ওসির 'জনগণের দরবার'

আমাদের দেশে একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা।’ মানে হচ্ছে পুলিশের খপ্পরে যে একবার পড়বে, তার বারোটা বেজে যাবে। পুলিশ মানে এক আতঙ্কের নাম। মানুষের আর পুলিশের ওপর আস্থা নেই। মানুষের কাছে পুলিশের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমেই কমছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, অনিয়ম, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা মানুষের মনে রাষ্ট্রীয় এ বাহিনী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান যে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন, তাতে পুলিশের প্রতি মানুষের এ নেতিবাচক ধারণা অনেকটা দূর হবে। পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়ে পাওয়া যায় না—জনগণের এ ধারণা ভুল প্রমাণ করতে আশিকুর রহমান গত ৩১ অক্টোবর থেকে এলাকাবাসীর অভাব–অভিযোগ শোনার জন্য দিনে থানার বাইরে চেয়ার–টেবিল নিয়ে গাছতলায় বসছেন। গাছে টানিয়েছেন একটি সাইনবোর্ড, যাতে লেখা রয়েছে ‘জনগণের দরবার’। সেখানে বিভিন্ন অভিযোগ জানাতে এবং পরামর্শ নিতে পারছেন ভুক্তভোগীরা।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০০৩ সালে পুলিশের উপপরিদর্শক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন আশিকুর রহমান। ২০১৩ সালে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। কয়েকটি থানা ঘুরে ২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন তিনি। সেখানে তিনি দেখতে পান যে সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশভীতি রয়েছে। অনেকে থানায় ঢুকতে ভয় পান। থানায় এলেও তাঁর কক্ষে প্রবেশ করতে সাহস পান না। থানায় একা আসতে চান না। রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, উকিলকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। মানুষের ভয় কাটানোর জন্যই তিনি থানার বাইরে বসার পদক্ষেপ নেন। এতে মানুষ জানতে পারবে, পুলিশ তাদের কল্যাণেই কাজ করে।

জনগণকে রক্ষা করার ব্রত নিয়ে চাকরিতে যোগ দেন পুলিশ কর্মকর্তারা। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তাঁদের। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অনেক পুলিশ সদস্যই সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না। ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’—এই আপ্তবাক্য যতই ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হোক না কেন, বাস্তবতা এখনো এর বিপরীত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের রক্ষকের স্থলে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায়। এসব সত্ত্বেও পুলিশের অনেক ভালো কাজ করার উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু সেগুলো সংখ্যায় এত নগণ্য যে তা পুলিশের ভাবমূর্তি উদ্ধার করার জন্য যথেষ্ট নয়।

পুলিশের নেতিবাচক ভূমিকা আমরা দেখতে চাই না। আমরা দেখতে চাই, স্বাধীনতার যুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা পালনকারী পুলিশ বাহিনী জনগণের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে নিজেদের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছে। নিজেদের ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব পুলিশেরই। এ ক্ষেত্রে ওসি আশিকুর রহমান হচ্ছেন উজ্জ্বল উদাহরণ। অন্যদের উচিত তাঁকে অনুসরণ করা।