অভিভাবকের কাছে খুদে বার্তা

যখন বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, ঠিকমতো ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না; তখন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও তাঁদের অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে খুদে বার্তার মাধ্যমে অভিভাবকদের অবহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এটি জানানো হচ্ছে খুদে বার্তার মাধ্যমে। ইংরেজি ও মার্কেটিং বিভাগে পরীক্ষামূলকভাবে কর্মসূচিটি চালু করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সব বিভাগেই বাস্তবায়িত হবে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের এ উদ্যোগ বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। বছর দুই আগে সেশনজট কমাতে শিক্ষাপঞ্জি তৈরিসহ নানামুখী যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, এটি তারই অংশ। এতে অভিভাবকেরা শিক্ষার্থীর শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি ও পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য পাবেন। কোনো শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত থাকলে তাও অভিভাবকদের জানানো হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের পাঠদানে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনলাইনেও সেটি দেখতে পারবেন। তবে কোনো অনুপস্থিত শিক্ষার্থী পরবর্তীকালে অনলাইনে সেটি দেখতে চাইলে তাঁকে অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষকদের পাঠদান সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফিডব্যাক বা মতামত নেওয়ারও ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরাও শিক্ষককে মূল্যায়নের সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এটি ব্যতিক্রমই বটে। 

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৬টি বিভাগ ও ৭টি অনুষদে সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থী ও ২৬৮ জন শিক্ষক আছেন। বাংলাদেশের মানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের এই অনুপাতকে অস্বাভাবিক বলা যাবে না। কিন্তু নানা অপতৎপরতার কারণে অতীতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ও সেশনজটের কবলে পড়ে। ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে, এমনকি ২০১২ সালে একজন শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। 

আমরা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ কর্মসূচি একটি বা দুটি বিভাগে চালু করলে হবে না, সব বিভাগেই চালু করা প্রয়োজন। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে যেমন অভিভাবকেরা জানতে পারবেন, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যকার দূরত্ব কমবে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির নামে যে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, তার সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। সেখানে ভিন্নমত প্রকাশের কারণে আবরার ফাহাদ নামের এক শিক্ষার্থীকে জীবন দিতে হয়েছে সরকারি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের হাতে। ছাত্ররাজনীতির নামে এ অপতৎপরতা বন্ধ হোক। সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি অনুসৃত হোক।