ফরিদপুরের কোহিনুর লাইব্রেরি

দেশ বিভাগের আগে এ দেশে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণপাঠাগারের উদ্যোক্তা প্রধানত হিন্দু জমিদারেরা হলেও কিছু ব্যতিক্রমও ছিল। সেই ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তাদের একজন ছিলেন ফরিদপুরের হাবিল গোপালপুরের বাসিন্দা মজিদ মিয়া। তিনি ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কোহিনুর পাবলিক লাইব্রেরি। কোহিনুর অর্থ পাহাড়ের আলো। মজিদ মিয়া পাহাড়ে নয়, ফরিদপুর শহরেই জ্ঞানের আলো জ্বালাতে গড়ে তুলেছেন এই গণপাঠাগার।

মজিদ মিয়া শুধু কোহিনুর পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেননি, ঘরে ঘরে গিয়ে বইও সংগ্রহ করেছেন। ৮৭ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই পাঠাগার আগে ভালো চললেও এখন আর পাঠকদের মনোযোগ কাড়তে পারছে না। এর অন্যতম কারণ ব্যবস্থাপনা কমিটির উদাসীনতা ও অসহযোগিতা। তিন বছর মেয়াদে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের কথা থাকলেও ১৫ বছর ধরে নির্বাচন হচ্ছে না। তদুপরি পুরোনো কমিটির সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ভূঁইয়া পদত্যাগ করেছেন। অন্যদিকে পাঠাগারের যিনি সভাপতি, তিনি বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকেন। মাঝেমধ্যে ফরিদপুরে আসেন। পাঠাগারের প্রধান ফটকটি সব সময় বন্ধ থাকে। পাঠকদের পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকতে হয়। পাঠাগারে যে সার্বক্ষণিক কর্মচারী আছেন, তিনি আসেন বিকেল পাঁচটায়। তা-ও নিয়মিত নয়। অথচ দিনের বেলায় পাঠাগারটি খোলা থাকলে এলাকার শিক্ষার্থীরা ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে এটি ব্যবহার করতে পারত।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আগে এই গণপাঠাগারে ১০ হাজারের বেশি বই থাকলেও এখন আছে মাত্র ৪ হাজার ২০০। বাকি বইগুলো কোথায় গেল, তা তদন্ত করে দেখা দরকার। ১৫ বছর বয়সী কমিটির সদস্যরা গণপাঠাগারটি পরিচালনার বিষয়ে অনাগ্রহী হলেও এর অধীনে থাকা দোকান ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে অতি উৎসাহী। তাঁরা প্রতিটি রুম ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় ভাড়া নিয়ে অন্যদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন এক থেকে দেড় হাজার টাকায়। এতে ঐতিহ্যবাহী গণপাঠাগারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হচ্ছেন কমিটির সদস্যরা।

তিন লাখ জন–অধ্যুষিত ফরিদপুর শহরে মাত্র তিনটি গণপাঠাগার আছে। সরকারি পরিচালনায় ময়েজউদ্দিন জেলা গণপাঠাগার, জেলা পরিষদের পরিচালনায় শেরেবাংলা গণপাঠাগার এবং বেসরকারি উদ্যোগের কোহিনুর পাবলিক লাইব্রেরি। মুসলিম মিশনের সভাপতি ও সচেতন নাগরিক সমাজের সাবেক সভাপতি বলেছেন, এই গণপাঠাগার সুন্দরভাবে চালানো কঠিন কাজ নয়। পাঠাগারের নিজস্ব আয় থেকেই চলতে পারে। তবে ব্যবস্থাপনা কমিটিকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।

প্রায় ৯০ বছর বয়সী একটি গণপাঠাগার এভাবে ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না। কোহিনুর পাবলিক লাইব্রেরি রক্ষার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও নাগরিক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। একটি বই খোয়া গেলে সেটি আবার যত সহজে কেনা যায়, একটি গণপাঠাগার ধ্বংস হলে সেটি আবার প্রতিষ্ঠা করা তত সহজ নয়।