পেঁয়াজের বাজারে কারসাজি

সেপ্টেম্বর মাসে ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় এবং তা অব্যাহত আছে। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মাসখানেকের মধ্যে সংকট দূর হবে; দামও কমে যাবে। কিন্তু দেড় মাস ধরে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। একটি পত্রিকা শিরোনাম করেছে, ‘পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে হালি হিসেবে।’

পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে যে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে, সে কথা স্বীকার করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও। তিনি বলেছেন, পেঁয়াজ নিয়ে এবার শিক্ষা হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেবেন। শিক্ষা নেওয়া বলতে বাণিজ্যমন্ত্রী পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে অন্য দেশের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল না হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা বলেছেন, কীভাবে বাংলাদেশ পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বনির্ভর হতে পারে। পেঁয়াজ কেন, খাদ্যে স্বনির্ভর হতে হলে প্রতিটি ভোগ্যপণ্য চাহিদামাফিক উৎপাদন করতে হবে আমাদের। কৃষিতে আমাদের সাফল্যের প্রধান উৎস ধান। ১৭ কোটি মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ এখন চাল রপ্তানিরও চিন্তা করছে। এটি আনন্দের কথা।

কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না যে রবিশস্য, বিশেষ করে ডাল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ভোজ্যতেলের বীজ ইত্যাদি উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টনের মতো। দেশে উৎপাদন হয় ১২–১৩ লাখ টন; বাকি ১০–১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। পরিবহনের সুবিধার জন্য ভারত থেকেই বেশির ভাগ পেঁয়াজ আমদানি করা হতো। সে ক্ষেত্রে দেশটি আকস্মিক রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশকে বিপদেই পড়তে হয়। ভারতের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, বন্যায় সেখানে পেঁয়াজের উৎপাদন কমেছে। এ কারণে তারা রপ্তানি করতে পারছে না। কিন্তু এভাবে হঠাৎ রপ্তানি বন্ধ না করে আগাম জানিয়ে দিলে বাংলাদেশ বিকল্প ব্যবস্থা করে নিতে পারত। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চাল রপ্তানির ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছিল।

চাহিদামাফিক দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন করা সময়সাপেক্ষ। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেছেন। এ জন্য তিনি ধন্যবাদ পেতে পারেন। কিন্তু এ মুহূর্তে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিয়ানমার ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ না এলেও মিয়ানমারের পেঁয়াজ এসে পৌঁছেছে। সুযোগ বুঝে মিয়ানমারও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার যে হারে দাম বাড়িয়েছে, আমদানিকারকেরা বাড়িয়েছেন কয়েক গুণ বেশি। তাঁরা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। অভিযোগ আছে, আমদানিকারকেরা পেঁয়াজ আড়তে সরবরাহ না করে মজুত করে রেখেছেন। গত মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চট্টগ্রাম নগরীর স্টেশন রোডের নূপুর মার্কেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেএস ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিনহাজ উদ্দিন এবং এ হোসাইন ব্রাদার্সের মালিক আবুল হোসেনকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। আরও ডজনখানেক ব্যবসায়ী কঠোর নজরদারিতে আছেন। তাঁদের কাজ হলো মানুষের দুর্দশাকে পুঁজি করে ফাউ কামিয়ে নেওয়া। কথায় বলে, ‘চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি।’

মঙ্গলবার চট্টগ্রামে প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের মধ্যকার বৈঠকে আড়তদারেরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০–৮৫ টাকার মধ্যে রাখার কথা বলেছেন। সে ক্ষেত্রে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার নিচে চলে আসার কথা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, আগামী রোববার নাগাদ পেঁয়াজের দাম কমবে। এখন দেখা যাক তাঁদের প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হয় কি না?