‘পায়ে-কলমে’ শেখানোর জন্যই কোনো লিফট রাখা হয়নি। সাফল্যের চূড়ায় ওঠার প্রশিক্ষণ হিসেবেই হয়তো পিঠে বইবোঝাই স্কুলব্যাগ নিয়ে ছেলেমেয়েদের সিঁড়ি ভেঙে নবম তলায় উঠতে হয়। শিক্ষার্থীদের এই ‘ওপরে ওঠার প্রশিক্ষণ’ দেওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ এতটাই অনড় যে, এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা অভিভাবকদের সন্তানদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে এবং শিক্ষকেরাও চাকরি রক্ষায় এ বিষয়ে চুপ থাকাকেই দুরস্ত মনে করেন। সরকারের ইমারত নির্মাণ বিধি অনুযায়ী, ১৮ মিটার বা ৬০ ফুটের (ছয়তলা) ওপর কোনো ভবন নির্মাণ করতে হলে লিফট থাকাটা বাধ্যতামূলক। শিশু–কিশোরদের ব্যবহার্য এই ভবনের নকশায় লিফট রাখার কথাও ছিল। কিন্তু আইন থাকলেই তা মানতে হবে—এমন কথা কর্তৃপক্ষ মানতে রাজি হয়নি। 

দেখা যাচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকা আয়। এ ছাড়া ব্যাংকে স্কুলের নামে রয়েছে ২০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত। কিন্তু বলা হচ্ছে, লিফট বসানোর টাকা নেই। অভিভাবকেরা বলছেন, সন্তানদের এই কষ্ট দেখে তাঁরা স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে লিফট বসাতে বলেছিলেন। এতে কমিটির সদস্যরা তাঁদের ‘অন্য স্কুল-কলেজ দেখতে’ বলেছেন। 

 আইনবহির্ভূতভাবে লিফট ছাড়াই কীভাবে ৯ তলা ভবন উঠল, এমন প্রশ্নের সদুত্তর গণপূর্ত অধিদপ্তর ও রাজউক দিতে পারেনি। এর দায় এ ঠেলেছে ওর দিকে, ও ঠেলেছে এর দিকে। তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, পুরো বিষয়টির নিয়ন্ত্রণ ছিল স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আওলাদ হোসেনের হাতে। তিনি প্রায় ১১ বছর ওই কমিটির সভাপতি। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতিগত কারণে অতীতে লিফট বসানোর দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। তবে সেই ‘পরিস্থিতি’ সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি। 

তার মানে সংশ্লিষ্ট কেউই লিফট না থাকার দায় নিতে চান না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পর্যাপ্ত তহবিল থাকার পরও লিফট নেই এবং এতে ছেলেমেয়েদের নিদারুণ কষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি দুর্ভাবনার।