২১ পেরিয়ে প্রথম আলো

নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রথম আলো ২১ বছর পূর্ণ করল। দুই দশকের মধ্যে প্রথম আলো শুধু বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত ও প্রভাবশালী দৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়নি, দেশের সীমা ছাড়িয়ে পৃথিবীর দুই শতাধিক দেশে কোটি পাঠকের ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছে। এটি আমাদের আশান্বিত করে। একই সঙ্গে দায়িত্ববোধের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়। ২১ বছর পূর্তির এই শুভলগ্নে আমাদের অগণিত পাঠকের পাশাপাশি লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, পরিবেশক, এজেন্ট, হকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।

 ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম আলোর যাত্রারম্ভে যেসব চ্যালেঞ্জ সামনে ছিল, সেগুলো এখনো আছে। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন হয়েছে। তারপরও আমরা হতোদ্যম হইনি। শুরু থেকে প্রথম আলো গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সামাজিক সাম্য ও ন্যায়বিচার এবং অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ ও লালন করেছে। আমাদের লক্ষ্য যে বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা, সৎ সাংবাদিকতা—সেই প্রত্যয়ে এখনো আমরা অবিচল আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব।

যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা থাকে, বাংলাদেশ তা থেকে মুক্ত নয়। সরকার সম্প্রতি যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে, তাতে দুর্নীতি তথা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের হতাশাব্যঞ্জক চিত্র উঠে এসেছে। প্রথম আলো সব সময় বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নেতিবাচক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। অন্যদিকে সমাজে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী পর্যায়ে যেসব ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেগুলোর খবরও পাঠকের সামনে তুলে ধরে প্রথম আলো। উদ্যোগী মানুষগুলোকে আরও এগিয়ে নিতেও উৎসাহ জোগায়। আমরা একটি সহিষ্ণু, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়ার পক্ষে আমাদের প্রয়াস অব্যাহত রেখেছি। প্রথম আলো শুরু থেকে দলনিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে বলেই সর্বমহলের পাঠকের সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে। জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। শিক্ষার হার বেড়েছে; স্বাস্থ্য খাতের উন্নতির ফলে গড় আয়ু বেড়েছে। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে চলেছে; প্রথম আলো এই অগ্রযাত্রার সহযোগী। তবে দেশ যখন গণতন্ত্রের সূচকে পিছিয়ে পড়ে, যখন আইনের শাসন বিঘ্নিত হয়; নাগরিকদের মতপ্রকাশ ও বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার খর্বিত হয়; মুক্ত ও স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিকূল আইন–বিধান প্রণয়ন করা হয়, তখন উদ্বেগের কারণ ঘটে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে আমাদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সে জন্য গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা একান্তভাবে প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে স্বাধীন সাংবাদিকতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু সারা বিশ্বেই সাংবাদিকতা এখন বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সাংবাদিকতা আজ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। একদিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারের প্রভাব, অন্যদিকে রাজনৈতিক বিরূপতা সাংবাদিকতা পেশার জন্য এক প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় পরিবেশেও প্রথম আলো দায়িত্বশীল ও সৎ সাংবাদিকতা চর্চার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সহায়ক ভূমিকা পালনে সচেষ্ট রয়েছে। আমরা বাংলাদেশে সুসাংবাদিকতার বিকাশে সচেষ্ট রয়েছি; রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সব ক্ষেত্রে সব ভালো কাজের সঙ্গে প্রথম আলো সব সময় আছে। আমরা চাই, বাংলাদেশ একটি গর্বিত জাতি হিসেবে বিশ্বের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াক। আমরা দেশকে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে গোটা জাতির সম্মিলিত উদ্যোগের সঙ্গে আছি।