মানবতার মুক্তির দূত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)

আল্লাহর হাবিব প্রিয় রাসুল আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই ধরায় শুভাগমন করেন আজ থেকে প্রায় ১৪৪৯ বছর আগে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে, সৌদি আরবের মক্কা নগরে। ভোরের সমীরণ নিয়ে তিনি এসেছিলেন স্নিগ্ধ প্রাতঃকালে। সপ্তাহের মধ্যদিবস বরকতময় সোমবারে পদার্পণ করেন এই জগতে। 

রবি মানে বসন্তকাল, আউয়াল অর্থ প্রথম; রবিউল আউয়াল হলো প্রথম বসন্ত বা বসন্তের প্রথম মাস। ঋতুরাজ বসন্ত। ফুলে–পাতায় সুসজ্জিত হয়ে, ফলে–মূলে সুশোভিত হয় প্রাকৃতিক পরিবেশ। পুবালি বাতাসে শান্তির পরশে দোল খায় প্রতিটি অন্তরাত্মা। এমনই এক মোহনীয় প্রতিবেশে জগৎবাসীর জন্য মানবতার মুক্তির মহান বাণী নিয়ে আসেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অবিসংবাদিত মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)। সঙ্গে নিয়ে আসেন শান্তি, সাম্য, ঐক্য, কল্যাণের শুভ সংবাদ। 

অন্ধকার যুগের পশুসুলভ জীবনাচার ও জুলুম, নিপীড়ন–নির্যাতনের সামাজিক অন্যায়–অবিচার ও অত্যাচারের তমসা থেকে মানবতাকে সভ্যতার আলোর দিকে এগিয়ে নিতে; তিনি ভোরের সমীরণপ্রবাহ সঙ্গে নিয়ে, প্রভাত রবির রঙিন আলোয়, সকালের সূর্যের হাসি হয়ে উষার আকাশে উদিত হলেন মুক্তির দূতরূপে। তখন চলছিল আইয়ামে জাহেলিয়াত, মানে অন্ধকার যুগ। অজ্ঞানতা, মূর্খতা, কুসংস্কার ও পাপাচারে নিমজ্জিত ছিল জাজিরাতুল আরব বা আরব উপদ্বীপ। এ সময় জ্ঞানের আলো নিয়ে, মুক্তির বাণী নিয়ে পৃথিবীতে আসেন মানবতার মহান বন্ধু হজরত মুহাম্মদ (সা.)। 

প্রিয় নবীজি (সা.) শত নামে পরিচিত। তিনি মুহাম্মদ, আহমাদ, মুজ্জাম্মিল, মুদ্দাচ্ছির, ইয়াসিন, ত্বহ্, রউফ, রহিম ও রহমাতুল্লিল আলামিন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কোরআন কারিমে ঘোষণা করেন, ‘অবশ্যই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট এক রাসুল এসেছেন। তোমাদিগকে যাহা বিপন্ন করে, তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আপনি বলুন, “আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ বা মাবুদ নাই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তিনি মহা আরশের অধিপতি।”’ (সুরা-৯ তাওবাহ, আয়াত: ১২৮-১২৯)। 

চিরপ্রশংসিত ‘মুহাম্মদ’ তাঁর নাম। মুহাম্মদ নামটি কোরআন কারিমে রয়েছে চারবার। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) একজন রাসুল; তাঁর আগে বহু রাসুল গত হয়েছেন। সুতরাং যদি তিনি ইন্তেকাল করেন অথবা শাহাদতবরণ করেন, তবে তোমরা কি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে? এবং কেউ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে সে কখনো আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না; বরং আল্লাহ শিগগিরই কৃতজ্ঞদিগকে পুরস্কৃত করবেন।’ (সুরা-৩ আল ইমরান, আয়াত: ১৪৪)। ‘মুহাম্মদ (সা.) তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং সর্বশেষ নবী। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (সুরা-৩৩ আহজাব, আয়াত: ৪০)।

বিশ্বের সেরা নাম ‘মুহাম্মদ’। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রিয় নবী (সা.)–এর আলোচনা সমুন্নত করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আর আমি আপনার স্মরণ ও আলোচনা উন্নত করেছি।’ (সুরা-৯৪ ইনশিরাহ, আয়াত: ৪)। 

তিনি আহমাদ, অর্থাৎ সর্বাধিক প্রশংসাকারী। আহমাদ নামটি কোরআনে রয়েছে একবার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যখন ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.) বললেন, “হে বনি ইসরাইল! নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর রাসুল তোমাদের প্রতি প্রেরিত; সত্যায়নকারী—তোমাদের মাঝে তাওরাতের যেটুকু রয়েছে, তার। এবং সুসংবাদদাতা এমন এক রাসুলের, যিনি আমার পরে আগমন করবেন; তাঁর নাম আহমাদ।’” (সুরা-৬১ সফ, আয়াত: ৬)। যিনি প্রশংসা করবেন, তিনি প্রশংসিত হবেন। 

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)। ব্যক্তিজীবনে, সমাজ ও রাষ্ট্রে একমাত্র তাঁর অনুকরণ–অনুসরণই দিতে পারে মুক্তির দিশা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর রাসুলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।’ (সুরা-৩৩ আহজাব, আয়াত: ২১)। তিনি মানবজাতির সর্বোচ্চ পূর্ণতায় অধিষ্ঠিত একমাত্র ব্যক্তি। ‘(হে রাসুল!) নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা-৬৮ কলম, আয়াত: ৪)। 

স্বমহিমায় উজ্জ্বল বিশ্বশান্তির রোল মডেল এই বিশ্বমানবের আগমন দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘ফাতিহা ই ইয়াজদাহম’, ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’ ও ‘সিরাতুন্নবী (সা.)’ নামে। শুধু একটি দিবস নয়; মাসব্যাপী, বছরব্যাপীও পালিত হয় এই মহামানবের স্মরণ ও স্মৃতি। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ প্রাত্যহিক জীবনে অনুকরণ–অনুসরণ করে চলছে তাঁর জীবনাচার ও অনুপম মহান আদর্শ। সব মানুষের হৃদয়ে তিনি জ্যোতির্ময় চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন অনন্তকাল। 

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক