জঙ্গিবিরোধী অভিযান

হলি আর্টিজানে হামলার পর দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযানে শীর্ষ পর্যায়ের অনেকের মৃত্যু ও অনেক সন্দেহভাজন আটক হওয়ার পর এটা ধারণা করা হয়েছিল যে এই গোষ্ঠীকে অনেকটাই কোণঠাসা করা গেছে। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে এই গোষ্ঠী বেশ ভালোভাবেই শিকড় গাড়তে পেরেছে। আমরা দেখছি, জঙ্গিদের শক্তি সম্পর্কে যে ধারণা নিয়ে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, সে তুলনায় তাদের শক্তি অনেক বেশি। কাছাকাছি সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি ঘাঁটিতে অভিযানের সময়ে জঙ্গিদের পাল্টা প্রতিরোধের চেষ্টা ও আত্মঘাতী বোমা হামলার পথ বেছে নেওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে যে তারা নিজেদের শক্তি–সামর্থ্য ও অবস্থানের জানান দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ ধরনের আরও কত ঘাঁটি দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে, তা এখন এক বড় প্রশ্ন।

এই পরিস্থিতিতে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অব্যাহত অভিযানের যেমন কোনো বিকল্প নেই, তেমনি তাদের শক্তি–সামর্থ্যকেও হালকাভাবে দেখা যাবে না। আবার শুধু অভিযান চালিয়েও যে দেশের মধ্যে গেড়ে বসা জঙ্গিবাদকে নির্মূল করা যাবে না, সেটাও বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি। জঙ্গি ভাবাদর্শ থেকে ফিরিয়ে আনা বা ডির‍্যাডিকালাইজেশনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সরকার মুখে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানোর কথা বললেও এ ক্ষেত্রে দলমত–নির্বিশেষে মতৈক্য প্রতিষ্ঠায় তেমন আগ্রহী নয়।

এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে যখন সিলেটের জঙ্গি ঘাঁটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘিরে আছে, তখনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে আশ্রয়–প্রশ্রয় দেওয়া নিয়ে সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপ চলছে। সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে যে শুধু অভিযান চালিয়ে এ ধরনের গোষ্ঠীকে কখনো পুরো নির্মূল করা যায় না। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগও জরুরি।