ফসলি জমির মাটি-বালু তোলা

বুধবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা একটি প্রভাবশালী মহল কিছু সরকারি জমি ও কিছু ব্যক্তিমালিকানাধীন ফসলি জমি থেকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি ও বালু উত্তোলন করে আসছে। এসব বালু ও মাটি রেললাইনের কাজ পাওয়া একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করছে মহলটি। দীর্ঘদিন ধরে মাটি ও বালু উত্তোলনের ফলে স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ছয় হেক্টর ফসলি জমি বিনষ্ট হয়েছে। জমির পাশে অবস্থিত ৩৩ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিও এখন হুমকির মুখে রয়েছে। উত্তোলনকাজে বাধা দিতে গেলে উল্টো কৃষকদের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

অবস্থা তো অনেকটা মগের মুল্লুকের মতো। যাঁর যা খুশি করছেন, কিন্তু কারও যেন কিছু বলার নেই। স্থানীয় প্রশাসন তাহলে কী করেছে? এভাবে এত দিন ধরে ফসলি জমি থেকে মাটি ও বালু তোলা হচ্ছে, তা কি প্রশাসনের চোখে পড়েনি? প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা মাটি ও বালু উত্তোলনে সরাসরি জড়িত। তবে তাঁদের পেছনে রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা।

প্রশ্ন হচ্ছে প্রভাবশালী বলে কি তঁাদের যা খুশি তা করার অধিকার জন্মে গেছে? আইনের শাসন কি তঁাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়?

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বলা বাহুল্য, এসব আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। আর আইন ভঙ্গকারী যদি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হন, তাহলে তো আইন প্রয়োগের কোনো প্রশ্নই নেই।

বালুখেকোদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তিনলাখপীর এলাকার কৃষকেরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

আমরা আশা করব, ইউএনও এই বালু ও মাটি তোলা বন্ধে খুব দ্রুত উদ্যোগ নেবেন এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন। প্রভাবশালী বলে কাউকে ছাড় দেওয়া উচিত হবে না।