চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর দ্বন্দ্ব

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর পাশাপাশি অবস্থিত দুটি জেলা। এ দুই জেলার সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মেহেরপুরের পরিবহন মালিক সমিতির আওতাভুক্ত কোনো দূরপাল্লার বাস চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। কারণ, চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক–শ্রমিক ঐক্য পরিষদ মেহেরপুর থেকে ঢাকা, খুলনা ও বরিশালের পথে কোনো বাস চলাচল করতে দিচ্ছে না। অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গা মালিক সমিতির অন্তর্ভুক্ত যেসব বাস মেহেরপুর থেকে চলাচল করে, মেহেরপুরের মালিক সমিতি সেগুলোর চলাচলে বাধা দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেপুরের মধ্যেও বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

প্রতিবেশী দুই জেলার সড়ক পরিবহন খাতের মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনের মধ্যকার সম্পর্ক জটিল আকার ধারণ করেছে কিছু অদ্ভুত কারণে। মেহেরপুরে একটি বাস টার্মিনাল নির্মিত হয়েছে—এটা খুবই প্রয়োজনীয় ছিল, কেননা টার্মিনালের অভাবে শহরের বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে বাস রেখে যাত্রী তোলা–নামানো, কাউন্টার বসিয়ে টিকিট কেনাবেচা ইত্যাদির ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, যানজট লেগে যায়। তাই যখন একটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হলো, তখন পরিবহনমালিক, শ্রমিক, যাত্রীসাধারণ সবারই খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা গেল, ওই বাস টার্মিনাল ব্যবহার করতে কেউ আগ্রহী নয়। কারণ, টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়েছে শহরের কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে; যাত্রীরা সেখানে যেতে চায় না; তারা বাসে ওঠা–নামা করতে চায় সড়কের পাশেই। এ নিয়ে মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার সড়ক পরিবহন মালিক–শ্রমিক সমিতির মধ্যে দ্বন্দ্ব। এক পক্ষ দাবি করছে অন্য পক্ষের সব বাসকে টার্মিনাল ব্যবহার করতে হবে। উভয় পক্ষ টার্মিনাল ব্যবহার করতে রাজি নয়। কারণ, টার্মিনালে যাত্রী কম, সড়কের পাশেই যাত্রী বেশি।

এ সমস্যা সমাধান করতে পারা উচিত স্থানীয় জেলা প্রশাসনের। কিন্তু তারা উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করতে এখন পর্যন্ত সফল হয়নি। সমঝোতায় রাজি না হলে অবশ্যপালনীয় নিয়মটি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করা উচিত, টার্মিনাল ছাড়া আর কোথাও বাস দাঁড় করিয়ে রেখে যাত্রী ওঠানো–নামানো চলবে না; সব বাস কোম্পানির টিকিট কাউন্টারগুলোকে বাস টার্মিনালেই স্থানান্তর করতে হবে।

আরও একটা সমস্যা হলো ট্রিপের সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি হয়ে গেছে বাসের সংখ্যা। ট্রিপ বণ্টনের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের মধ্যে যে বোঝাপড়া প্রয়োজন, তারও অভাব দেখা দিয়েছে। কিন্তু এটা এমন কোনো গুরুতর সমস্যা নয়, যার কোনো সমাধান নেই। এ জন্য ন্যায্যতার ভিত্তিতে উভয় পক্ষকে একটি সাধারণ নিয়ম মেনে নিতে হবে। আর সড়কের বিভিন্ন স্থানে যেসব লাঠিয়াল বাহিনী প্রতিটি বাস থেকে চাঁদাবাজি করে, তাদের প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। উভয় পক্ষকে উপলব্ধি করতে হবে, তাদের দ্বন্দ্বের জেরে যাত্রীসাধারণের ভোগান্তি সৃষ্টি করার অধিকার কারও নেই।