সিরিয়া যুদ্ধে ভুল করেছেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্স ফাইল ছবি
ডোনাল্ড ট্রাম্প। রয়টার্স ফাইল ছবি

সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে মারাত্মক ভুল করেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ট্রাম্প ভুল স্বীকার করার জন্য পরিচিত নন, সুতরাং তিনি সিরিয়ার বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের চেষ্টা করবেন, এমন সম্ভাবনা কম। তবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ইচ্ছেকে মেনে নিয়ে ট্রাম্প আমাদের কুর্দি মিত্রদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে কলঙ্কিত করেছেন। তাঁর এই পদক্ষেপের অর্থ হলো, আমরা আগে যেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছি, যেমন আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করা, ইসরায়েলকে রক্ষা করা—এগুলো এখন বেশ কিছু সন্দেহভাজন নেতার হাতে রয়েছে। গত বছরই ট্রাম্প সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে তাঁর প্রতিশ্রুতির বিষয়টি আবার নিশ্চিত করেন এবং তিনি ২০১৮ সালের সন্ত্রাসবাদবিরোধী জাতীয় কৌশলে লিখেছিলেন: ‘আমি আমেরিকান জনগণের কাছে এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছি যে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষায় যত রকম প্রয়াস আছে, তার কোনোটিই ছাড়া হবে না। দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় সব চেষ্টা চালানো হবে।’

সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াই যেকোনো প্রেসিডেন্টের মূল ফোকাস এবং ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে (এবং ভুলভাবে) আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাঁর নিজস্ব প্রশাসনের সাফল্য এনে দিয়েছেন। সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস এবং আমাদের অন্য সহযোগীদের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে গঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘গ্লোবাল কোয়ালিশন টু ডিফিট আইসিস’ সিরিয়ায় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোকে গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন। গত ডিসেম্বর মাসে ট্রাম্পের সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পরও (যে ঘোষণা তিনি সে সময় কার্যকর করেননি) যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সন্ত্রাসবাদবিরোধী মিশনের অংশ হিসেবে সিরিয়ায় মার্কিন সেনা মোতায়েন রেখেছিল। এখন আমরা সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমাদের লোকবল উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছি এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানের জন্য এবং আমাদের দুই বড় শত্রু রাশিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বাইরে থেকে লোকবল নিয়োগ করেছি। 

আইএসআইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হওয়া কয়েক শ বাহিনী এখন তুরস্কের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং নিজেদের রক্ষা করছে। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, আইএসের বিরুদ্ধে কুর্দিদের অভিযানের গতি ‘উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে’, কারণ কুর্দিরা আইএসের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধকে এখন কম গুরুত্ব দিচ্ছে। আর এর পেছনের কারণ হচ্ছে, তারা আমাদের সমর্থন হারিয়েছে। এর ফলে এরদোয়ানের বাহিনীর হাত থেকে নিজেদের রক্ষার ব্যাপারে তাদের মনোযোগ দিতে হচ্ছে। এরদোয়ান সিরিয়ার কুর্দিদের সন্ত্রাসবাদী হিসেবে দেখেন, যারা তুরস্কের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ। তাঁর এখন অগ্রাধিকার হচ্ছে সিরিয়ান কুর্দি বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে তাদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া। এখন আমাদের উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার সেখানে আমাদের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কেননা, সিরিয়ায় আইএসআইএসের বিরুদ্ধে আমাদের মিশন এখনো শেষ হয়নি এবং আমরা যদি চলে যাই, তাহলে সেখানে আইএস জঙ্গিদের ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার ঝুঁকি বাড়বে। 

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কারণে, কিছু কিছু জায়গায় আইএস জঙ্গিরা মুক্তি পেয়েছে, কারণ যে কুর্দি যোদ্ধারা কারাগার এবং শিবিরের রক্ষী ছিল, তাদের বদলি করতে হয়েছে। আমার আশঙ্কা, আরও অনেক আইএস যোদ্ধা এভাবে মুক্তি পেয়ে যাবে। ট্রাম্পের এই একগুঁয়ে সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে ভবিষ্যতে অংশীদারদের প্রভাবিত করার জন্য আমাদের ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হবে। সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে আমরা আর কাউকে পাশে পাব না। 

গত সপ্তাহে, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের কথা উঠলে বলতে হয় যে ‘সব রাস্তা যায় পুতিনের দিকে।’ তিনি ঠিকই বলেছেন, বিশেষত যখন মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের জন্য রাশিয়ার লক্ষ্যকে ট্রাম্প সমর্থন করেন। ২০১৫ সালে বাশার আল-আসাদ সরকারিভাবে সিরিয়ায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অনুরোধ করার পর থেকে ভ্লাদিমির পুতিন চলমান সংঘর্ষে বসের ভূমিকা পালন করছেন। আসাদের প্রতি সুস্পষ্ট পক্ষপাতিত্ব সত্ত্বেও সিরিয়ার যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ‘মধ্যস্থতা’ করার প্রস্তাব দিয়ে নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। 

পুতিন সিরিয়ার মূল খেলোয়াড়দের সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার সোচিতে ইরান, তুরস্ক এবং সিরিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। পুতিনের এই সপ্তাহে এরদোয়ানের সঙ্গে আবার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আসলে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সুবিধা নিচ্ছে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রকে একজন অনির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে এবং নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যের বন্ধু হিসেবে চিত্রায়িত করছেন। ট্রাম্পের এখন উচিত হবে তাঁর নিজের ভুল শুধরে নেওয়া, অর্থাৎ সিরিয়ায় ফের সেনা মোতায়েন করা। তবে তিনি এমনটা করবেন—তা মনে হয় না। 

সিএনএন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

সামান্থা ভিনোগ্রাদ সিএনএনে কর্মরত জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক