প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে একজন ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষমতাসীন মহলে বেশ তোলপাড় লক্ষ করা যাচ্ছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিহত সুমন চন্দ্র দাস তাদের কর্মী নন বলে দাবি করলেও সেই ঘটনায় আহত ছাত্রলীগ নেতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা খোলা চিঠিতে তাঁকে ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী বলে দাবি করেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছাত্রলীগকে সামলানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 
এই প্রেক্ষাপটে শাহজালালের ঘটনা প্রসঙ্গে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও বার্তায় সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারকে যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা বিবেচনার দাবি রাখে। তিনি বলেছেন, ‘সন্ত্রাসী কোন দলের তা দেখার কথা নয়। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেবেন। কারও মুখের দিকে তাকানো যাবে না।’ এর আগেও প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল সম্পর্কে অনুরূপ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে যে নির্মম সত্যটি বেরিয়ে আসে তা হলো সন্ত্রাসীদের ধরার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দলমতের ঊর্ধ্বে থাকতে পারছে না, যে কারণে দেশের প্রধান নির্বাহীকে আশ্বস্ত করতে হচ্ছে। কিন্তু আইনের শাসনের পূর্বশর্তই হলো সব ধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। আইন সবার প্রতি সমগতিতে চলবে, কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি দেখবে না। কারও প্রতি পক্ষপাত দেখালে সেটি হবে আইনের ব্যত্যয়।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এই ব্যত্যয় বা অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে, কোনো অপরাধের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা জড়িয়ে পড়লে তাঁদের বঁাচাতে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী সিলেটের পুলিশ কমিশনারকে যে নির্দেশ দিয়েছেন, সেটি তখনই অর্থবহ হবে, যখন সেখানকার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্ভয়ে কাজ করতে পারবেন। ক্ষমতাসীন দলের কাউকে পাকড়াও করলে তাঁদের হয়রানির শিকার হতে হবে না।