স্বস্তি ফিরল ক্রিকেটে

ক্রিকেটারদের তরফে কিছু দাবিদাওয়া ওঠা এবং তা পূরণের দাবিতে ধর্মঘটের কারণে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, গত রাতে আলোচনার মাধ্যমে তা কেটে গেছে। তবে সংকটের শুরুতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, তা খুবই হতাশাজনক। নভেম্বরের শুরুতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভারত সফরের আগে এমন একটি পরিস্থিতি সামাল দিতে বোর্ডের তরফে আরও দায়িত্বশীল ও সংবেদনশীল আচরণ প্রত্যাশিত ছিল। 

গত সোমবার অনেকটা আকস্মিকভাবেই ক্রিকেটারদের তরফে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। গতকাল এর সঙ্গে আরও দুটি দফা যুক্ত করা হয়। ক্রিকেটারদের তরফে যে দাবিগুলো তোলা হয়েছে, ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট মহলে তা যৌক্তিক হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারের কাছে যেগুলো সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, তাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। ক্রিকেটাঙ্গনের বিভিন্ন পর্যায়ের নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও কম হয়নি। 

ক্রিকেটারদের ১৩ দফা দাবিদাওয়ার মধ্যে নিজেদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়গুলো যেমন রয়েছে, তেমনি আছে সব পর্যায়ের খেলোয়াড়সহ দেশের কোচ, আম্পায়ার, ফিজিও, ট্রেইনার ও মাঠকর্মীদের বেতন–ভাতা বৃদ্ধির দাবিও। একই সঙ্গে তাঁরা সুনির্দিষ্টভাবে ক্রিকেটাঙ্গনের কিছু বিধিবিধান পরিবর্তন, মাঠ ও অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন এবং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করার দাবি তুলেছিলেন। বোঝা যাচ্ছে, ক্রিকেটারদের এই দাবিদাওয়া উত্থাপন ও ধর্মঘটে যাওয়া তাঁদের মধ্যে জমে থাকা দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও অসন্তোষের প্রকাশ।

ক্রিকেটারদের দাবিদাওয়া উত্থাপন ও ধর্মঘটের ঘোষণার পর পরিচালকদের নিয়ে এক সভায় বসেছিলেন বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান। এরপর সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে ঠিক সভাপতিসুলভ বলা যাবে না। তিনি এই ধর্মঘটের পেছনে ষড়যন্ত্র দেখেছেন এবং বলেছেন, ক্রিকেটাররা ষড়যন্ত্রের ছকে পা দিয়েছেন। আমাদের ক্রিকেটাররা দেশের জন্য খেলেন এবং তাঁরা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনেন। এই ক্রিকেটাররা সবাই ‘ষড়যন্ত্রের ছকে পা দিয়েছেন’—এমন একটি মন্তব্য খুবই দুঃখজনক এবং ক্রিকেটারদের জন্য অসম্মানজনক। বিসিবির সভাপতি তাঁর পদের কারণেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের অভিভাবক। এটা কোনো অভিভাবকসুলভ অবস্থান বা মন্তব্য হতে পারে না। সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেটার ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে যেভাবে বোর্ড সভাপতি কথা বলেছেন, সেটাও শোভন হয়নি। 

যেকোনো সমস্যা বা দাবিদাওয়া নিয়ে অচলাবস্থা দূর করার পথ হচ্ছে আলাপ-আলোচনা। বিসিবির উচিত ছিল শুরুতেই খেলোয়াড়দের সঙ্গে বসে আলোচনা করা এবং দাবিগুলো কতটুকু যৌক্তিক, সেটা নির্ধারণ করা। অবশেষে সেটাই হয়েছে। দুই পক্ষ একসঙ্গে বসে বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধান করেছে, যা হয়তো আগেই সম্ভব ছিল। 

বিসিবি খেলোয়াড়দের প্রায় সব দাবি মেনে নিয়েছে। এ জন্য বিসিবি ও খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ জানাই। এখন ভারতের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের দিকে সবাই মনোনিবেশ করবে। আমরা আরও আশা করব, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। আর কোনো সমস্যা বা মতপার্থক্য তৈরি হলেও আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে তা দ্রুতই নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে। কারণ, তা হতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের মঙ্গলের জন্য।